নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে ছিনতাই হওয়া স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারের পাশাপাশি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৫ জনের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে পুলিশ। অন্যান্য আসামীদের আটক করতে অভিযান চলমান আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছিনতাইয়ের ঘটনায় ঐদিন বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন স্বর্ণের বারের মালিক দ্বীজেন ধর। মামলা হওয়ার পর বোয়ালিয়া থানার এস আই মতিন স্বর্ণের বার উদ্ধার নামে। বোয়ালিয়া থানার এসি ও ওসির দিক নির্দেশনায় এই স্বর্ণের বার উদ্ধার করেন এস আই মতিন।
ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, বড় ভাই বাদী দ্বীজেন ধর (৫০) এর ১৭ টি স্বর্ণের বার আত্নস্বাত করার লক্ষে ছোট ভাই জিতেন ধর (৪৮) ছিনতাইয়ের নাটক সাজায়। নাটক সাজালেও পুলিশের অনুসন্ধানে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসে। পুলিশ দীর্ঘ দুই রাত তিন দিন একটা অনুসন্ধানে ১৭ টি বারের মধ্যে ১৬টি বার উদ্ধারসহ একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। আটক ব্যক্তির নাম জিতেন ধর (৪৮)। তার বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার জামনগর গ্রামে। অন্য আরেকটি স্বর্ণের বার সে বিক্রি করেছে বলেও জানান আসামী জিতেন ধর।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত ২১ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকায় এই ছিনতাই নাটক সাজানো হয়েছিল। এ নিয়ে স্বর্ণের মালিক দ্বিজেন ধর নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এরপর শুক্রবার বোয়ালিয়া থানা পুলিশ জিতেন ধরকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরএমপির পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, ছিনতাইয়ের নাটকটি সাজিয়েছিলেন জিতেন। তার পরিকল্পনা মোতাবেক মিজানুর রহমান মিজান ও মৃদুল নামে দুই ব্যক্তি পুঠিয়া থেকেই বাসের পেছনে পেছনে মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তারা ব্যাগ ছিনতাইয়ের জন্য শহরে অন্য তিনজনকে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রস্তুত রাখেন। জিতেন ও দ্বিজেন বাস থেকে নামলেই সে তথ্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেন মিজান ও মৃদুল। এরপরই ব্যাগ কেড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আসল স্বর্ণগুলো জিতেনের বাড়িতেই ছিল। সেখান থেকে একটি বার জিতেন বিক্রি করে দেন। তাকে গ্রেপ্তারের সময় বাড়ি থেকে বাকি ১৬টি বার উদ্ধার করেছে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ‘ক্লু-লেস’ ঘটনাটির রহস্য উদঘাট করেছে। এ ঘটনায় শুধু জিতেনকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এখন তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আরএমপির মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, গ্রেপ্তার জিতেনের বড় ভাই দ্বিজেন ধর (৫০) ফেনীতে থাকেন। ২০ ডিসেম্বর তিনি ফেনারী দুটি জুয়েলার্স থেকে ১৭টি স্বর্ণের বার নিয়ে আসেন। সেদিন ভোরে তিনি রাজশাহীর পুঠিয়ায় ভাই জিতেনের বাড়ি আসেন। তিনি ভাই জিতেনকে বারগুলো রাখতে দেন। প্রতিটি বারের ওজন ১০ ভরি। মোট ১৭ বারের মূল্য প্রায় এক কোটি ১২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। জিতেন একজন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। তিনি এই স্বর্ণের বারগুলো আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তিনি বারের পরিবর্তে তিনটি সীসার রড কাগজে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে স্বর্ণের বারের ব্যাগে রেখে দেন। আর আসল বারগুলো নিজের বাড়িতেই রেখে দেন।
পরেদিন ২১ ডিসেম্বর দ্বিজেন তার ভাই জিতেনকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী শহরে জুয়েলার্সের দোকানে স্বর্ণের বার বিক্রি করতে আসেন। ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে জিতেন আগে থেকেই ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে আসেন। জিতেন ও দ্বিজেন নগরীর শিরোইল এলাকায় পৌঁছামাত্র হঠাৎ দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে চারজন ব্যক্তি এসে নিজেদের ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দেন। তাদের কাছে থাকা হ্যান্ডকাপ দেখান। তারা জিতেনের কাছে থাকা ব্যাগটি জোর করে কেড়ে নেয়। মানিব্যাগ এবং দুটি মুঠোফোনও কেড়ে নেয়া হয়। এরপর তারা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান।