নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে ইন্টার্নী ডাক্তারদের হাতে মুক্তিযোদ্ধাসহ পরিবার লাঞ্চিত হওয়ার প্রতিবাদে রাজশাহী জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মানববন্ধন করেছেন । শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী (৭৫) । চিকিৎসা করাতে রামেক হাসপাতালে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে আসেন । চিকিৎসা না পেয়ে স্ত্রী মৃত প্রায় । বারংবার চেয়ে চিকিৎসা না পেয়ে উলটো মুক্তিযোদ্ধার ছেলে রাকিবুল ও তার স্ত্রীকে উচ্চবাক্য কথা বলেন ইন্টার্নী ডাক্তাররা । কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে এমন প্রশ্ন দ্বিতীয়রাব করায় তাকে মারধর শুরু করেন ইন্টার্নী ডাক্তাররা । শুধু রাকিবুল ও তার স্ত্রীকে মারধর করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা । মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাককেও মারধর করে ঘরে বন্দি করে সেখানেও ছেলে ও ছেলে বৌসহ মুক্তিযোদ্ধাকে আবারও মারধর করেন ১৫/২০ জন ইন্টার্নী ডাক্তার । পরে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে পুলিশ দেন ইন্টার্নী ডাক্তাররা ।
মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাজশাহী মহানগরের সাবেক কমান্ডার ডাঃ আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা লিডার শফিকুর রহমান রাজা, রুহুল আমিন প্রামাণিক, আলতাফ হোসেন, নাজিমউদ্দিন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান প্রমুখ। এছাড়া মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক আসলামউদ্দৌলা।
মানববন্ধনে বক্তারা ঘটনার তদন্তে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন, ঘটনায় দায়ী ডাক্তারদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন ও হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানান। মানববন্ধনে আগামীকাল রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী (৭৫)। গত বুধবার স্ত্রী পারুল বেগমকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সঙ্গে তার ছেলে ও ছেলের বৌ ও ছিলেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে যান। এডমিশন স্লিপে লেখা হয়েছে স্ট্রোক। পরে পারুল বেগমকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে। পারুল বেগমের ছেলে রাকিবুল ডাক্তার-নার্সদের কাছে গিয়ে তার মাকে একটু দেখার জন্য হাতজোড় করে অনুরোধ করেন। কিন্তু কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক তাতে কর্ণপাত করেননি। এ সময় রাকিবুল আরেক শিক্ষানবিস ডাক্তারের কাছে যান। তারাও রোগীর কাছে আসেননি।
মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলী জানান,তার কান্না জড়িত আকৃতিতে তারা বিরক্ত হয়। অল্প বয়সী দু’জন ই-ডাক্তার ছুটে এসে ছেলে রাকিবুলকে মারধর শুরু করে। এ সময় দু’জন স্বাস্থ্যকর্মীও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে আরও ১৫-২০ জন ইন্টার্ন ডাক্তার এসে ছেলে রাকিবুলকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। ছেলেকে রক্ষায় তিনি ও তার বৌমা এগিয়ে গেলে ওই ডাক্তাররা তার ওপরও হামলা করে।
এ সময় তাদের আমি বলি, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। নিজের পরিচয় দেয়ার পরও কয়েকজন অল্প বয়সী ডাক্তার মিলে আমার বুকে-মুখে-পিঠে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি আর লাথি মারতে শুরু করেন। আমি মেঝেতে পড়ে গেলে আমাকে টেনেহিঁচড়ে মারতে মারতে একটা ঘরে নিয়ে আটকায়।
তখনও আমার ছেলে ও ছেলের বউকে তারা মারধর করছিল। কিছুক্ষণ পর আমাকে যে ঘরে আটকে রেখেছিল সেখানে আমার ছেলেকেও নিয়ে যায়। এরপর আরও কয়েকজন নেতা গোছের ডাক্তার এসে ঘর খুলে আমার ছেলের সামনে আমাকে আবারও লাথি মারতে শুরু করে। আমার দাড়ি ধরে টানতে শুরু করে। মুখে ঘুষি মারতে থাকে। আমি তাদের পা ধরে মাফ চাইলেও তারা শুনেনি।
আমি এখন বুকে খুব ব্যথা অনুভব করছি। আমার সারা শরীরে ব্যথা। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। স্ত্রীকে বাঁচাতে না পারলেও একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এমন অমানবিক নির্যাতনের কথা কল্পনায়ও ভাবিনি।’ আমরা এখন কার কাছে অভিযোগ দেব। আমরা কোন দেশে বসবাস করছি।’এজন্য কি জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি।
ঘটনার পর থেকে, মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের ওপর এমন ভয়ংকর নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ।
রামেকে এক শ্রেণির শিক্ষানবিস ডাক্তারের দৌরাত্ম্য খুবই ভয়ংকর। তারা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে এমন আচরণই করে আসছেন কয়েক বছর ধরে। এ ছাড়া ৫ বছর ধরে হাসপাতালটিতে মিডিয়া কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ রেখেছে কতৃপক্ষ।একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাথি-কিল-ঘুষি মেরে আহত করা ই- ডাক্তারদের দ্রুত তদন্ত সর্বাপেক্ষা আইনের আওতায় না আনলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবার কথা ভাবছে রাজশাহীর মানুষ।