বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে থাকা ভারতীয় রুপির এখন কি অবস্থা।

আভা ডেস্ক: ভারতে প্রচলিত ৫শ’ ও এক হাজার রুপির মুদ্রা বাতিল করার দেড় বছরের বেশি সময় পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত ৫০ কোটি ‘বাতিল’ রুপি পরিবর্তন করে দেয়নি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং এসব মুদ্রা আর ফেরত নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে দেশটি। ফলে ‘বাতিল’ করা ৫০ কোটি রুপি (প্রায় ৯০ কোটি টাকা) নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমতাবস্থায় ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এসব মুদ্রা পরিবর্তন করা যায় কিনা সে বিষয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সচিবকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এফআইডি সচিবকে দেয়া চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খুরশিদ বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত ৫০ কোটি রুপি ফেরত বা টাকায় পরিবর্তন করে দিতে অসম্মতি জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। এ পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের কাছে থাকা উল্লিখিত রুপি রূপান্তরের লক্ষ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের কাছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫শ’ রুপি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫০০ রুপি রয়েছে। মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে বর্ডার হাটে লেনদেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে অবৈধ বহনকারীদের কাছ থেকে আটককৃত রুপি সেখানে জমা রাখা হয়। প্রতিটি আটকের বিপরীতে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারা ২৫(১০) দি কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ধারা ২ (এস) ১৫, ১৬, ৩২ ভঙ্গের দায়ে চোরাচালানের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো এখন আদালতে বিচারাধীন।

‘বাতিল’ এসব রুপি এবং এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, ভারতীয় এসব রুপি নিয়ে একপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আরেক পক্ষ লাভবান হবে- এটা আমরা চাই না। উভয়পক্ষই যাতে লাভবান হয়, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিটি এখনও আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ভারতে ৫শ’ ও ১ হাজার রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর এসব নোট পরিবর্তনের জন্য ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ায় দেশটির সরকার। এ সময় শেষ হওয়ার আগে ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর ভারতীয় এসব বাতিল নোট ডলার বা টাকায় রূপান্তর করতে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) বরাবর আধা-সরকারিপত্র (ডিও লেটার) দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ডিও লেটারে ফজলে কবির আরবিআই গভর্নরকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া রাজস্ব আহরণের স্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের ওই চিঠি দেয়ার ১৩ মাসেরও বেশি সময় পর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে একটি জবাব দিয়েছে। এতে বলা হয়, ভারত ২০১৭ সালের ব্যাংক নোট অ্যাক্টে বিদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সংরক্ষিত বাতিলকৃত নোট পরিবর্তনের কোনো বিধান রাখা হয়নি। যে কারণে আপনার (বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর) অনুরোধ রাখা সম্ভব হয়নি।

ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ জবাব আসার পর ভল্টে রাখা ৫০ কোটি রুপি পরিবর্তনের বিষয়টি প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ভারত সরকারের ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এসব মুদ্রা পরিবর্তন করা যায় কিনা সে বিষয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয় ভারতের সঙ্গেই। বর্তমানে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বৈধ বাণিজ্য প্রায় ৭শ’ কোটি মার্কিন ডলার, স্থানীয় মুদ্রায় যা ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে অবৈধ বাণিজ্য এর প্রায় দ্বিগুণ। সীমান্ত দিয়ে ও হুন্ডির মাধ্যমে এসব অবৈধ বাণিজ্য হচ্ছে। এই অবৈধ বাণিজ্য কেন্দ্র করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় সীমান্ত ও বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় রুপি আটক করে, যা জমা রাখা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে।

যুগান্তর

Next Post

কয়লা খনির দূর্নীতির তদন্ত ১৫ দিনে শেষ করতে চাই দুদক।

সোম জুলাই ৩০ , ২০১৮
আভা ডেস্ক: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সূত্রে রোববার এমন আভাস পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চাচ্ছেন সর্বোচ্চ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে যেন এই চাঞ্চল্যকর অনিয়মের তদন্ত শেষ করা হয়। ঘটনা তদন্তের […]

এই রকম আরও খবর

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links