আভা ডেস্কঃ মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলে যখন উত্তাল ভারত তখন এক মুসলিম যুবককে বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন দেশটির হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে স্বর্ণপদক জয়ী ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরির প্রতিবাদের সমালোচনা করে একটি ফেসবুক পোস্ট দেন বাবুল সুপ্রিয়।
ওই পোস্টে বাবুল সুপ্রিয়া ও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলিপ ঘোষের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুস্তাফিউর রহমান নামে এক ভারতীয় মুসলিম।
প্রতিউত্তরে ওই মুসলিম যুবককে বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি দেন এই বিজেপি মন্ত্রী।
সেই হুমকির কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে। বাবুল সুপ্রিয় ও মুস্তাফিউরের মন্তব্যের স্ক্রিনশট শেয়ার করে মন্ত্রীকে তুলোধোনা করেছেন অনেকে।
একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কি করে কারও ধর্মের জন্য তাকে বাংলাদেশি বলে কটাক্ষ করেন জানিয়ে হতবাক হয়েছেন কেউ কেউ।
মন্ত্রীর এমন মন্তব্য কখনই মেনে নেয়ার নয় বলে আপত্তি জানিয়েছেন সচেতনরা।
সচেতনরা বলছেন, ধর্মীয় কারণে কারও নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন? এমন মন্তব্য কোনো দেশের মন্ত্রীর জন্য মোটেই শোভনীয় নয়।
বাবুল সুপ্রিয় নিজেই ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগও করেন কেউ কেউ।
বাবুল সুপ্রিয়র ওপর এসব অভিযোগ ও নিন্দার আগুনে ঘি য়েলেছেন সিপিএমের তরুণ নেতা শতরূপ ঘোষ।
মন্ত্রীকে শতরূপ ঘোষ লেখেন, ‘বাবুলদা, এটাই ওর (মুস্তাফিউরের) দেশ। ও এই দেশেই থাকবে। কারও বাবার ক্ষমতা থাকলে ওকে বার করে দেখাক।’
মুস্তাফিউরের মন্তব্যের মতোই তরুণ সিপিএম নেতা শতরূপের মন্তব্যকেও ভালো ভাবে নেননি বাবুল।
শতরূপ অত্যন্ত আপত্তিকর ও রূচিহীন ভাষায় মন্তব্য করেছেন অভিযোগ করে বাবুল সুপ্রিয় টুইট করেছেন।
নিজের টুইটারে শতরূপের উদ্দেশে বাবুল সুপ্রিয় লেখেন, ‘বড্ড বড় বড় কথা বলছেন শতরূপ ঘোষ। সেটাও মেনে নেয়া যায়, কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে ‘বিলো দ্য বেল্ট’ আক্রমণও করছেন! আপনাকে এখনও আমি কোনো জবাব দিইনি, দেবও না।’
এতেই ক্ষান্ত হননি বাবুল। এর পরের লাইনে শতরূপের উদ্দেশে একটি উর্দু পঙ্ক্তি যোগ করেন তিনি, ‘দুশমনি করো ওর জমকে করো/ পার ইতনি গুঞ্জায়িশ ছোড় দো/ কে আঁখ মিলে তো কহিঁ শরমিন্দা না হোনা পড়ে।’
যার বাংলা গিয়ে দাঁড়ায়, শত্রুতা কর এবং তা জমিয়েই কর/ কিন্তু এইটুকু অবকাশ রেখে দিও, যাতে চোখে চোখ পড়লে কখনও লজ্জিত হতে না হয়।’’
টুইটের শেষ লাইনে অবশ্য সৌজন্যবোধটুকু দেখিয়েছেন বাবুল। শতরূপের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘ভাল থেকো’।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠেই মুসলিমবিদ্বেষী এই নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান দেশটির স্বর্ণপদক জয়ী ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরি ।
মঞ্চে তিনি ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে বলতে থাকেন ‘কাগজ নাহি দিখায়েঙ্গে (কাগজ দেখাব না)’।
ওই ঘটনার নিন্দা করে দেবস্মিতা চৌধুরি তার পরিবারের কাছ থেকে কী শিক্ষা পেয়েছেন প্রশ্ন তুলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন সঞ্জয় সোম নামে এক নেটিজেন। আর সঞ্জয় সোসের প্রশংসা করে নিজের ওয়ালে সেই স্ট্যাটাস শেয়ার করেন আসানসোলের বাবুল সুপ্রিয়।
আর সঙ্গে সঙ্গে সেই পোস্টের বিরোধিতায় নানা ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য আসতে থাকে কমেন্ট বক্সে। বেশ কয়েকটি আক্রমণাত্মক মন্তব্যের জবাবও দেন বাবুল।
সেই পোস্টে মুস্তাফিজুর রহমান ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্ন ছুড়েন, বাবুল দা আপনি কতটা শিক্ষিত আর আপনার গুরু দীলিপ কতটা শিক্ষিত যে যে কিনা গরু থেকে সোনা বের করে?
জবাবে বাবুল সুপ্রিয় লেখেন, আগে তোমায় তোমার দেশে ফেরত পাঠাই তারপর পোস্ট কার্ডে জবাব দেব।’
ওই মন্তব্যের ঘরেই বাবুল সুপ্রিয়কে পাল্টা জবাব দেন সিপিএমের নেতা শতরূপ ঘোষ। তিনি লেখেন, ‘এটাই মুস্তাফিউরের দেশ। ও এখানেই থাকবে। কারো বাবার ক্ষমতা থাকলে ওকে বের করে দেখাক।’ সুত্রঃ যুগান্তর