আভা ডেস্কঃ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ঘুষ নয় তথ্য পাচারের অভিযোগে খন্দকার এনামুল বাছিরকে (দুদক পরিচালক) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বুধবার সকালে দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তথ্য বিকৃত (টুইসট) করা হয়েছে। ঘুষের কারণে তাকে (বাছির) আমরা বরখাস্ত করিনি। এটা (ঘুষ) তো প্রমাণের বিষয়। দুদকের অভ্যন্তরীণ তথ্য বাইরে কিভাবে গেল সেটাই বড় প্রশ্ন। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। যদিও এটাও প্রমাণের বিষয়।
গণমাধ্যমের ভুলে ক্ষতিগ্রস্ত এনামুল বাছির : বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দুদক কার্যালয়ে প্রবেশের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এনামুল বাছির বলেন, তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশ করা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সংবাদ প্রকাশে তারা (গণমাধ্যম) যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন মনে করছে না।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতি করে কুশল ও সালাম বিনিময় অপ্রয়োজনীয়। সাংবাদিকদের এড়াতে দুপুর সাড়ে ১২টায় দুদকে প্রবেশ করলাম। তবুও তাদের কাছ থেকে ছাড় পেলাম না।
ডিআইজি মিজানের সম্পদের অনুসন্ধানে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ : পুলিশের বিতর্কিত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানান দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। বুধবার দুপুরে দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
দুদক সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজানের সম্পদ অনুসন্ধানে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অপর এক নারীকে জোর করে বিয়ে ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠে।
এছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকেও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ ওঠার পর তাকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। এর ৪ মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।
উপ-পরিচালক ফরিদউদ্দিন পাটোয়ারির হাত ঘুরে ওই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান এনামুল বাছির। একপর্যায়ে ডিআইজি মিজান দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা এনামুল বাছির।
এর সপক্ষে তাদের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ পায়। এমতাবস্থায় সোমবার বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। দুদকে ২৩ মে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন এনামুল বাছির।
এতে বলা হয়, ৪ কোটি ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকার সম্পদ ডিআইজি মিজানের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে তার নিজের নামে ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৯৬ লাখ ৯২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।
এছাড়া ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানের নামে ডিআইজি মিজানের ৯৫ লাখ ৯১ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। আর ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসানের নামে তার ১ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
সব মিলিয়ে দলিল মূল্যে ডিআইজি মিজানের সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার ২ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা আয় পাওয়া গেছে এবং ৮৫ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয় পাওয়া গেছে। আয়-ব্যয় বাদ দিয়ে ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৯৭ লাখ ২১ হাজার টাকা।
আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারাসহ ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় মামলার সুপারিশ করেছিলেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছির।
শিগগিরই ঘুষ লেনদেনের তদন্ত শুরু : ডিআইজি মিজানুর রহমানকে দায়মুক্তি দিতে দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার চুক্তি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগের তদন্ত শিগগিরই শুরু করতে যাচ্ছে দুদক। উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে ঘুষ লেনদেনের তদন্ত শুরু করা হবে বলে দুদকের একটি সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে।
ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে ফৌজদারি মামলা করা হবে। এর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে অডিও রেকর্ড দিয়ে ডিআইজি মিজান দাবি করেন, ৪০ লাখ টাকার মধ্যে ২৫ লাখ টাকা তিনি দিয়েছেন।
১৫ জানুয়ারি রমনা পার্কে বাজারের ব্যাগে করে দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরকে তিনি এ টাকা দেন। তবে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি বানোয়াট বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান এনামুল বাছির। তিনি বলেন, যে অভিযোগ করেছে তাকে (ডিআইজি মিজান) প্রমাণ করতে বলুন। মিথ্যার কোনো প্রমাণ থাকে না।
এদিকে, ডিআইজি মিজান প্রসঙ্গে কারা অধিদফতরের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিজান ঘুষ কেন দিয়েছেন? নিশ্চয়ই তার কোনো দুর্বলতা আছে। তা না হলে ঘুষ কেন দেবেন? ঘুষ দেয়া-নেয়া দুটোই অপরাধ। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে আগের অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার এখনও প্রক্রিয়াধীন। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এর মধ্যে আবার ঘুষ কেলেঙ্কারি। এ কেলেঙ্কারি যাচাই-বাছাই করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যুগান্তর