নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দিন দিন বাড়ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রামেক হাসপাতালে বর্তমান ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৭ জন। এ পর্যন্ত রামেকে ডেঙ্গু জরের চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২ জন। অথচ ডেঙ্গু সনাক্ত করণের কোন উপকরণ নেই এখানে। এত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে বেশ বেকায়দায় আছে ও ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীর স্বজনরা।
জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রোগ সনাক্ত করার জন্য প্রযোজন হয় এনএসওয়ান পরীক্ষার। কিন্তু এই পরীক্ষার কিট ও রিএজেন্টের নেই রামেক হাসপাতালে। অন্য দিকে রামেকে রক্তের সিবিসিসহ নান ধরনের টেস্টের প্রয়োজন হলেও সে সব টেস্টও করতে হচ্ছে বাইরে থেকে। অভিযোগ আছে, ডাক্তাররাও এসব টেস্টের জন্য বাইরের ডায়াগনস্টিক সেটারে পাঠাচ্ছেন। এদিকে রামেক থেকে রোগীদের ফ্রি টিকিৎসার কথা থাকলেও নামে মাত্র নাপা ট্যাবলেট ছাড়া আর কোন কিছু পায় না বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা।
রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি আছেন রোডর্স অ্যান্ড হাইওয়ের কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন। তার ছেলে অহসান হাবিব বলেন, গত ২৪ তারিখ আমরা এখান ভর্তি হয়েছি। গত ৩দিনে আমাদের বাহির থেকে ৩ হাজার টাকার টেস্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন আমাদের লিখে দেওয়া হয় যে কাল সকালের আগেই এই টেস্টের প্রতিবেদন দিতে হবে। কিন্তু রামেকে ডাক্তার না থাকায় তা কাগজে লিখে দেয়। আমরা শুধুমাত্র বিল দিয়ে আসি। তারাই রক্ত নিয়ে যায়। পরে আমরা গিয়ে প্রতিবেদন নিয়ে আসি।
রাজশাহী বাঘার উপজেলার হিয়া ডেঙ্গু জ্বরে ভর্তি আছেন রামেক হাসপাতালের ডেঙ্গু কেবিনে। তার বড় বন নাফরিন আরেফিন জানান, গত ২৫ তারিখ রামেকে ভর্তি হয়েছেন তার বোন। এই দিনই তাকে ডেঙ্গু সনাক্ত করণ টেস্ট করতে বলা হয়। রামেকে না থাকায় তিনি পপুলার রাজশাহী শাখা থেকে করেন। সেখাতে ৩ হাজার টাকা বিল হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এখানে যে সকল খরচ সব তো সরকারেরই দেয়ার কথা। আমরা পত্র পত্রিকায় এমনটাই পড়েছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র। আমাদেরকেই সব বাহির থেকে করতে হচ্ছে। এমনি মাঝে মধ্যে স্যালাইনও বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। রোগীকে রেখে বার বার বাহিয়ে যাওয়া আসা করে তার অনেক ভোগান্তি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরও এক রোগীর নাম সাকিল আহম্মেদ, কথা হয় তার সাথেও। তিনি বলেন, তাকেও বাহির থেকে সকল টেস্ট করেতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘গত বছরও এ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হয় ৩ জন। এ কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর এনএসওয়ান রক্ত পরীক্ষার কিট ও রিএজেন্টের প্রয়োজন পড়েনি। এখন হঠাৎ করেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এর দরকার পড়ছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যেই এনএসওয়ান রক্ত পরীক্ষার কিট ও রিএজেন্ট কেনা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সিবিসি ও প্লাটিলেট পরীক্ষার ব্যবস্থা হাসপাতালে আছে। কিন্তু কিট এবং রিএজেন্ট সরবরাহ না থাকার কারণে এনএসওয়ান পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। রোগীরা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে এ পরীক্ষাটি করাচ্ছেন।
প্রতিদিন রামেকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পরিক্ষা নিরিক্ষা চলছে। এখানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ফ্রিতে ব্যবস্থা করে দেওয়া আছে। যদি এর বাহিরে কোন কিছু হয়, তবে আমরা এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান কর্তব্যরত এই কর্মকর্তা চিকিৎসক।