ভূমিধ্বস এ হতাহত ঠেকানো যাচ্ছে না।

আভা ডেস্ক: বাংলাদেশে পার্বত্য জেলায় ভূমি নিয়ে জটিলতার কারণে ভূমিধসে হতাহতের সংখ্যা ঠেকানো যাচ্ছে না। রাঙামাটিতে আবারো ভূমিধসে ১০ জন নিহত হয়েছে। এমন সময়ে এই ঘটনা ঘটলো, যখন গত বছর ১৩ জুন পার্বত্য অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিধসের ঠিক এক বছর পূর্ণ হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সে সময় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো সেগুলোর কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। ভূমি বিরোধের কারণে মানুষজনকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। যারা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করেন তারাও সরতে চাইছেন না। দারিদ্র্যও একটি কারণ।

ঐ অঞ্চলে ভূমিধসের কারণ নিয়ে কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন। তিনি বলছেন, এর সাথে আসলে বৃহত্তর রাজনীতিই সবচাইতে বেশি জড়িত।

তিনি বলছেন, “একে তো পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটা করা হয় নি। লোকজন সমানে সেখানে যাচ্ছে। ১৯৮১ সালে যারা সরকারি ব্যবস্থায় গিয়েছিলো তাদেরকে জমি দেয়া হয়েছিলো। ঐ অঞ্চলে ভূমির উপর যার আইনি অধিকার আছে, কিন্তু সে হয়ত তা রক্ষা করতে পারছে না। তাই তারা জমি ছেড়ে যেতে চাইছে না। যতই ঝুঁকিপূর্ণ যায়গায় সে থাকুক, সে ভাবছে অন্য কোথাও গেলে সে আর জায়গা পাবে না।”

অধ্যাপক হাফিজা খাতুন আরো বলছেন, “অনেকেই পরের দিকে গেছেন। যার জমির মালিকানা নেই। সেও দখল রাখার জন্য কোন মেকানিজম নিয়েছে, হয়তো সে ক্ষমতাশালী কারোর সহায়তা নিচ্ছে, অথবা একটা কিছু করে সেখানে থাকছেন।”

তিনি বলছেন, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যে কারণগুলো অর্থাৎ পার্বত্য এলাকায় বড় গাছ যথেষ্ট নেই বলে মাটি আঁকড়ে ধরে থাকার শেকড় আর নেই। পাহাড় কেটে অনেক বেশি মানুষ বাস করছে। অথবা সেখানে এখন অনেক বেশি মানুষ বাস করে বলে পাহাড়ে চাষ বেশি হয়। আগে জুম চাষ হতো এখন পদ্ধতিও বদলেছে। ফসল যত বেশি চাষ হবে মাটি তত ঢিলা হবে। কিন্তু সেইসব কারণের সাথে সাথে, স্থানীয় রাজনীতিও সমস্যা সমাধান করতে না পারার একটি কারণ।

গত বছর রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান এই তিনটি জেলায় ঠিক ১৩ জুন ঘটেছিলো ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনা। যাতে প্রায় দেড়শ’ জন নিহত হয়েছিলো। সেই ঘটনার এক বছর পূর্ণ হতেই নতুন করে আবারো দুর্যোগ নেমে এলো রাঙামাটিতে।

সে সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিলো, পাহাড় কাটা বন্ধ করে ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে মানুষজনকে নিরাপদ সরিয়ে নিয়ে নতুন কোথাও পুনর্বাসন করা হবে।

পাহাড়ে রয়েছে একটা ভিন্ন ধরনের একটি প্রশাসন যার নাম আঞ্চলিক পরিষদ। পাহাড়িদের ক্ষমতায়নের কারণে সেটি তৈরি হয়েছিলো। আবার দেশের প্রথাগত প্রশাসনও সেখানে রয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে বলছেন, “সিদ্ধান্ত কে বাস্তবায়ন করবে সেটি নিয়েও জটিলতা রয়েছে। এখানে বিভিন্ন রকম প্রশাসন আছে। আপনার কতটুক অংশগ্রহণ আর আমার কতটুকু অংশগ্রহণ এটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ফুল ডিটারমিনেশান কাজ করে না। আর তাই অনেক সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে”

তিনি আরো বলছেন, “ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে পুনর্বাসনের যে কথা বলা হয়েছিলো তার কিছুই অন্তত আমি হতে দেখি নি। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির যে সমস্যা রয়েছে তাতে একটা সেন্টিমেন্ট এখানে কাজ করে। প্রশাসন যত কথাই বলুক না কেন তারা সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে কাজে পরিণত করতে পারে নাই।”

তিনি আরো বলছেন, “মানুষজনও গোঁয়ার্তুমি করছে। তারাও সরছে না। গত বছর যে জায়গায় ভূমি ধস হয়েছে, আপনি রাঙামাটি আসলে দেখবেন ঠিক সেই জায়গাতেই এখন আগের থেকে অনেক বেশি ঘর উঠে গেছে।”

ওদিকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, নানিয়ার চরে তিনটি জায়গায় ভূমিধস হয়েছে। জেলা সদর সহ সব মিলিয়ে বিশটির মতো ভূমিধস হয়েছে গত রাত থেকে।

জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছিলো।

মি. রশিদ জানিয়েছেন, “এখনো একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে আমরা আরো ভূমিধস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।”

তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত একুশটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

নানিয়ার চরের বড়ফুলপাড়া, ধর্মচরণপাড়া এবং হাতিমারা এলাকায় এই ধসের পাশাপাশি রাঙামাটি সদরেও তিনটি বাড়ি মাটি চাপা পড়েছে। তবে তারা আগেই সরে যাওয়ায় সেখানে কেউ হতাহত হয়নি।

কিন্তু সমস্যার যে উৎস কেন তার স্থায়ী সমাধান করা যাচ্ছে না? গত বছরের সিদ্ধান্ই বা কেন বাস্তবায়ন করা হলো না?

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বললেন, “জনগণকে সচেতন করা ও তাদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, পাহাড় কাটা বন্ধ করা এরকম যেসব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল তার সবই আমরা করছি।”

উৎস
বিবিসি

Next Post

বাম পা নেই, তবু জীবনযুদ্ধে হার মানেনি কবির হোসেন।

মঙ্গল জুন ১২ , ২০১৮
আভা ডেস্ক: বাম পা নেই, বাম হাতের বগলে ধরা ক্র্যাচ, সেই হাতেই সামনের দিক থেকে ঠেলছিলেন সিএনজি স্কুটারটিকে। একটু খেয়াল করতেই বোঝা গেল, লুঙ্গির সঙ্গে নীল শার্ট পরা লোকটি-ই সিএনজিটির চালক। প্রথম দেখায় বোঝা কষ্ট যে সিএনজিটিকে কেন ঠেলছেন তিনি। পরে বুঝলাম প্যাসেঞ্জার নামিয়েছেন মাত্র, স্পেস কম থাকায় ঘোরাতে সমস্যা, […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links