নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে গ্লোবাল গেইন গ্রুপের সিইও সাইফুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
আজ রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে সাড়ে ১০টার দিকে সাইফুল ইসলামকে নগরীর শিরোইল বিন্দু হোটেল ও রেস্টুরেন্টের দুই তলায় গ্রাহকরা তাকে আটক করেন। পরে তাকে নগরীর শিরোইল ফাঁড়িতে নিয়ে আসে পুলিশ। ফাঁড়ি পুলিশ তাকে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যায়।
‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’ নামের এই প্রতিষ্ঠানের রাজশাহী অফিস ছিল নগরীর উপশহর নূর মসজিদ এলাকায়। তবে মাত্র দুই মাস অফিস চলার পরে বন্ধ করে দেয় গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রটি। এর আগে রাজধানীর বাড্ডায় গ্লোবাল গেইন গ্রুপের কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম, সিইও মো. সাইফুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আলতাব, জাকারিয়া, মারুফ, হিসাব রক্ষক মেহেদী ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র্যাব। এর পরে তাদের অন্য অফিসের সাথে রাজশাহী অফিসও বন্ধ হয়ে যায়।
‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র কয়েকজন গ্রাহক জানান, ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’ করোনার মধ্যে মার্কেটে আসে। এর পরে তাদের গ্রাহকদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে অধিক মুনফা দেওয়ার নামে। ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপে ৫০ হাজার টাকা রাখলে প্রতিদিন ২০০ করে টাকা পাওয়া যাবে। এছাড়া ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপের বিভিন্ন পণ্য আছে। যেগুলো গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হয়। দাম হিসেবে লাভের টাকা থেকে কেটে নেওয়ার কথা ছিল। তবে রাজশাহীতে অল্প কিছুদিন নিয়মিত থাকার পরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
রাজশাহী নগরীর মোন্নাফের মোড় এলাকার ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র গ্রাহক মো. সিরাজ জানান, ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র রাজশাহীতে অফিস ছিল। তবে এখন বন্ধ। আমার ধারনা- রাজশাহীতে তাদের গ্রাহক প্রায় ১৮০ জন। তাদের থেকে বিভিন্ন সময় নিয়েছে ১ কোটি টাকার বেশি।’
আরেক ভুক্তভোগি ফারুক হোসেন। তিনি দিয়েছেন ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময়ে নিজের ও আত্মীয়ের টাকা দিয়েছেন এই গ্রাহক। করোনার সময়ে তাকে বোঝানো হয়েছিল টাকা টাকাই থাকবে মাঝক্ষণে মুনাফা পাবে। এমন প্রলোভনে ফারুক নিজের মেজভাই মামুন হোসেন ও শ্বাশুরীর টাকা দেন এই প্রতারকদের।
ফারুক জানান, ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র প্রতিনিধিরা তাকে বলে ছিল ৫০ হাজার টাকা রাখলে প্রতিদিন তিনি ২০০ টাকা পাবে। এই ২০০ টাকার মধ্যে ২০ টাকা কেটে রাখা হবে- নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস (সাবান, চাল, ডাল, কাপড় ইত্যাদি) কেনা-কাটা বাবদ। তবে শুধু টাকার ম্যাসেজ আসে। কিন্তু টাকা তোলা যায় না।’
তিনি আরো জানান, ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র একটি আইডি ছিল। যে আইডিতে আমাদের টাকা আসতো। কিন্তু আইডির নিয়ন্ত্রণ ছিল ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র হাতে। তারা চাইলে টাকা তোলা যেত, না চাইলে টাকা তোলা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকবার যোগাযোগ করে বেশ কয়েক দফায় ১২ হাজার টাকা তুলেছি।’
গ্রাহকরা বলছেন, শুধু ফারুক, সিরাজ, আরিফুল নয় এমন শত শত গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছে ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র কাছে। অনেকেই হারিয়েছেন শেষ সম্বলটুকুও। তাদের দাবি- টাকাগুলো ফিরে পাওয়ার।
বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিবারণ চন্দ্রবর্মনকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।