ব্যক্তিস্বার্থে মন্ত্রীর চাপিয়ে দেয়া পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতিই ঈশ্বরদী আওয়ামী লীগকে ডুবিয়েছে।

আভা ডেস্ক : পরিবারের সদস্যদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। নিজ দলের সমালোচকরা বলছেন, ব্যক্তিস্বার্থে মন্ত্রীর চাপিয়ে দেয়া পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতিই ঈশ্বরদী আওয়ামী লীগকে ডুবিয়েছে। পরিবারতন্ত্রের খাতায় মন্ত্রী নিজেই পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্ত্রী কামরুন্নাহার শরীফ ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, ছেলে তমাল শরীফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া পৌর মহিলা লীগের সভানেত্রী, জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা চান্না পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি, ছোট ভাই আনিসুর রহমান শরীফ লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান। এভাবে বলতে গেলে পরিবারতন্ত্রের তালিকা হয়তো আরও দীর্ঘ হবে।

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে এলাকাবাসী যুগান্তরকে জানান, দলীয় রাজনীতিকে এভাবে পরিবারতন্ত্রের মধ্যে কব্জা করাই শেষ কথা নয়, স্থানীয় নিয়োগ, বদলি পোস্টিং থেকে শুরু করে নানা রকম সরকারি বরাদ্দ ও ঠিকাদারি কাজে ভাগ বসানো নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এসব বিষয়ে ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও এটিই এখানকার বাস্তবতা। পাবনা-ঈশ্বরদীতে সরকারি দল আওয়ামী লীগকে এভাবে গৃহবন্দি করাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেউ কেউ ‘হিরোশিমার পোড়া মাটির’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তারা বলেন, দল কিংবা প্রশাসনের যে কেউ তদন্তে এলে আরও বেশি তথ্য জানতে পারবেন। কীভাবে আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলকে ক্ষমতা ও আর পরিবারতন্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে তার প্রমাণ তুলে আনতে বেশি বেগ পেতে হবে না। অভয় দিলে দলের নেতাকর্মীরাই মুখ খুলবেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, মূলত এসব কারণেই এবার পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসন নিয়ে জনমনে কৌতূহল বেশি। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এ পর্যন্ত অনেকবার সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম হয়েছে ঈশ্বরদী। দেশের একমাত্র ও মেগা প্রকল্প হিসেবে খ্যাত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকেন্দ্রিক কাজ বন্ধের একাধিক ঘটনা, পাঁচটি রাজনৈতিক খুন, শতাধিক দলীয় নেতাকর্মীর নামে মামলা, ১১ জন কর্মীর পঙ্গুত্ববরণের মতো ঘটনায় দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী এখন চরম অভিমানে রাজনীতি থেকে দূরে সরে আছেন।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা কমিটির উপদেষ্টা সাবেক এমপি পাঞ্জাব বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি তো পাবনা-৪ আসনকে বলি ‘হিরোশিমার পোড়া মাটি’। এই মাটি আবার ওলট-পালট করে চাষ ও ফসল উৎপাদনের উপযোগী করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ায় জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা একেবারে সাংঘর্ষিক। এখন এখানে দলীয় কোনো শৃঙ্খলা নেই। এ ছাড়া বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি জনগণ আস্থাশীল নয়।’ মনোনয়নপ্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘আমরা নৌকার জন্য কাজ করব। তবে ভূমিমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের লাগামছাড়া কর্মকাণ্ডে মন্ত্রী নিজেই এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলা, পাঁচটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, অনেকের পঙ্গুত্ববরণে কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ রয়েছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী আ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু বলেন, পরিবারতন্ত্রের কারণে বর্তমান মন্ত্রী ও জেলা কমিটির সভাপতি জনসমর্থন হারিয়েছেন। একই ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রকৌশলী আবদুল আলিম ও মিজানুর রহমান স্বপন। জানা গেছে, ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সংকট কাটছে না। ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রকি, আলম হত্যা মামলায় উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব সরকারসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারীদের অবস্থান অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।

দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের অনেকে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, গত তিন বছরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজ দলের কর্মী হত্যা থেকে শুরু করে হাট-ঘাট-মাঠ দখল ও আর্থিক সুবিধার জায়গাগুলোয় আধিপত্য বিস্তারে বলপ্রয়োগের ঘটনা এখানে দলকে জনগণের কাছ থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের ছেলে তমাল শরীফ দু’বার গ্রেফতার ও কারাগারে যাওয়ার ঘটনা দলকে বিব্রত করেছে। এ রকম নানা কারণে এবার আওয়ামী লীগের পাবনা জেলার রাজনীতি নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যখন পাবনা-৪ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা চলছে তখন ভূমিমন্ত্রীর মনোনয়ন পাওয়া নিয়েই খোদ দলের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, ভূমিমন্ত্রীর ছেলে শিরহান শরীফ তমাল সাংবাদিক পেটানোর মামলায় গত ১৩ ডিসেম্বর পাবনা আমলি আদালতে জামিন নিতে গেলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সাংবাদিক লাঞ্ছিতের এ ঘটনা দেশজুড়ে সমালোচিত হয়। এর আগে গত বছর ১৮ মে তমাল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যুবায়ের বিশ্বাসের বাবা আতিয়ার রহমান বিশ্বাস বাদী হয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমালসহ ৩২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। এ মামলায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের ১১ জন গ্রেফতার হয়। এ ছাড়া কলেজ রোডের আজমল হক বিশ্বাস তার বাড়িতে গত ১৮ মে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় একটি মামলা করেন। এ মামলায়ও আসামি রয়েছেন ১৯ জন। উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে সোমবার রাতে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের সঙ্গে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
যুগান্তর

Next Post

উন্নয়নের জন্যই মানুষ নৌকায় ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

মঙ্গল জুলাই ২৪ , ২০১৮
ava desk : উন্নয়নের জন্যই মানুষ নৌকায় ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি বলেন, নগরবাসীর সেবা প্রদানে সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তার আমলে নগরীতে করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ‘কসমেটিক’ ও লোক দেখানো উন্নয়ন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links