নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে আইনজীবী হিসেবে চাকরি করত আব্দুস সালেক (৩২)। সালেককে নিয়ে মা-বাবার ছিল আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। কিন্তু চাকরিতে ঢোকার আগেই নেশায় জড়িয়ে পড়ে। নেশায় বুঁদ থাকায় চাকরিটাও হারায় সালেক। নেশাখোর ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়ে গোটা পরিবার। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক বাবা মো. শাহাবুদ্দিনের টাকা দিয়েই চলে আব্দুস সালেকের নেশা। দিনের পর দিন লুকিয়ে স্বামীর টাকা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন মা সেলিনা বেগম (৫০)। একপর্যায়ে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় সেই মাকেই হাতুড়িপেটা করে হত্যা করেছে সালেক।
এমন লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আরিজপুর মহল্লায়। গত রবিবার রাতে মা সেলিনা বেগমকে হত্যার পর লাশ ঘরের তীরের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় সালেক। পরে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে কুড়িগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। এতে হতবাক হয়েছেন গোদাগাড়ীবাসী।
গোদাগাড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাতে বাড়িতে সালেক ও তার মা সেলিনা বেগম ছাড়া আর কেউ ছিল না। তখন নেশার জন্য সালেক তার মায়ের কাছে টাকা চায়। কিন্তু তার মা টাকা দিতে রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সালেক তার মায়ের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এরপর সালেক গলায় রশি পেঁচিয়ে মায়ের লাশ ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে সবাই আত্মহত্যা বলে মনে করে। কিন্তু গলায় ফাঁস লাগানো থাকলেও শরীরের বেশির ভাগ অংশ মেঝেতেই ছিল। আবার মাথা থেকে রক্ত ঝরছিল। ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল হাতুড়িও। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতুড়ি জব্দ করেছে।
ওসি আরো জানান, ঘটনার পর থেকে ছেলে সালেক পলাতক। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। আর লাশ উদ্ধার করে রাতেই থানায় নেওয়া হবে। সোমবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য তা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় সালেকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সালেক সবার ছোট। ছোট ছেলেকে নিয়েই মা-বাবা একসঙ্গে থাকতেন। সালেকের বিরুদ্ধে এর আগেও থানায় অভিযোগ করেছিলেন তার বাবা শাহবুদ্দিন। নেশার টাকা দিতে না চাওয়ায় রবিবার সন্ধ্যা থেকেই সালেকের সঙ্গে তার মা-বাবার ঝগড়া শুরু হয়। এরপর সালেকের মারমুখী আচরণ দেখে বাবা শাহবুদ্দিন থানায় গিয়েছিলেন অভিযোগ করতে। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে এসে দেখেন স্ত্রীর নিথর দেহ পড়ে আছে ঘরের মেঝেতে।
এভি-১