বাম পা নেই, তবু জীবনযুদ্ধে হার মানেনি কবির হোসেন।

আভা ডেস্ক: বাম পা নেই, বাম হাতের বগলে ধরা ক্র্যাচ, সেই হাতেই সামনের দিক থেকে ঠেলছিলেন সিএনজি স্কুটারটিকে। একটু খেয়াল করতেই বোঝা গেল, লুঙ্গির সঙ্গে নীল শার্ট পরা লোকটি-ই সিএনজিটির চালক।

প্রথম দেখায় বোঝা কষ্ট যে সিএনজিটিকে কেন ঠেলছেন তিনি। পরে বুঝলাম প্যাসেঞ্জার নামিয়েছেন মাত্র, স্পেস কম থাকায় ঘোরাতে সমস্যা, তাই গাড়ির বাইরে নামতে হয়েছে।

তার সঙ্গে আমার দেখা বসুন্ধরায়, কালের কণ্ঠ অফিসের সামনে।

এগিয়ে গেলাম, প্রশ্নের জবাবে জানালেন- চাঁদপুরের মতলবে বাড়ি। ছোটবেলায় নিজ এলাকায় গাড়িচাপা পড়েছিলেন। তবে প্রাণটা বাঁচলেও হারাতে হয় বাম পা-টা, হাঁটুর ওপর থেকে।

তো? গরীব মানুষের বাচ্চা বইলা জীবন কঠিনতর হয়ে যায়। পেট চালাতে এলাকার এক মুদি দোকানে কাজ নেন। কিন্তু বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার কবির হোসেনের জীবন তো ওই স্বল্প আয়ে চলে না! বাবা-মা’র দিকে না হয় না-ই তাকালেন।

বিকল্প খুঁজতে থাকেন। এমন অবস্থায় এক সিএনজি স্কুটার মালিকের দ্বারস্থ হন। তাকে বলে কয়ে সিএনজি চালনা শিখে নেন। এরপর একদিন বেরিয়ে পড়েন রাস্তায় প্যাসেঞ্জারের খোঁজে। ড্রাইভিং সিটের পাশে থাকে ক্র্যাচ। এভাবে চলছে গত আট বছর প্রায়।

ঢাকার ব্যস্ত রাজপথে এখন ছুটে বেড়ান যাত্রী নিয়ে গন্তব্য থেকে গন্তব্যে।

বললেন, কাটা পা-টা সিটে রেখে গাড়ি চালাতে বেশ কষ্টই হয়, স্যার! কিন্তু কী আর করা। বিকল্প তো আর কিছু নাই। তাই…

বিয়ে করেছেন, দুটি বাচ্চা আছে। বেশিরভাগ প্রশ্নের জবাবে নীরব থাকছিলেন বা দেরি করে উত্তর দিচ্ছিলেন। হয়তো কথা বলতে চাচ্ছিলেন না। তাকে একটু চঞ্চল করতে ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। বলি- যাত্রীদের গলা কাটেন কেমন?

এবার হেসে দিলেন। বললেন, না স্যার! এই তো মাত্র যাত্রী নামাইলাম। শাহজালাল বিমানবন্দরের ডমেস্টিক থেইকা তিন শ চাইছিলাম বসুন্ধরা আইতে।

তো, এটা বেশি না!

পরে দুই শ টাকায় আইলাম। আর ভাড়া তো আমরা বেশি নিতে চাই না। জমা দিতে হয় প্রায় নয় শ টাকা। এই জমাটা যদি কম দিতে হইতো…

তার তাড়া ছিল, অন্য ট্রিপ নিতে হইবো। বিদায় জানালাম। বললাম, ভাল থাকবেন।

জবাবে হেসে বললেন, আপনেও ভাল থাইকেন, আমার জন্য দোয়া কইরেন। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলেন এক পা-ওয়ালা সিএনজি চালক কবির হোসেন।

তার জন্য কষ্ট হচ্ছিল। তবে একই সঙ্গে মনটা ভালও হয়ে গেল এটা ভেবে যে- তারচেয়ে শক্তসমর্থ সুস্থ সবল নিখুঁত দেহের লোকজনও তো অনেকে ভিক্ষা করেন। কিন্তু কবির হোসেন সে ধরনের না। তবে তাকে একটু সহায়তা করতে পারলে ভাল হতো। ওই যে বলছিলেন, কাটা পা-টা সিটে রেখে গাড়ি চালাতে বেশ কষ্টই হয়! খুব ভালো হতো কোনো সামর্থ্যবান যদি একটু এগিয়ে আসতেন এই আত্মমর্যাদাশীল লোকটিকে একটু দাঁড় করিয়ে দিতে…

উৎস
কালের কণ্ঠ

Next Post

বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু, আহত ৭ জন।

মঙ্গল জুন ১২ , ২০১৮
আভা ডেস্ক: নরসিংদীতে বজ্রপাতে দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও সাতজন। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে সদর উপজেলার নলবাটা এলাকায় মেঘনা নদীতে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার আলোকবালী গ্রামের চাঁন মিয়ার […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links