আভা ডেস্ক : ভূমি সচিব আবদুল জলিলের সহোদর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালিকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাইবাসী।
ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতার তকমা গায়ে লেপে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কাজে তার বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ভাইয়ের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এলাকার সব কিছুতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্রিয় এ সরকারি কর্মকর্তা।
আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনে কমিটি গঠন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয় না। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে চারখাই এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘অঘোষিত এমপি’ হিসেবে পরিচিত।
সরেজমিন চারখাই এলাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভূমি সচিব আবদুল জলিল তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে বড়। ছোট ভাই আবদুল খালিক সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে একটি বেসরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। সেই সঙ্গে চারখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সেই পদাধিকার বলে তিনি এখনও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। কলেজ শিক্ষক থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপুটি রেজিস্ট্রার হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের সেই পদ তিনি ছাড়েননি। তার সদস্য পদের বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।
স্থানীয়রা জানান, আবদুল খালিক ভূমি সচিব আবদুল জলিলের ভাই হওয়ায় এলাকায় কেউ তার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে না। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও চলে তার ইশারায়। খালিকের ইচ্ছামতো গঠিত হয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।
তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা হয়েও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদটি ধরে রাখেন। আবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই নেমে আসে খড়গ। নিজস্ব লোকজন দিয়ে তার অপছন্দের তালিকায় থাকা কমিটির সদস্যদের হেনস্থা করতেও দ্বিধা করেন না।
চারখাইয়ের বাসিন্দা শামীম আহমদ জানান, আবদুল খালিকের পছন্দের ওপর নির্ভর করে চারখাই উচ্চ বিদ্যালয়সহ স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়া। তার অপছন্দের কেউ কোনোভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে ঢুকে পড়লে তাকে কূটকৌশলে ফেলে নিজস্ব লোকজন দিয়ে লাঞ্ছিত করেন।
চারখাই উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুল খালিক। এ কমিটির সদস্য ফখর উদ্দিন ইসলামকে পরিচালনা কমিটির সভায় একাধিকবার হুমকি, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেন তিনি।
ফখর ইসলামের অপরাধ তিনি আবদুল খালিকের অনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন। এজন্য তাকে একাধিক সভায় লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফখর উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, চারখাই উচ্চ বিদ্যালয়ে কমিটির সভা চলছে। এ ছাড়া এখন সভাপতি আবদুল খালিক উপস্থিত আছেন। তাই পরে কথা বলবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আবদুল খালিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দায়িত্বে না থাকলেও তার অনুমোদন ছাড়া চারখাই ইউনিয়নের সরকারদলীয় (এমপি বরাদ্দ) টিআর-কাবিখা তালিকা ও বণ্টন হয় না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টিআর কাবিখায় তালিকায় তার নিজস্ব লোকদের নাম সংযোজন করে বণ্টন করেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কোনো তালিকা দিলে তিনি সেখানে নিজস্ব লোকদের নাম যুক্ত করেন।
সরকারি দলের এই নেতা আরও বলেন, তিনি একটি কলেজের প্রভাষক থেকে হঠাৎ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়ে যান। এলাকায় জনশ্র“তি আছে, ভাই সচিব আবদুল জলিলের তদবিরে তিনি এভাবে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন।
এ ছাড়া আবদুল খালিক এলাকায় এতটাই প্রভাবশালী যে, স্থানীয় কোনো সরকারি কাজে তার বেধে দেয়া লোকজনের কাছ থেকে নির্মাণসামগ্রী কেনা বাধ্যতামূলক। এ পন্থায় তিনি অলিখিত কমিশন পান। প্রশাসনও সচিবের ভাই বলে তাকে সমীহ করে চলে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন আহমদ জানান, চারখাই এলাকায় সড়ক সংস্কার কাজ করতে হলে আবদুল খালিকের নিজস্ব লোকদের কাছ থেকে নির্মাণসামগ্রী নিতে হয়। এ সুবাদে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল খালিক উল্লেখিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি এখন সরকারি চাকরি করেন। নিয়ম অনুযায়ীই তিনি ১৭ বছর কলেজ শিক্ষকের অভিজ্ঞতা দিয়ে আবেদন করে ২০১৪ সালে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পান। কারও প্রভাবে নয়।
তার লোকজনের দেয়া নির্মাণসামগ্রী ছাড়া সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয় না এমন অভিযোগে তিনি বলেন, আমার কোনো লোকজন নেই। সরকারি চাকরিতে যাওয়ার পর আমি আর এসব বিষয়ে কোনো খোঁজখবরই রাখতে পারি না। কোথায় কিভাবে কাজ হচ্ছে তাও বলতে পারব না।
টিআর কাবিখা বরাদ্দে তার হস্তক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব করার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস রয়েছেন। তিনি যাচাই বাছাই করে চ‚ড়ান্ত করেন।
সরকারি চাকরিজীবী হয়েও আওয়ামী লীগের পদে বহাল আছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও যেহেতু দলীয় সম্মেলন হয়নি তাই আমার পদটি রয়ে গেছে।
তিনি দাবি করেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমাকে অনেক ভালোবাসেন। এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। তাই এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। ফলে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
যুগান্তর