রাজশাহীতে বন্ধ চালকল থেকে চাল নেওয়ার নামে হরিলুট ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রামের আলী রাইস মিলটি বন্ধ হয়েছে ৫ বছর আগে। মিলের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে অটোরিকশা গ্যারেজ। কিন্তু এ মিলের সঙ্গেই চলতি বছর চাল সংগ্রহের চুক্তি করেছে খাদ্য বিভাগ। মিলটি ৫ বছর আগে বন্ধ থাকলেও খাদ্য বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে মিলটিতে পাক্ষিক ৪৫ টন করে চাল উৎপাদন হয়। সেই সুবাদে চলতি আমন মৌসুমে মিলটিকে সাড়ে ৫ টন চাল সরবরাহের বরাত দিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

শুধু আলী রাইস মিল নয়, বছর চারেক আগে বন্ধ হওয়া গোদাগাড়ীর চাপালের কামাল অটোরাইস মিলের সঙ্গেও খাদ্য বিভাগ চুক্তি করেছে। খাদ্য বিভাগের চলতি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ মিলটিতে পাক্ষিক চাল উৎপাদন হয় ৩ হাজার ৪৯৩ টন। খাদ্য বিভাগ এবারে এ মিলকে ৫৩৯ টন চাল সরবরাহের বরাত দিয়েছে।

জেলার তানোর উপজেলায় সব মিলিয়ে ১০টি চালকল চালু রয়েছে। কিন্তু ১৯টি বন্ধ চালকলের নামে খাদ্য কর্মকর্তাকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে উৎকোচ দিয়ে বরাদ্দপত্র নিয়েছে একটি সিন্ডিকেট। তারা পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রাকে করে চাল এনে গুদামে দিচ্ছে। আবার ১০ টাকা কেজির চালসহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের চাল গুদামে রেখে দিয়ে সেগুলোকে নতুন চাল বলে সংগ্রহ দেখানো হচ্ছে।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৪ হাজার ২৭৬ টন চাল কেনার জন্য ২৩৮টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। মিলের উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী চালকল মালিকদের চাল সরবরাহের বরাত দেয়া হয়েছে। ১ ডিসেম্বর থেকে জেলার বিভিন্ন গুদামে চাল কেনা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা কেজি দরে। ক্রয় কার্যক্রম চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন- অধিদফতরের উদ্যোগে খাদ্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা একাধিক টিম চালকলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা সরেজমিন দেখে তারপর চুক্তি করা হয়েছে বা চাল সবরাহের বরাত দেয়া হয়েছে চালকল মালিকদের। কোনো বন্ধ চালকল থেকে চাল কেনার সুযোগ নেই। কিন্তু এ দাবির সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার যেসব চালকলের সঙ্গে খাদ্য বিভাগ চাল কেনার চুক্তি করেছে, সেগুলোর অর্ধেকই কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, চালকল বন্ধ থাকলে তাদের নামে গুদামে চাল বিক্রি করছেন কারা?

১৫ জানুয়ারি জেলার তানোর উপজেলার চাঁনপুর এলাকার মিয়া রাইস মিলে গিয়ে দেখা যায় মিলটি বন্ধ রয়েছে ৮ বছর ধরে। মিলের কোনো যন্ত্রপাতি নেই। মিল এলাকায় গজিয়েছে বুনো ঘাস। এ মিলে পাক্ষিক ৩৮ টন চাল উৎপাদন সক্ষমতা দেখিয়ে মিলটিকে এবার ২০ টন চাল সরবরাহের অর্ডার দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। একইভাবে পবা, মোহনপুর ও পুঠিয়ার অধিকাংশ বন্ধ চালকল থেকে চাল সরবরাহের রাত দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। ১৫ জানুয়ারি পাবনা থেকে আসা চালভর্তি ট্রাক (ট্রাক-ট-১১-১০৫৩) পুঠিয়া খাদ্য গুদামে চাল বিক্রি করতে আসলে খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হীরা বাচ্চু ট্রাকটি আটক করেন। ওসিএলএসডি জালাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগসাজশ করে একটি দালাল সিন্ডিকেট এ চাল একটি বন্ধ চালকলের নামে সরবরাহ করতে চেয়েছিল। পাবনা থেকে ট্রাকভর্তি চাল কেন পুঠিয়া খাদ্য গুদামে আনা হয়েছিল- এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেনি ওসিএলএসডি। তিনি বলেন, ট্রাকটি ফেরত পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, চালু চালকল থেকে চাল কেনার জন্য সরকারি নির্দেশ থাকলেও রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা, গুদাম কর্মকর্তা, গুদাম পরিদর্শকরা বন্ধ চালকলের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে নিজেরাই বাইরে থেকে কিনে অতি নিম্নমানের চাল সরবরাহ দেখাচ্ছেন। ১০ টাকা কেজির চালসহ বিভিন্ন সরকারি উপ-প্রকল্পের চালই আবার নতুন চাল হয়ে গুদামে ঢুকছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দুদকের কয়েক দফা অভিযানের পরও রাজশাহীতে চাল কেনায় দুর্নীতি থামেনি।

চাল কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে ২ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ও বন্ধ চালকলের বিপরীতে দেয়া চাল সরবরাহের বরাদ্দ পত্রগুলো জব্দ করে নিয়ে গেছে। এরপর আরও দু’দফা দুদক অভিযান চালিয়েছে খাদ্য গুদামে। এ বিষয়ে দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলার সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, ধান-চাল কেনায় রাজশাহীতে দুর্নীতির অভিযোগগুলো তারা অনুসন্ধান করছেন। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

রাজশাহীতে চালকেনায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, সরকারি গুদামে চাল কেনায় কোনো অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে আমার জানা নেই। বন্ধ চালকল থেকে চাল কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ তার কাছে এমন অভিযোগ করেনি।

Next Post

গাইবান্ধায় বউভাতের দিনে বরের লাশ পেল গাছে ।

শনি জানু. ২৫ , ২০২০
গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বউভাতের দিন গাছ থেকে বরের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম মাহফুজার রহমান (২২)। শুক্রবার বিকালে সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের বেলতৈল গ্রাম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত মাহফুজার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের বেলতৈল গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। স্বজনরা জানান, মাহফুজার রহমানের সঙ্গে […]

এই রকম আরও খবর

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links