বগুড়া থেকে সারা দেশের যানবাহন চলাচল বন্ধ

আভা ডেস্কঃ বগুড়া থেকে সারা দেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। পরিবহন ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম ওরফে মোহনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মালিক-শ্রমিক যৌথ কমিটির ডাকে বুধবার সকাল ছয়টা থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সব রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ আছে।

এদিকে বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের কর্তৃত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশকে ছুরিকাহতের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে।

বগুড়া টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো বাস আজ ছেড়ে যাচ্ছে না। তবে বগুড়া হয়ে উত্তরবঙ্গের অন্য জেলার দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে চলাচলকারী উত্তরবঙ্গ-রাজশাহী এবং উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ রুটে বাস চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।

তিনটি মামলার মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে করা একটি মামলাসহ দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলমকে। অন্য আরেকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামকে। তিনি বগুড়া সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মোটর মালিক গ্রুপের সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ূন কবির বলেন, মঙ্গলবার বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামের কার্যালয় এবং তাঁর মালিকানায় চলাচলকারী শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল।

এ ছাড়া মঞ্জুরুল আলমের মালিকানাধীন একটি পেট্রলপাম্পে হামলা ও কয়েকটি বাস ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়। এ সময় জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীর ওপর হামলা করে তাঁকে ছুরিকাহত করা হয়।

ওসি বলেন, গতকালের ওই সংঘাতের ঘটনায় রাতেই বগুড়া সদর থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মঞ্জুরুল আলমসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে মঞ্জুরুল আলমের ছোট ভাই মশিউল আলম বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা করেছেন। এই মামলায় আমিনুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩৩ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

ওসি জানান, পুলিশ কনস্টেবল রমজান আলীর ওপর হামলা ও ছুরিকাহতের ঘটনায় করা আরেকটি মামলার বাদী বগুড়া শহরের উপশহর ফাঁড়ির পরিদর্শক নান্নু মিয়া। এই মামলায় মঞ্জুরুল আলম ছাড়াও যুবলীগের আরও পাঁচ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে প্রধান আসামি করা হয়েছে বগুড়া শহর যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া আদিলকে (৩৬)। মামলার অন্য আসামিরা হলেন যুবলীগ কর্মী রবিউল ইসলাম ওরফে ছোট লিটন (৩৫), বগুড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির (৪০), ১৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম (৩৬) ও যুবলীগ কর্মী শিবলু সাদিক (২৫)।

পরিবহন ধর্মঘট

গতকালের ঘটনার জেরে আজ ভোর থেকে বগুড়ার সঙ্গে সারা দেশের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক যৌথ কমিটি। গতকাল বিকেল পাঁচটায় চারমাথা এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আজ ভোর থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেন মালিক-শ্রমিক যৌথ কমিটির জেলা সভাপতি ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন, মঞ্জুরুলকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত বগুড়ার মালিক-শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করবেন। কোনো গাড়ি চলবে না।

সকাল থেকে শহরের ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে। এ ছাড়া বগুড়া শহর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় চলাচলকারী বাসও চলেনি। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন যাত্রীরা।

শহরের সাতমাথা থেকে শেরপুরের উদ্দেশে করতোয়া গেটলক বাসের অপেক্ষায় থাকা চাকরিজীবী নুসরাত জাহান বলেন, ‘সকাল আটটা থেকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। করতোয়া গেটলক বাসের দেখা নেই। কীভাবে গন্তব্যে যাব, বুঝতে পারছি না।

শেরপুর ট্রাফিক ফাঁড়ির পরিদর্শক গোলাম ইয়াজদানি বলেন, ভোর থেকে শেরপুর-বগুড়া রুটে করতোয়া গেটলকসহ অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল করছে না।

মোকামতলা ট্রাফিক ফাঁড়ির সার্জেন্ট তরিকুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে বগুড়া, রংপুর বিভাগের বাস চলাচল করছে না। এ ছাড়া রংপুর বিভাগ থেকে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও দক্ষিণবঙ্গের বাস চলাচলও সীমিত। মাঝেমধ্যে দু-একটি বাস দেখা যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপে দুটি পক্ষ আছে। এর একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম ওরফে মোহন। তিনি মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক। আরেক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহ আকতারুজ্জামান।

তিনি মোটর মালিক গ্রুপের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি। তাঁর পক্ষে আছেন সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম। তিনি মোটর মালিক গ্রুপের সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এই কমিটি নিয়ে হাইকোর্টে একাধিক মামলা হয়।

গতকাল মঞ্জুরুল আলম সদলবলে মোটর মালিক গ্রুপের চারমাথা টার্মিনাল কার্যালয়ে গেলে আমিনুল ইসলামের সমর্থকেরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Next Post

প্রথমবারের মতো পুলিশে দুটি হেলিকপ্টার সংযোজন

বুধ ফেব্রু. ১০ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশে নতুন হেলিকপ্টার সংযোজন হওয়ায় জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং রাশিয়া পরস্পর পরীক্ষিত বন্ধু ও বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links