আমাকে একজন প্রশ্ন করেছে, এক্সিডেন্ট কি অটো ভ্যান এরা করে, নাকি বড় বড় গাড়ি গুলো? মানুষ চাপা দেয়,খাদে গিয়ে পড়ে ঐ বড় গাড়ী গুলো। ওদের না সামলিয়ে গরীবের পেটে লাথি মারা কেন? আমরা তো মানুষকে বহন করে দূর্ভোগ কমায়।বড় গাড়িকে টক্কর তো দেই না।”
বিষয়টা নিয়ে ভাবতে গিয়ে সত্যতা পেলাম। আমি প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কর্মস্থলে যাই প্রতিদিন। এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় গাড়ি পাই না,অনেক সময় সিট পাই না।অনেক সময় গাড়িতে নিতে চায় না।পূজা পার্বণের ছুটি,দুই ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তো এমন আরো মানহানিকর অবস্থায় পড়তে হয়। নিয়মিত যাত্রী হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় টিকিট না দিয়ে পরে দেবে বলে বসিয়ে রাখে,যখন টিকিট দেয় ততক্ষণ তাদের সিট বুক হয়ে যায়। তখন দারুণ প্রেস্টিজ ইগোতে লাগে। তখনই মন আর চোখ খুঁজে সিএনজি,অটো, অটো ভ্যান, টেম্পু।
অবহেলা আর অপেক্ষার মত কষ্টকর অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে এই তিন চাকা, চার চাকার গাড়ি গুলো পথ যাত্রীদের নিয়ে ছুটে চলে প্রত্যাশিত গন্তব্যে।একই ভাড়া বা কিছু বেশি। তাতে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা আরামে সিটে বসে বাতাস খেতে খেতে গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
কিন্ত বড় গাড়ী, ট্রাক, টাক্টর গুলো নির্মম গতিতে এসে প্রাণ নিয়ে যায়।
একটা স্বপ্নই শুধু না,পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্রেরও স্বপ্ন সম্পদ নষ্ট হয়ে যায় ঐ বড় বড় গাড়ির সন্ত্রাসী তাণ্ডবে।
রাজপথটাকে বাপের রাস্তা মনে করে রাক্ষসের ভূমিকায় দলিত মথিত করে চলে নিয়ম- নীতির তোয়াক্কা না করে ওরা।
মানুষের যাত্রী সেবার জন্য বাস,ট্রাক-গাড়ি। সময় বাঁচানোর জন্য নয়। জান-মালের সুরক্ষা দিয়েই মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু তা না করে সময় বাঁচানোর জন্য,আগে টিপ ধরার জন্য,ড্রাইভিংয়ের পারদর্শীতা দেখানোর জন্য,ওভার টেকিং করে গাড়ী চালিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে।কারো প্রাণ থাক, আর যাক,পথচারী মানুষের জীবন তাদের কাছে নগণ্য। রাজপথের এই প্রাণঘাতি গাড়ি গুলোকে মানবীয় করে তুলতে হবে আগে।নয়তো ফাঁকা রাস্তায় ওরা আরো দানবীয় আকার ধারণ করে।
কাজ করতে হবে ওদের কে নিয়ে।
রাস্তা বাড়াতে হবে। গাড়ি চলাচল আর পার্কিংএর জায়গা সুনির্দিষ্ট করে দিলে, ছাত্রদের দেখানো নিরাপদ সড়কের আয়োজন কে গ্রহণ করে সে মোতাবেক চললে,চালালে তিন চাকা,চার চাকার গাড়ি গুলো রাস্তা থেকে তুলে দেওয়ার দরকার হতো না।
ফিটনেস বিহীন গাড়ি ও ড্রাইভার দুজনকেই রাস্তা থেকে আউট করে দিতে হবে। অসচেতন ও আইন অমান্যকারী পথচারী ও গাড়ির চালকদের উন্নত দেশগুলোর মত তাৎক্ষণিক শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা করলে নিরাপদ সড়ক আশা করা যেতে পারে। দূর পাল্লার বড় গাড়ি দূর পথের জন্য,কিন্তু স্বল্পপথের যাত্রীদের কল্যাণের কথাও ভাবতে হবে।ভাবতে হবে ছাত্র ও অফিস গামী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কথা, যাদের পদে পদে বাস গাড়ির লোকেরা অপদস্ত করে থাকে। স্থানীয় ও ছোট গাড়ি গুলো এ ক্ষেত্রে ভীষণ উপকারী।
গাড়ি চলছে পথে। সময় মত স্টপেজে আসছে।কিন্ত গত দুদিন ধরে কোনো বাস গাড়ি থামছে না,যাত্রীও তেমন নিচ্ছে না। আমাকে তো অফিস যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে জীবন বাজী রেখে ঐ অটো গাড়িতে করে যাতায়াত করছি। বাজার ঘাট,কম ভারি জিনিস পাতিও সে সবে নিয়ে আসছি। তাই বলবো,তিন, চার চাকার গাড়ি উঠিয়ে দিলে সমস্যা ও জনদূর্ভোগ আরো বাড়বে বলে আমি মনে করি।
আর মৃত্যুভয় যে কমবে, তাও আমি মনে করি না।
লেখাটি Syed Anwar Sadat এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া।