ভারত সরকার তড়িঘড়ি করে সাতজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে প্রত্যর্পণ করেছে।

আভা ডেস্ক : আদালতে মামলার শুনানির আগেই ভারত সরকার তড়িঘড়ি করে সাতজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে প্রত্যর্পণ করেছে। বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে ঐ সাতজন প্রায় ছ’বছর ধরে আসাম রাজ্যে বন্দী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার এদের মনিপুরের মোরে সীমান্ত চৌকি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়।

মিয়ানমারে ফেরত পাঠালে এই সাতজনের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে – এই মর্মে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদনের শুনানি হওয়ার আগেই প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

আসাম পুলিশের সীমান্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল ভাস্করজ্যোতি মহন্ত বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “যথাযথ নিয়ম মেনেই ঐ সাতজন মিয়ানমার নাগরিককে মোরে সীমান্তে সেদেশের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তবে এই প্রথম যে মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানো হল তা নয়।”

“মাস কয়েক আগেও আমরা দুজন মিয়ানমারের নাগরিককে একই ভাবে দেশে ফেরত পাঠিয়েছি, ঠিক যেভাবে পাকিস্তানী, বা নাইজিরীয় অথবা অন্য যে কোন দেশের নাগরিককে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হয় – সেভাবেই এটা করা হয়েছে।”

এই সাতজন যে রোহিঙ্গা মুসলমান, সরকারি কাগজপত্রে সেটা আলাদা করে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয় নি।
দিল্লিতে রোহিঙ্গা-বিরোধী সমাবেশ।

অন্যদিকে আসাম পুলিশ যদিও দাবী করছে কয়েক মাস আগে তারা আরও দুজন মিয়ানমারের বাসিন্দাকে ফেরত পাঠিয়েছে, তবে বিবিসি মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এখনও সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে নি।

এই সাতজনকে যাতে মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানো হয়, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে তিনদিন আগে আবেদন করেছিলেন দিল্লিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।

বৃহস্পতিবার সেই আবেদন খারিজ হয়ে গেছে, তবে তার আগেই ঐ সাতজনকে প্রত্যর্পণের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল।

দিল্লিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় এক ছাত্র, আলি জোহার বলছিলেন,”আজ শুনানির সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় যে ঐ সাতজনকে ইতিমধ্যেই মিয়ানমার সরকারের হাতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। আদালত তখনই আবেদন খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দেয়, যেহেতু ওই সাতজন বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকেছিল, এবং তাদের ফেরত পাঠানোও হয়ে গেছে, তাই আদালতের আর কিছু করার নেই।”

“এটা নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ এই প্রথমবার মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তারা নিজের দেশের নাগরিক বলে স্বীকার করে নিলো। এর আগে কলকাতা, মালদা বা অন্য জেলগুলি থেকে যখন রোহিঙ্গা বন্দীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে দূতাবাসে, কোন বারই তাদের নিজের দেশের নাগরিক বলে স্বীকার করে নি মিয়ানমার,” বলছিলেন মি. জোহার।

ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত বছর খানেক আগেই ঘোষণা করেছে সরকার। ঐ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলাও চলছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রক্ষার দাবিতে কলকাতায় বিক্ষোভ।

তার মধ্যেই যেভাবে সাতজনকে দেশে ফেরত পাঠানো হল, তারপরে ভারতের বসবাসকারী সব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছিলেন আলি জোহার।

তাঁরর কথায়, “নিঃসন্দেহে গোটা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ই আতঙ্কিত। রাখাইন রাজ্যটা তো মরণ ফাঁদ। এই যে সাতজনকে ফেরত নিলো মিয়ানমার, তাদের কোথায় নিয়ে যাবে, বন্দী করে রাখবে না মেরে ফেলবে, কেউ জানে না। এরকম অবস্থায় এদের ফেরত পাঠানো অনুচিত হল।”

প্রত্যর্পিত সাতজন রোহিঙ্গার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার তেন্দাই অ্যাচুমি।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এই মানুষরা তাদের নিজেদের দেশে যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৈষম্য, ঘৃণা আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন, সেটা মাথায় রেখে এদের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এটা ভারতের একটা আন্তর্জাতিক দায়িত্ব।

ভারতে আটক প্রত্যেক রোহিঙ্গা বন্দীর নিরাপত্তা কতটা প্রয়োজন রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কাছে তাদের বিষয়ে জানানোটাও ভারতের কর্তব্য বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

ভারতে এখন প্রায় ৪০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৬,০০০ মানুষকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা পরিচয় পত্র ইস্যু করেছে।

বাদবাকি হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিনই হেনস্থা আর হয়রানির ভয়ের মধ্যেই কোনও নথি ছাড়া দিন কাটাতে হয়।

রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশ বসবাস করেন ভারত-শাসিত কাশ্মীরের নানা জায়গা এবং দিল্লিতে।

এছাড়াও হায়দ্রাবাদ, পাঞ্জাব, মুম্বাই, দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও তারা গত পাঁচ-ছয় বছরে গড়ে তুলেছেন নিজেদের কলোনি।

কলকাতার কাছেও এক বছর ধরে গোটা চল্লিশেক রোহিঙ্গা পরিবার বসবাস করতে শুরু করেছে।

Next Post

উত্তরবঙ্গের আশা ভরসা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

শুক্র অক্টো. ৫ , ২০১৮
নিজস্ন প্রতিবেদক: প্রায় তিন মাস আগে মাইক্রোর সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বাম পায়ের গোড়ালির নিচে ভেঙে যায় নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা সদর এলাকার সুশান্তের। পাশাপাশি পায়ের পাতার ওপরের মাংস পর্যন্ত কেটে পড়ে যায়। অনেকটা মুমূর্ষ অবস্থায় ভর্তি করা হয় সুশান্তকে। প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে ভর্তি করে কয়েকদিন পরে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links