নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফের দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই শুরু এ বিক্ষোভ। এসময় কর্মচারীরা নয় মাসের বকেয়া বেতনের দাবি জানায়। পরে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে।
বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, বর্তমানের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষ বকেয়া থাকা কয়ক মাসের বেতন দেবেন তারা বলে জানিয়েছেন।
এর ফলে হুমকির মূখে পড়েছে নগরীর দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে পরিচিত নগর মাতৃসদন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি অংশের চিকিৎসাসেবা। বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মচারীরা আন্দোলনে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে এসব চিকিৎসাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যসেবা। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদনগুলো। তিনটি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) এসব কেন্দ্র পরিচালনা করে। এর মধ্যে নগরীর ২১ থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড পরিচালিত হয় পিএসটিসির দ্বারা। নগরীর বাকি ওয়ার্ডগুলো পরিচালনা করে রিক ও তিলোত্তমা নামের দুই এনজিও। পিএসটিসি নগরীতে ৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও একটি মাতৃসদন পরিচালনা করে।
আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেকভাল করে। এই প্রকল্পে সরকারের ৩০ শতাংশ এবং বাকি ৭০ শতাংশ অর্থায়ন করে এডিবি ও সিডা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে। পরবর্তী ফেইজে যাবে এ বছরের ১ জুলাই। এখনো রিকুইজেশন শেষ হয়নি। ইতোমধ্যেই ৯ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। অবশ্য কোনো কোনো এনজিওকে ৩ মাসের বেতন ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু পিএসটিসির কর্মীদের ৯ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে বলে সূত্রটি জানায়। বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। সূত্র মতে কর্মীরা এমনিতেই নিম্ন মজুরিতে কাজ করেন। তারা জানতে পেরেছেন তাদের বেতন কমিয়ে দিয়ে নতুন ফেইজের কাজ শুরু হবে।
অপর একটি সূত্র জানায়, নগরীর ২১-৩০ ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রায় আড়াই লক্ষ লোক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকে। এরা সবাই দরিদশ্র্রেণির মানুষ। রেডকার্ডধারী দরিদ্র নারী সেবাগ্রহিতা আছে ১২ হাজার। এদের সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। বাকিদের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইপিআই কেন্দ্র। যেখান থেকে প্রতিদিন ৬০০ শিশু চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে থাকে। এখানে ৯ হাজার টাকায় সিজারিয়ান অপারেশন এবং মাত্র ৯০০ টাকায় নরমাল ডেলিভারি করা যায়। ইপিআই কার্যক্রমে রাজশাহী সিটি করপোরেশন সব সময় দেশের মধ্যে সেরা। কিন্তু সেবা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার ফলে ইপিআই কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।
বেতনের দাবিতে পিএসটিসির কর্মীরা গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নগরীর পাঁচটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে টিকাপাড়ায় অবস্থিত নগর মাতৃসদনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘ নয় মাস ধরে তারা বেতনভাতা পাননি। উপরন্তু আগামি মাস থেকে নতুন প্রকল্প শুরু হলে তাদের বেতন অর্ধেকে নেমে আসবে। এইসব নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধসহ জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতনভাতা নির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারজানা রহমান জানান, শিগগিরই তিন মাসের বেতন ভাতা প্রদানের প্রস্তুতি চলছে। তবে তিনি মনে করেন, বিষয়টির জরুরি ভিত্তিতে সমাধান হওয়া উচিত। কারণ বেতন না পেয়ে কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
