আভা ডেস্ক : কথিত গুপ্তধনের খোঁজে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের সেই বাড়িতে খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত রাখা হয়েছে। রোববার সেখানে কোনো খননকাজ চালানো হয়নি।
তবে বাড়িটিতে কোনো গুপ্তধন আছে কিনা তা জানার জন্য পুরো বাড়ি স্ক্যান করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ জন্য পেট্রোবাংলা বা ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের সাহায্য নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ধাতু স্ক্যানার দিয়ে সেখানে গুপ্তধন খোঁজার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মিরপুর থানায় করা এক সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে আধাপাকা ওই বাড়িতে শনিবার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গুপ্তধনের সন্ধানে খোঁড়াখুড়ি শুরু হয়।
প্রথম দিন ২০ জন শ্রমিক টানা ছয় ঘণ্টা কাজ করে দুটি কক্ষের প্রায় চার ফুট মাটি খুঁড়ে তোলেন।
এরপরেও কিছু না পেয়ে দিনের মত খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত করেন ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামান।
রোববার সকালে মাটি খোঁড়ার কাজ আবার শুরু করার কথা ছিল। শ্রমিকরা কোদাল শাবল নিয়ে প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন।
কিন্তু জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীরা এসে ওই বাড়ি ঘুরে দেখার পর মত বদলান ম্যাজিস্ট্রেট।
বাড়ির মালিক মনিরুল আলম বলেন, আজ পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিলেন। তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে, এটি নিয়ে ভাবছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না বলে জানান।
পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সৈয়দ মামুন মোস্তফা বলেন, গতকাল ওই বাড়ির দুটি কক্ষে সাড়ে চার ফুট গভীরে গর্ত করা হয়েছিল। আজ সেখানে যাওয়ার পর দেখা যায়, গর্ত করার পর বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আরও গর্ত করলে ধসে পড়তে পারে। তাই বাড়িটি আর গর্ত করা হয়নি।
তিনি বলেন, এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেখানে কোনো গুপ্তধন বা ধাতব আছে কি না, তা যাচাই করতে বাপেক্স বা ভূতত্ত্ব অধিদফতরের সাহায্য নেয়া হবে।
এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে শিগগিরই যোগাযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।
গুপ্তধন খোঁজার বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) কী করতে পারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির একজন বিজ্ঞানী বলেন, বাপেক্স তার অনুসন্ধানের মাধ্যমে মাটির নিচে তেল বা গ্যাস আছে কি না, সেটা বের করতে পারে। কিন্তু ধাতব দ্রব্য আছে কি না, তা নির্ণয় করতে পারে না। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের কাছে থাকতে পারে। তারা এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে।
মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসনকে জানানোর পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাড়ির মাটি খননকাজ চালানো হয়। কিছু না পাওয়ায় শনিবার বিককাল চারটার পর সেটি বন্ধ করা হয়।
এদিকে গুপ্তধন পাওয়া গেলেও এর প্রতি কোনো দাবি নেই বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিক মনিরুল আলম।
তিনি বলেন, গুপ্তধন পাওয়া গেলে সরকারি কোষাগারে জমা হোক—এটাই আমি চাই। এর প্রতি আমার কোনো দাবি নেই।
মনিরুল আলম সাংবাদিকদের জানান, সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০১০ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন। বাড়ি দেখাশোনার জন্য দুজন তত্ত্বাবধায়ক রাখা হয়।
এ ছাড়া বাড়িটির কয়েকটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়। সম্প্রতি বাড়িটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হবে জানিয়ে ভাড়াটেদের চলে যেতে বলা হয়।
এরপর ১২ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টার দিকে দুজন লোক বাড়িটিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তারা তত্ত্বাবধায়কদের ঢোকার জন্য আর্থিক প্রলোভনও দেখান। পরে তারা এই বাড়ির মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে জানান। তাদের মধ্যে আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি ছিলেন।
যুগান্তর