ভাতা বন্ধ: ‘ভিক্ষা করা ছাড়া বিকল্প পথ নেই’

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে দীর্ঘ সময় ভাতা পেলেও যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ না পাওয়ায় রাজশাহী মহানগর এলাকার ১২৬ জনের ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গতমাসের ভাতা পাননি।

ভাতা বন্ধের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের মাধ্যমে বুধবার এই স্মারকলিপি দিয়েছেন ভাতা বঞ্চিতরা।

এ সময় নগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল মান্নান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শাহাদুল হক মাস্টারসহ ভাতাবঞ্চিতরা উপস্থিত ছিলেন।

গত রোববার সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পেয়েছেন। তবে ভাতা পাননি এই ১২৬ জন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল মান্নান জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণ প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রয়োজন জামুকার সুপারিশও। কিন্তু বিভিন্ন সময় গেজেটভুক্ত হওয়া রাজশাহী মহানগরীর ৫৫২ জনের মধ্যে ১৬০ জনের ব্যাপারে জামুকার সুপারিশ ছিল না। সে কারণে জামুকা গতবছর তাদের যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেয়। জামুকার নির্দেশনায় রাজশাহী জেলা প্রশাসন একটি কমিটি করে এই ১৬০ জনকে নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে।

চার সদস্যের ওই যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান। সদস্য সচিব ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এস. মনিরুল ইসলাম সদস্য হিসেবে ছিলেন।

গত বছরের শুরুতে এই কমিটি আপত্তি ওঠা ব্যক্তিদের জবানবন্দি নেন। এ ছাড়া ওই ব্যক্তির পক্ষে কোনো সাক্ষী থাকলে তারও সাক্ষ্য নেয়া হয়।

এরপর গতবছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটি জামুকায় প্রতিবেদন পাঠায়। যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আসা মোট ১৬০ জনের মধ্যে ৩৪ জনকে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট নিয়মিত করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। গেজেট নিয়মিতকরণের সুপারিশ বঞ্চিত হন ১২৬ জন। এই ১২৬ জনেরই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।

বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার সময় ভাতা বঞ্চিতদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার ইকবাল বাদল, জহির উদ্দিন জসি, আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু, আইনজীবী অঙ্কুর সেনসহ আরও অনেকে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) অফিস কক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়া হয়। চার সদস্যের কমিটিতে সভাপতিসহ তিনজন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা অনেকের ক্ষেত্রে বিরাগবশত রায় দিয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগে রিটের কারণে রাজশাহী মহানগর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের ওপর স্থগিতাদেশ থাকা স্বত্ত্বেও এই কার্যক্রম চালানো হয়েছে, যা আদালত অবমাননার সামিল।

নিয়মবহির্ভূতভাবে যাচাই-বাছাই করে ১২৬ জনের ভাতা হঠাৎ করে বন্ধ করা হয়েছে। ওই যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সবাই আপিল করলেও তার নিষ্পত্তি করেনি জামুকা। আপিল নিষ্পত্তির আগেই ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। এখন তাদের ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। তাই তাদের ভাতা চালু রাখার জন্য মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

এই স্মারকলিপির অনুলিপি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ এবং নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিককে দেয়া হয়েছে।

স্মারকলিপি নেয়ার পর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, স্মারকলিপিটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

Next Post

উন্নয়ন দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করছে: পরিকল্পনামন্ত্রী

বুধ মার্চ ১৬ , ২০২২
আভা ডেস্কঃ দেশে এখন দুর্নীতি আঠার মতো লেগে আছে। এটা হচ্ছে দেশে উন্নয়ন কাজের জন্যই। একদিকে উন্নয়ন হচ্ছে, অন্য দিকে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এসব দুর্নীতির বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় আক্ষেপ করেন মন্ত্রী। রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি আয়োজিত ‘পরবর্তী উন্নয়ন যাত্রায় […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links