ভারতীয় সিনেমা ‘মুল্ক’ আলোচনার ঝড় তুলেছে মুসলমান সমাজে।

আভা ডেস্ক: ভারতে দিনচারেক আগে মুক্তি পাওয়া একটি বলিউড মুভি ‘মুল্ক’ যেভাবে বেনারসের একটি মুসলিম যৌথ পরিবারের জীবনকে তুলে ধরেছে তা দেশ জুড়ে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ওই পরিবারের একটি ছেলে সন্ত্রাসবাদী পরিচয়ে নিহত হওয়ার পর গোটা পরিবারের ওপর দিয়ে যেভাবে ঝড় বয়ে যায়, তা নিয়েই এই সিনেমার গল্প।

সত্যি ঘটনার ওপর নির্ভর করে তৈরি এই ছবিটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন অনেকেই, অ্যাক্টিভিস্ট বা সমাজকর্মীরা মিডিয়াতে কলম ধরে ব্যাখ্যা করছেন কেন মুল্ক তাদের চোখে জল এনে দিয়েছে।

আবার পাশাপাশি ছবির পরিচালক অনুভব সিনহাকে এই অভিযোগও অনেকের কাছেই শুনতে হচ্ছে যে তিনি মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল কিংবা মাফিয়া ডন দায়ুদ ইব্রাহিমের টাকায় ছবি বানান!

কিন্তু কেন বলিউডের একটি ছবিকে ঘিরে ভারতে এই তর্কবিতর্ক আর চায়ের কাপে তুফান?
মুল্ক ছবির একটি দৃশ্য
মুল্ক ছবির একটি দৃশ্য

গত ৩রা আগস্ট সারা ভারতে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক অনুভব সিনহার সিনেমা মুল্ক, যিনি এর আগে তেরে বিন বা রা-ওয়ানের মতো সম্পূর্ণ বিনোদনধর্মী ছবি বানানোর জন্যই পরিচিত ছিলেন।

কিন্তু মুল্ক ছবিতে তিনি এনেছেন ইসলামোফোবিয়ার কাহিনী, যে পরিবারের একটি ছেলে জঙ্গী হয়ে যায় সমাজে তাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কাহিনী।

ছবির সংলাপে অভিনেতা ঋষি কাপুরকে বলতে শোনা যায়, “যতদিন পাকিস্তানের জয়ে ভারতে একটি মুসলিম পরিবারও উল্লাস করবে ততদিন তাদের মহল্লার দেওয়ালে পাকিস্তানি লেখা থাকবেই।”

কিংবা আদালতে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, “মুসলিম পরিবারে অনেক বাচ্চাকাচ্চা হয় বলে তাদের এক-আধটাকে জিহাদের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়।”

সম্ভবত এ কারণেই সাংবাদিক সাবা নাকভি এই ছবির রিভিউ লিখতে গিয়ে লিখেছেন, “মুল্ক অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলেছে – এবং যখন ভারতের চল্লিশ লক্ষ বাসিন্দার নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে তখন এই ছবি বোধহয় আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।”
মুল্কের অভিনেত্রী তাপসী পান্নু, পরিচালক অনুভব সিনহা ও অন্যতম অভিনেতা রজত কাপুর
বাঁদিক থেকে : মুল্কের অভিনেত্রী তাপসী পান্নু, পরিচালক অনুভব সিনহা ও অন্যতম অভিনেতা রজত কাপুর

অ্যাক্টিভিস্ট রানা সাফভি লিখছেন, ছবির প্রোটাগোনিস্ট মুরাদ আলি – যে ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ঋষি কাপুর – তাকে যেভাবে ভারতের জন্য দেশপ্রেম প্রমাণ করতে হয় তাতে তার চোখ বারে বারে ভিজে উঠেছে।

‘মাদারিং আ মুসলিম’ বইয়ের লেখিকা ও গবেষক নাজিয়া এরাম বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “এই ছবিতে সাঙ্ঘাতিক একটা সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে, আমার ঘরেই আমাকে স্বাগত জানানোর তুমি কে হে? এটা তো আমারও ঘর। অর্থাৎ হিন্দুরা বিরাট উদারতা দেখিয়ে ভারতে মুসলিমদের থাকতে দিযেছে – এই রেটোরিকটার ঝুঁটি ধরে নাড়া দিয়েছে এই সিনেমা।”

“ছবির দ্বিতীয় যে জিনিসটা আমাকে ভাবিয়েছে তা হল সন্ত্রাসবাদ মানে শুধু কারও জীবন নেওয়া নয়, রাজনৈতিক বা সামাজিক ফায়দা লোটার জন্য যখন কাউকে ভয় দেখানো হয়, হুমকি দেওয়া হয় সেটাও কিন্তু সন্ত্রাসবাদ!”

ফলে ছবির মুক্তির আগে থেকেই কেন পরিচালক অনুভব সিনহাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল হতে হচ্ছে, তা অনুমান করা কঠিন নয়।
লেখিকা নাজিয়া ইরামের মতে মুল্ক সন্ত্রাসবাদেরও নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে
লেখিকা নাজিয়া ইরামের মতে মুল্ক সন্ত্রাসবাদেরও নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে

কেন দায়ুদ ইব্রাহিমের টাকায় ছবি বানাচ্ছেন বা পাকিস্তানের দালালি করছেন – এই জাতীয় অভিযোগের জবাবে তিনি অবশ্য খোলা চিঠি লিখে বলেছেন, “আপনাদের মনিবদের জন্য আমি এই ছবি বানাইনি।”

বিবিসিকেও মি সিনহা বলছিলেন, পরিচালক হিসেবে তার কাজ প্রশ্ন তোলা, উত্তর দেওয়া নয়।

তার কথায়, “অনেকে ছবিটাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখলেও আসলে এটা রাজনীতির ছবি নয় – বরং আবেগের ছবি, কোর্টরুম ড্রামার ছবি। হ্যাঁ, ‘মুল্ক’ প্রশ্ন তুলেছে ঠিকই – কিন্তু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেনি। উত্তর খোঁজার ভার দর্শকেরই।”

ছবির অন্যতম অভিনেত্রী তাপসী পান্নু আবার ছবি রিলিজ করার সময়েই সরাসরি বলেছিলেন, ভারতে একটা বিশেষ ধর্মের মানুষকে যেভাবে আক্রমণের নিশানা করা হচ্ছে সেটাই তাকে এই ছবি করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

নাজিয়া এরামও মনে করেন, ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের সূক্ষতাকে দারুণ ভারসাম্যে ধরেছে এই ফিল্ম।
মুল্ক ছবির প্রোমোশনে ঋষি কাপুর
মুল্ক ছবির প্রোমোশনে ঋষি কাপুর

তিনি বলছেন, “ছবির শুরুতেই দেখি মুসলিম পরিবারে উৎসব আর খানাপিনা চলছে – আর তাদের নিরামিশাষী হিন্দু পড়শীরা বলছে আমরা তো ওদের বাড়িতে খাই না।”

“আবার একই ছবিতে দেখি বাবরি মসজিদ ভাঙার পর দাঙ্গায় সেই হিন্দু প্রতিবেশীরাই ওই পরিবারটিকে সারা রাত জেগে রক্ষা করেছিল। এই জটিল সহাবস্থানের রসায়নেই কিন্তু লুকিয়ে আছে আমাদের ছেলেবেলা!”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে লেখালেখি বা আলোচনা কম হয়নি।

কিন্তু সেই আবহে একটি মুসলিম পরিবারের চোখে ভারত নামক মুল্কের চেহারা কীভাবে বদলে যাচ্ছে, তারই মর্মস্পর্শী গল্প বলেছে এই সিনেমাটি।

Next Post

বাংলাদেশের আনন্দোলনের সাথে ভারতে শিক্ষার্থীদেরও সমর্থন পুবর্ক আনন্দোলন।

মঙ্গল আগস্ট ৭ , ২০১৮
আভা ডেস্ক: নিরাপদ সড়কের দাবিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ‘সংহতি মিছিল’ করেছে ভারতের বামপন্থী রাজনৈতিক দল এসইউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠন ডিএসওর পশ্চিমবঙ্গ শাখা। আজ সোমবার বিকেলে ডিএসও কলকাতায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণার জন্য একটি ‘সংহতি মিছিল’ বের করে। মিছিলটি কলকাতার রামলীলা ময়দান থেকে বের হয়ে কলকাতার […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links