আভা ডেস্কঃ রাজধানীর রামপুরায় মহানগর প্রজেক্টে একটি বস্তিতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
রোববার দিবাগত রাত ১টা ২৮ মিনিটের দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কন্ট্রোল রুমের অপারেটর মো. জুয়েল যুগান্তরকে জানান, রাত ১টা ২৮ মিনিটের দিকে রামপুরা মহানগর প্রজেক্টের বস্তিতে আগুন লাগে। বস্তিতে থাকা দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
তবে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের কোনো তথ্য দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় জানা যায়, ঘড়িতে সময় তখন সন্ধ্যা পৌনে ৬টা। কারখানায় কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। এ সময় হঠাৎ আগুন লাগে কারাখানাটি। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যায় পুরো কারখানায়। পৌনে ২ ঘণ্টা সময় ধরে জ্বলা ভয়াবহ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান কারখানাটির ১০ জন শ্রমিক।
গাজীপুর সদর উপজেলায় কেশরিতা এলাকায় রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় রওজা হাইটেকর লাক্সারি ফ্যান কারখানায় এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চারজনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মারতা এলাকার রাশেদ (২৫), মো. শামীম (২৬), কারখানা এলাকার উত্তম (২৫) ও রংপুরের মো. ফরিদুল ইসলাম (১৮)। আহতদের মধ্যে দুইজনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- কেশরিতা এলাকার আনোয়ার হোসেন ও পার্শ্ববর্তী জামুনা গ্রামের মো. হাসান।
জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তাদের স্টেশনের চারটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা পুরোপুরি আগুন নেভান। পরে তৃতীয় তলা থেকে ১০ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেন তারা।
তিনি জানান, প্রথমে তৃতীয় তলায় একটি দরজার কাছে আগুনের সূত্রপাত হলে শ্রমিকরা আত্মরক্ষায় ভেতরের দিকে চলে যান। পরে মুহূর্তে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে শ্রমিকরা আটকা পড়েন। কয়েকজন আহত হলেও তাদের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ওইখানে তখন ১৯জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। নিহতদের মধ্যে চারজন ও আহত দুইজনের নাম জানা গেছে।
কারখানাটির মালিকের নাম মো. জাহিদ হাসান ঢালী বলে জানা গেছে। প্রাথমিক আলামত দেখে মনে হচ্ছে ১০ জনই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
শহীদ তাউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানান, তার হাসপাতালে ওই ঘটনায় দ্বগ্ধ স্থানীয় কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২০) ও জামুনা এলাকার আবদুল মোতালেবের ছেলে মো. হাসান (১৯) ভর্তি আছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৬ সালে কারখানাটি ওই এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসার মধ্যে গড়ে উঠে। দুতলা ভবনের ছাদে একটি টিনের ঘর রয়েছে। ওই ঘরে কারখানার আর্মেচার সেকশন। সন্ধ্যার পর ওই সেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
ওই সেকশনের শ্রমিক ফয়সাল জানান, পুরো কারখানায় ৮০ জনের মতো শ্রমিক ছিল। আর কারখানার যে সেকশনে আগুন লাগে সেখানে ১৯জন শ্রমিক কাজ করছিলেন।
লাক্সারি ফ্যান কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হাসান ঢালী জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক নিহত সব শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এ ছাড়া নিহত শ্রমিকরা কারখানা থেকে যে বেতন ভাতা ও ঈদ বোনাস পেতেন তাদের পোষ্যদের আজীবন সে সব সুবিধাদি প্রদান করা হবে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, কারখানাটিতে অব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। যার কারণে এতগুলো শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
তদন্ত কমিটি: ঘটনার পর পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম ও গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
জেলা প্রশাসক যুগান্তরকে জানান, ঘটনা তদন্তে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহিনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের লাশ দাফন ও পরিবহনের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে।
যুগান্তর