আভা ডেস্কঃ ‘বিশ্ব বাঘ দিবস-২০১৯’ আজ। ‘বাঘ সুরক্ষায় শপথ করি, সুন্দরবন রক্ষা করি- স্লোগান সামনে রেখে ১৩টি দেশে একযোগে দিবসটি পালিত হবে। তবে বাংলাদেশে বাঘ দিবস পালন করা হবে ৩১ জুলাই।
এ উপলক্ষে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার তথা বন বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে চার বছরে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪টিতে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালের জরিপে ১০৬টি বাঘ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ চার বছরে বাঘ বেড়েছে মাত্র ৮টি।
বন বিভাগ জানিয়েছে সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাইগার সেফটি জোনিং পদ্ধতির মাধ্যমে সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে সর্বশেষ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যেই সুন্দরবনে বাঘের ক্যারিং ক্যাপাসিটির পরিমিত সংখ্যায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
সুন্দরবনে বাঘ কমে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণগুলো রয়েছে তা হল- চোরা শিকারি চক্রের তৎপরতা, পাচার, বনাঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং কীটনাশক প্রয়োগ। লবণাক্ত ও কীটনাশকযুক্ত পানি পান করে বাঘ লিভারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড এবং গ্লোবাল টাইগার ফোরামের তথ্য মতে, বিশ্বে বাঘ রয়েছে এমন ১৩টি দেশে ১৯০০ সালে বাঘ ছিল এক লাখ। এরপর গত এক শতাব্দীতে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ৯৬ শতাংশ কমে ২০১৩-১৪ সালে দাঁড়ায় মাত্র ৩ হাজার ২০০টিতে।
একই ভাবে সুন্দরবনে ২০১০ সালের জরিপে সাড়ে চারশ’ বাঘ থাকলেও ২০১৩-১৪ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কমে মাত্র ১০৬টিতে দাঁড়ায়। তবে সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষের দিকে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে এবং ২০১৮ সালের প্রধমার্ধে খুলনা ও বাগেরহাট রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে জরিপের ফলাফলে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি বলে জানা যায়।
জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, বাঘের প্রধানতম আশ্রয়স্থল সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে প্রকল্পভিত্তিক কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও তা কোনো ভাবে কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকা রাখছে না। তাই ভবিষ্যতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের প্রাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিলুপ্তি রোধে দীর্ঘমেয়াদি ও গবেষণাভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুল ইসলাম জানান, চোরা শিকারী চক্রের তৎপরতা, পাচার, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বনাঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং পানিতে কীটনাশক প্রয়োগে মাছ শিকারের প্রবণতা রয়েছে। আর এই লবণাক্ত ও কীটনাশকযুক্ত পানি পান করে লিভারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বাঘ। ফলে বাঘের অস্তিত্ব ও প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে।
খুলনা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও মো. মোদিনুল আহসান জানান, ২০১৫ সালের বাঘ জরিপের পর চার বছরে সুন্দরবনে বাঘের প্রাকৃতিক আবাসস্থল সুরক্ষা, অবৈধ শিকার ও হত্যা বন্ধে জিরো পোচিং থিওরি গ্রহণ, বাঘের বিভিন্ন হটস্পটগুলোতে যথাযথ মনিটরিং এবং টাইগার প্রজেক্ট বাস্তবায়নসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪টি হয়েছে।
খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন- বন বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাঘের আবাসস্থল ও প্রজনন পরিবেশের উন্নয়নে টাইগার সেফটি জোনিং পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে সর্বশেষ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের ক্যারিং ক্যাপাসিটি ২৫০-এর টার্গেট অর্জন সম্ভব।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে রাশিয়া টাইগার সামিট ও ২০১৪ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাঘসমৃদ্ধ ১৩টি দেশ ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুগান্তর