আভা ডেস্কঃ সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে আদালতের অনুমতি নিয়ে বাবার মোটরসাইকেলে চড়ে পরীক্ষা দিয়েছেন বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার অন্যতম আসামি নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
মঙ্গলবার ছিল চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় মিন্নির জামিন বাতিলের বিষয়ে আদেশ। একই সঙ্গে এ মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য তারিখও ছিল আজ।
এদিকে মিন্নিসহ আসামি আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, ও মো. সাগরের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলছে।
বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ডিগ্রি পরীক্ষা দিচ্ছেন মিন্নি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষ্যগ্রহণের একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আদালতের অনুমতি নিয়ে মিন্নি তার বাবার সঙ্গে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যান।
আদালত সূত্র আরো জানিয়েছেন, মামলার অন্য দুই আসামি ডিগ্রি পরীক্ষার্থী আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন এবং মো. সাগরকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে বরগুনা জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের বরগুনা জেলা কারাগারের ভেতরে পরীক্ষায় অংশ নিতে আদেশ দেন আদালত।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মিন্নির বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, মিন্নির আজ পরীক্ষা। বিষয়টি আদালতকে জানানো হলে আদালত মিন্নিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেন। তাই এ মামলার কার্যক্রম চলাকালে আদালতের অনুমতি নিয়েই মিন্নিকে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে নিয়ে যাই।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন নিহত রিফাতের দুই চাচাসহ তিনজন।
অন্যদিকে দুপুর ২টায় বরগুনার শিশু আদালতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন নিহত রিফাতের মা ডেইজি বেগম ও চাচাতো বোন নুসরাত জাহান অনন্যা।
এর আড়ে সকাল ৮টার দিকে এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আট আসামিকে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। একই সঙ্গে এ মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ আসামিকেও বরগুনার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
এ মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রিফাত হত্যা মামলার দুই সাক্ষীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৮ জানুয়ারি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিন্নির জামিন কেন বাতিল করা হবে না, এ মর্মে শোকজ করেছেন আদালত। আজ এই শোকজের উত্তর আদালতে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলামের।
মিন্নির জামিন কেন বাতিল করা হবে না, এই মর্মে আদালতের করা শোকজের বিষয়ে গত ৯ জানুয়ারি মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মিন্নির জামিন বাতিলের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যে অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অবিশ্বাসযোগ্য। মঙ্গলবার আদালতে শোকজের জবাব উপস্থাপন করবেন তিনি।
গত বছরের ২৯ আগস্ট আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেন হাইকোর্ট।
মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না- এমন রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
২০ আগস্ট হাইকোর্ট মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কেস ডকেটসহ (সিডি) আদালতে তলব করেন। পাশাপাশি আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পূর্বে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে মর্মে বরগুনার এসপির সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা চান আদালত। বুধবার আদালতের নির্দেশে বক্তব্যের লিখিত ব্যাখ্যা দেন এসপি।
উল্লেখ্য, ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পর দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
যুগান্তর