বঙ্গবন্ধুর সিলেকশনে ৭২ সালের ইউপি চেয়ারম্যানের শেষ আকুতি

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বঙ্গবন্ধুর সিলেকশনে ১৯৭২ সালে পাকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও বর্ণাঢ্য ৫৪ বছরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট পৌরসভার সেরাপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা তোরাব আলীর শেষ আকুতি জানিয়েছেন।  তিনি বার্ধক্য জনিত শারীরিক অসুস্থ ৯০ বছরের এক মুক্তিযোদ্ধা সংবাদ কর্মীদের কাছে শোনালেন তাঁর মুক্তিযুদ্ধকালীন বীরত্বের কথা এবং শোনালেন স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব থেকে শুরু করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ দশকের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর নেতৃত্বের ইতিহাস। সেই সাথে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি জীবনের শেষ চাওয়া হিসেবে তাঁর মৃত্যুর পর লাশটি যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয় সে আবেদন জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর সিলেকশনে ৭২ সালের ইউপি চেয়ারম্যানের শেষ আকুতি
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তোয়াব আলীর ছবিঃ

তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তোরাব আলী। পিতা মৃত হাজী নাসিরুদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ৩ নং পাকড়ী ইউনিয়ের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ২০০২ সাল পর্যন্ত ৫৪ বছর  এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর ছেলে আব্দুর রাকিব সরকারও এই ইউনিয়ের আওয়ামী সমর্থিত চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে এই পরিবারের ৭ জন আলহাজ মোঃ সামসুদ্দিন, কোরবান আলী, জয়নাল আবেদীন, এমরান আলী, সোলেমান আলী, ফজলুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক’কে ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাক আর্মি তুলে নিয়ে যায় এবং নির্মম অত্যাচার করে তোরাব আলীর খোঁজ জানতে চায়। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াত-বিএনপির জোট সরকারের আমলেও বারংবার চরম অত্যাচারের স্বীকার হয়েছিল তোরাব আলীর পরিবার। মামলা হামলা জড়িয়ে স্থানীয় জামায়াত বিএনপি’র করেছে নির্মম নির্যাতন।

তোরাব আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার পানিপিয়া শেখ পাড়ায় রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড চালনার ট্রেনিং নিয়েছিলেন তিনি। এর পর তিনি পাহারপুর, লালগোলা, কাঁকন হাট ও তানোর-গোদাগাড়ী এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন। সেসময় তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন তাঁদের অধিকাংশই বিগত হয়েছেন। জীবিতদের মধ্যে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী সুশিল সরেন (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯৩), বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মালেক  (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯৯) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী ঠাকুর মাঝি  (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯১)। মুক্তিযুদ্ধে ৭ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন লেঃ কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামান এবং ৪ নং সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর গিয়াস।

স্মৃতিচারণ করে তিনি আরো বলেন তৎকালীন সময়ে হেনা ভাইয়ের সঙ্গে ( শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হেনা) সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। বঙ্গবন্ধু যখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসেন তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু ডাকারের বাড়িতে উঠেছিলেন। সেই সময় মুজিব ভাইকে (বঙ্গবন্ধু) বাচ্চু ডাক্তার কাসার বড় একটি থালা উপহার দিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, হেনা ভাই আমাকে খুব ভালবাসতেন। আমি তাঁর মৃত্যুতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তাঁর জানাজায় উপস্থিত ছিলাম।

সংবাদ কর্মীদের সাথে আলাপ কালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাঁকনহাট পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও গোদাগাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম মহসিন এবং কাঁকনহাট পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবর।

তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা তোরাব আলী সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং গোদাগাড়ী-কাঁকন হাট সহ আওয়ামী লীগের একজন শক্তিশালী সংগঠক ও নেতা। এই এলাকার প্রত্যেকেই জানেন তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বা ভাতা পাওয়ার আশা বা চেষ্টা কোনদিনই করেননি বা প্রয়োজনও মনে করেননি। সেকারনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে কোন কাগজ-পত্রও সংগ্রহে রাখেননি।  তবে তিনি জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসে শুধুমাত্র তাঁর মৃত্যুর পর লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের দাবি তুলেছেন। এটি একটি যৌক্তিক দাবি বলে আমরা মনে করি। এটি করতে পারলে আমরাও মানসিক ভাবে শান্তি পাবো। আর না হলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটি একটি অপমান জনক ব্যাপার হবে।

আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য পুত্র রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি বীর মুক্তিযোদ্ধা তোরাব আলী’র শেষ ইচ্ছাটি পূরণ করা হোক।

Next Post

নন্দীগ্রামে কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন ও আনন্দ র‌্যালী

মঙ্গল মে ২৪ , ২০২২
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ “কৃষি কাজে প্রযুক্তি নন্দীগ্রামের সমৃদ্ধি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বগুড়ার নন্দীগ্রামে গত ২৪শে মে বেলা ১১টায় নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ চত্বরে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং সহযোগিতায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগ কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় কৃষি প্রযুক্তি মেলা/২০২২ উদ্বোধন, আনন্দ র‌্যালী ও আলোচনা সভা […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links