বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির নামে জুবলি ব্যাংকের শেয়ার বাজেয়াপ্তে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত দুই খুনির মালিকানাধীন জুবলি ব্যাংকের ৮৫ হাজার শেয়ার বাজেয়াপ্তে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিকে (আরজেএসসি) তাগিদ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের অভিযোগ তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফইইউ)। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকের কাছে অতিরিক্ত শেয়ার থাকার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল (অব.) আবদুর রশীদের শেয়ার বাজেয়াপ্তের বিষয়টি উচ্চ আদালতে রায়ের অপেক্ষায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

জানতে চাইলে এফআইডির সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির নামে জুবলি ব্যাংকের শেয়ার বাজেয়াপ্তে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে এর মূল দায়িত্ব হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির (আরজেএসসি)। সম্প্রতি তাদের চিঠিও দেয়া হয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা আমার জানা নেই।

জানা গেছে, শেয়ার বাজেয়াপ্ত ইস্যুর বাইরে জুবলি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এক পরিচালকের অতিরিক্ত ৭২ হাজার শেয়ার সরকারের দখলে নেয়া হচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অমান্য করে তারা অতিরিক্ত শেয়ার ধরে রেখেছেন। ফলে বাড়তি শেয়ার সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনির নামে কুষ্টিয়ার জুবলি ব্যাংকের ৮৫ হাজার শেয়ার ছিল। ১৯৮৫ সালে ব্যাংকটির ২৫ টাকা মূল্যমানের ৮৫ হাজার শেয়ারের মালিক হন তারা। বর্তমানে চার লাখ শেয়ার নিয়ে কুষ্টিয়ার খোকসায় একটি মাত্র শাখার মাধ্যমে সীমিত পরিসরে ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে।

জুবলি ব্যাংকের শেয়ার থাকার তথ্য ফাঁস হলে বাজেয়াপ্তের বিষয়টি সামনে আসে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসআইসি) চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত না থাকায় শেয়ার বাজেয়াপ্তে অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন আরজেএসসির কাছে নিয়মিত একটি কোম্পানি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্যাংকটি। ফলে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির শেয়ার বাজেয়াপ্তের দায়িত্ব পড়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। একপর্যায়ে খুনিদের শেয়ার বাজেয়াপ্তে আদালতের দ্বারস্থ হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায়। এর আগ পর্যন্ত দুই খুনির শেয়ার হস্তান্তরে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ১৪ক ধারা মতে, একজন শেয়ার হোল্ডার ব্যাংকের মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি ধারণ করতে পারেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, জুবলি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এমবিআই মুন্সির নামে ৭৭ হাজার ১৮৫ শেয়ার এবং শেয়ার হোল্ডার কেএম রশিদের কাছে রয়েছে ৭৫ হাজার শেয়ার। নিয়মানুযায়ী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ ৪০ হাজার, শেয়ার হোল্ডার সর্বোচ্চ ৪০ হাজার শেয়ারের মালিক হতে পারেন।

সূত্র মতে, বর্তমান জুবলি ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের ফেসমূল্য ২৫ টাকা। সে হিসাবে কেএ রশিদের নামে ধারণকৃত অতিরিক্ত শেয়ারের ফেসমূল্য হচ্ছে আট লাখ ৭৫ হাজার। একইভাবে ব্যারিষ্টার এমবিআই মুন্সির অতিরিক্ত শেয়ার ফেসমূল্য ৯ লাখ ২৯ হাজার ৬২৫ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় কোম্পানি আইন-১৮৮২-এর অধীন কুষ্টিয়ার খোকসায় ১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে জুবলি ব্যাংক। ১৯৮৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্বর্ণ বন্ধকীর বিপরীতে ব্যবসা পরিচালনার সীমাবদ্ধতা রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পায় ব্যাংকটি। জুবলি ব্যাংকে স্বর্ণ বন্ধক নেয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প ও চাষীদের সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার ক্ষমতা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৯৮৫ সালের ১ ডিসেম্বর ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সময়ই ব্যাংকটির ২৫ টাকা মূল্যমানের ৮৫ হাজার শেয়ারের মালিক হন বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি ফারুক ও রশীদ। পরে লোকসানের মুখে পড়লে ব্যাংকটির কার্যক্রম আর বাড়ানো হয়নি।
যুগান্তর

Next Post

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংলাপের আহ্বান জানালে কোনো শর্ত ছাড়াই সাড়া দিতে প্রস্তুত বিএনপি।

বুধ আগস্ট ১৫ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংলাপের আহ্বান জানালে কোনো শর্ত ছাড়াই সাড়া দিতে প্রস্তুত বিএনপি। তবে এ আহ্বান কোনো সভা-সমাবেশে বক্তব্যের মাধ্যমে নয়, সেটি হতে হবে আনুষ্ঠানিকভাবে। সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মুলতবি সভায় সর্বসম্মতভাবে এমন মত পোষণ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links