মিয়ানমার এখন কসাইখানা

আভা ডেস্কঃ গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ক্রমেই মিয়ানমার অস্থিতিশীল উঠছে। যতই দিন গড়াচ্ছে, দেশটির সামগ্রিক পরিস্থতি কঠিন হচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত শান্তিপূর্ন সমাধানে না পৌঁছালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। ইতোমধ্যেই বহু বেসামরিক নাগরিক গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আর কোনো পথ দেখতে না পেয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য নাম লিখিয়েছেন।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া বেশিরভাগই হচ্ছে তরুণ, যারা সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এদেরই একজন হচ্ছে অ্যান্ড্রু।

সম্প্রতি আল জাজিরায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রথম দিকের সপ্তাহগুলিতে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু যখন দেখতে পেলাম সামরিক বাহিনী আমাদের নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করছে, তখন আমি সত্যিই অনেক কষ্ট পাচ্ছিলাম। তারা এ পর্যন্ত  বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৮৪০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের আগে, আমি একটি প্রাণিকেও হত্যা করিনি, অথচ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ে অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হয়েছি । আমার বর্তমান মানসিক অবস্থায় আসার পিছনে তারাই দায়ী।’

অ্যান্ড্রুর মতো বহু বেসামরিক নাগরিক সামারিক জান্তাবিরোধী ছায়া সরকারের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। মার্চের শেষ দিকে দেশটির বিভিন্ন শহরে এই বাহিনী গড়ে উঠেছে। তাদের মধ্যের কিছু যোদ্ধা দেশটির সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিতে যোগ দিয়েছে।

২০০ কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র মজুদ রয়েছে এবং নিজের দেশের নাগরিকদের নিপীড়নের ৭০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একটি সামরিক বাহিনীর মুখোমুখি হতে হচ্ছে নতুন বিপ্লবীদের। তবে তারা সবরকম প্রতিকূলতার মুখে লড়তে রাজি। কারণ, তারা বিশ্বাস করে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সশস্ত্র প্রতিরোধই একমাত্র পথ।

মিয়ানমারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রভাষক নিনো বলেন, ‘আমরা দেশব্যাপী বিক্ষোভ করেছি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আশায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি নাগরিক আন্দোলন শুরু করেছি। তবে কেবল বিক্ষোভ কর্মসূচিই যথেষ্ট নয়। আমরা যতটুকু সম্ভব সব করেছি, এখন অস্ত্র জোগানোই আমাদের জয়ের একমাত্র পথ।

তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে কখনও অস্ত্র হাতে নেওয়ার কথা ভাবিনি। তবে সারাদেশে, বিশেষত নিম্নাঞ্চলগুলিতে নিরস্ত্র, নিরপরাধ নাগরিকদের হত্যার বিষয়টি জানতে পেরে আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলেছি। আমি আর চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না। নিহত বীরদের প্রতিশোধ নিতে এবং সংহতি জানাতে অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হয়েছি।’

কায়াহ এবং পার্শ্ববর্তী শান রাজ্যে গত মে মাসের শেষদিকে এই যোদ্ধারা স্থানীয় সশস্ত্র দলগুলিতে যোগ দিয়েছিল। ১০ দিনের যুদ্ধে ১২০ সেনা সদস্য নিহত হয় বলে দাবি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি। ক্ষুব্ধ সেনারা মানবিক কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের উপর গুলি চালিয়েছে। যারা খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করছিল তাদেরসহ বাস্তুচ্যুতদেরও হত্যা করেছে। গত ২৪ মে, সামরিক বাহিনী একটি ক্যাথলিক গির্জার উপর গোলা নিক্ষেপ করে। অথচ সেখানে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।  গোলার আঘাতে ওই সময় চার জন নিহত হয়।

পেশায় চিকিৎসক ২৯ বছরের গুয়ে গুয়ে বলেন, ‘সেনাবাহিনী বন্দুকের সাহায্যে আমাদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। আমাদের কি আত্মসমর্পন করা উচিত নাকি পাল্টা লড়াই করা উচিত? আমরা যদি কেবল তিন আঙ্গুলের স্যালুট দিয়ে প্রতিরোধ করতে চাই, তাহলে যা চাচ্ছি তা কখনোই পাব না।’

সরকারের গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে গোপনে দিনযাপন করতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে মফস্বল এলাকাগুলিতে আমাদের গোপনে জীবনযাপন করতে হচ্ছে, তা না হলে আমাদের হত্যার শিকার হতে হবে… আমরা স্বস্তি নিয়ে ঘুমাতে পারি না। মিয়ানমার এখন কসাইখানার মতো হয়ে গেছে। প্রতিদিনই পশুর মতো মানুষ মারা হয়।’

Next Post

রাজশাহী সিটি থেকে জেলা বিচ্ছিন্ন রাখা হবে, বাড়লো লকডাউন মেয়াদ

বৃহস্পতি জুন ১৭ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ মৃত্যু ও সংক্রমণ না কমায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় বিশেষ লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছে (২৪ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত) জেলা প্রশাসন। বুধবার (১৬ জুন) রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত  রাজশাহী সার্কিট হাউজে রাসিক মেয়র এ এইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links