মিতু হত্যার চার্জশীট দাখিল হবে শীঘ্রই।

আভা ডেস্ক: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই বছর ধরে একই বিন্দুতে স্থির রয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। ‘আন্ডার ইনভেস্টিগেশন’ বলে বলে তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন গত দুই বছর। দীর্ঘ এ সময়ে বহুল আলোচিত এই খুনের মাস্টারমাইন্ড কে, কী কারণে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে তার কোনও কূল কিনারা করতে পারেননি নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা। কিলিং মিশনের কথিত মাস্টারমাইন্ড কামরুল ইসলাম ওরফে মুছার হদিসও পায়নি গোয়েন্দা পুলিশ। মুছা পলাতক রয়েছে, নাকি নিখোঁজ এ ব্যাপারেও স্পষ্ট কোনও বক্তব্য নেই তদন্ত কর্মকর্তার।

জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের শিগগিরই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। তবে তাতে বাবুল আক্তারকে আসামি করা হচ্ছে না। তিনি মামলার বাদিই থাকছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট নগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দু’য়েক দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেটি আজ ৫ জুন হতে পারে, আবার এরপরও হতে পারে।

সোমবার (৪ জুন) দুপুরে মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তদন্তাধীন বিষয়ে বক্তব্য করাটা উচিত হবে না বলে তিনি জানান। কামরুজ্জামান বলেন, ‘মামলার তদন্তে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। অভিযোগপত্র তৈরির কাজ চলছে। কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো শেষ করার পর খুব শিগগির আমরা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবো।’

কার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, প্রধান আসামি হিসেবে কার নাম উঠে আসছে, কয় জনকে আসামি করা হচ্ছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত নয় বলে এড়িয়ে যান। অভিযোগপত্রে চমক আছে বলেও এসময় তিনি মন্তব্য করেন। তবে সেই চমকটা কী থাকছে এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে বাবুল আক্তারকে মামলার বাদী ও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে রাখা হচ্ছে। আর খুনের ‘মূলহোতা’ মুছাকে প্রধান আসামি করা হচ্ছে। এর বাইরে অন্তত ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করা হবে।

তবে বাবুল আক্তারকে আসামি না করে অভিযোগপত্র দিলে তা মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আসামির তালিকা থেকে বাবুল আক্তারকে বাদ দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কারণ অভিযুক্ত হওয়ার কারণেই পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে তিনি চাকরি হারিয়েছেন। অভিযুক্ত হয়েছেন বলেই চাকরিতে যোগদানের জন্য পুনরায় আবেদন করার পর ডিপার্টমেন্ট তার আবেদন নাকচ করেছে।’

মামলা তদন্তে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সাধারণ কোন মামলা তদন্ত করার সময় ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। মিতু হত্যার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা শুরুর দিকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও শেষদিকে কোনও যোগাযোগ রাখেননি।’ গত এক বছর তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কোনও কথা হয়নি বলে তিনি জানান।

২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় মাহমুদা আক্তার মিতুকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত তিনজনের নামে একটি মামলা করেন।

মামলার সন্দেহভাজন আসামির মধ্যে ওয়াসিম, আনওয়ার, শাহজাহান এবং এহতেশামূল হক বর্তমানে কারাগারে। এছাড়াও মূল আসামি মুছা ও কালু পলাতক। আর জামিনে রয়েছে আসামি ছায়েদুল আলম ছাক্কু, আবু নসর গুন্নু এবং রবিন। কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় আসামি নবী ও রাশেদ।

ঘটনাস্থলের সিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে মূছা, কালু, ওয়াসিম, আনোয়ার ও নবীকে। তারা কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নিয়েছে। ছাক্কু হত্যাকারীদের মোটরসাইকেল দেয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রিভলভার সরবরাহ করে এহতেশামূল হক।

ঘটনার পর গত বছরের ৬ জুন নগরীর বাদুরতলা এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। ১১ জুন মতিঝর্ণা এলাকা থেকে শাহ জামান রবিনকে আটক করে আদালতে হাজির করে।

২৬ জুন হত্যাকারী মোতালেব মিয়া ওয়াসিম এবং আনোয়ারকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। স্বীকারোক্তিতে তারা দাবি করে, ‘মুছা এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে এবং টাকার বিনিময়ে তাদের ভাড়া করা হয়। ঘটনার দিন মুছা মিতুর মাথায় গুলি করে এবং নবী তাকে ছুরিকাঘাত করে। রাশেদ, শাহজাহান ও কালু তাদের সহযোগিতা করে। অস্ত্র সরবরাহ করে ভোলা।’

২৮ জুন নগরীর বাকালিয়া এলাকা থেকে অস্ত্রসহ এহতেশামুল হক ভোলা ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া এবং তার সহযোগী মনিরকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ মোটরসাইকেল সরবরাহ করার অভিযোগে রাঙ্গুনিয়া থেকে মুসার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম ছাক্কু এবং শাহজাহানকে আটক করে।

৫ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, রানির হাট এলাকায় অভিযান চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাশেদ এবং নবী নিহত হয়। যদিও ২ জুলাই রাশেদের বাবা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২৩ জুন সাদা পোশাকের পুলিশ বাড়ি থেকে রাশেদ ও নবীকে তুলে নিয়ে যায় এবং তার পর থেকেই তারা নিখোঁজ ছিল।

অন্যদিকে মিতু হত্যার ঘটনায় একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মামলার বাদি সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে। এর মধ্যে ২৫ জুন নাটকীয়ভাবে বাবুল আক্তারকে ঢাকায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই দিন তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে ‘জোরপূর্বক’ স্বাক্ষর নেওয়া হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই ঘটনায় সর্বশেষ গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বাবুল আক্তার সিএমপি কার্যালয়ে এসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।

বাংলা ট্রিবিউনউ

Next Post

রাতে নিখোঁজ শিশুর ৪ লাশ

মঙ্গল জুন ৫ , ২০১৮
চাঁদপুরে হাজীগঞ্জে রাতে নিখোঁজ হওয়া চার শিশুর লাশ ভোরে একটি পুকুরে ভেসে উঠেছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পৌর এলাকার রান্ধনীমুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশুরা হল- রান্ধুনীমুড়া শৃকু কমিশনারের বাড়ির রাহুল (১২), রায়হান (১৩), শামীম (১২) ও লিয়ন (১২)। তবে কি কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। ঘটনাস্থল […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links