ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর ২৫ বছর ধরে সরকারি চাকরি করছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক ।

আভা ডেস্কঃ ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর ২৫ বছর ধরে সরকারি চাকরি করছেন তিনি। দীর্ঘ সময় মামলা চলাকালীন চাকরিতে নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন। বছর মামলার রায়ে সাজা হলে ২৪ দিন কারাবাসও করেন। কারাবাসের সময়টা বৈধ করতে নিয়েছেন অর্জিত ছুটি

এসব তথ্য আড়াল করে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. নূরুল ইসলাম। স্বাস্থ্য পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে সম্প্রতি বিষয়টি জানান ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান

১১ নভেম্বর সচিবকে এক স্মারকে তিনি জানান, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. নূরুল ইসলামেরর বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালের ২৮ জুলাই রাজবাড়ী জেলা দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা হয়। মামলটি করেন তৎকালীন ফরিদপুরের ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া

জজকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মো. নূরুল ইসলাম সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে আপিল করেন। বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট তাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন প্রদান করেন।

নূরুল ইসলামের চাকরিতে বহাল থাকার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। তিনি সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার নজর এড়িয়ে গেছে। সরকারি আইন অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার কথা। সচিব বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. নূরুল ইসলাম সরকারি চাকরিতে যোগদনের আগেমেসার্স সেল্টন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড’- মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন

সময় মানবহির্ভূত ওষুধসোডিয়াম সাসপেনশন’ (এন্টাসিড, ব্যাচ নং) উৎপাদন বাজারজাত করায় তার বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালের ২৮ জুলাই রাজবাড়ী জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন ফরিদপুরের তৎকালীন ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া। যিনি পরবর্তী সময়ে অধিদফতরের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন

দীর্ঘ ২৭ বছর মামলা চলমান থাকার পর ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২এর ১৭ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত ২০১৯ সালের মার্চ মামলার রায় প্রদান করেন

রায়ে তাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। মামলায় অভিযুক্ত আসামিকে পলাতক হিসেবে চিহ্নিত করায় আদালতের রায়ে আসামির বিরুদ্ধে সাজা গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, প্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর মো. নূরুল ইসলাম ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন

সময় তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং তিনি ২৪ দিন কারাবাস করে উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন লাভ করেন। তবে দীর্ঘদিনের মামলা, মামলার রায় কারাবাসের বিষয়টি গোপন করে নূরুল ইসলাম সুকৌশলে অধিদফতরে ছুটির আবেদন করেন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২ আগস্ট ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক বরাবর ২১ দিনের অর্জিত ছুটির আবেদন করেন নূরুল ইসলাম। সেখানে তিনি পারিবারিক প্রয়োজনে ২৫ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১ দিনের অর্জিত ছুটির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ছুটি মঞ্জুরের অনুরোধ জানান

এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি মহাপরিচালক বরাবর আরেকটি আবেদন করেন। সেখানে উল্লেখ করেন, ইতিপূর্বে পারিবারিক বিশেষ প্রয়োজনে ২১ দিনের অর্জিত ছুটি মঞ্জুরের আবেদন করি। কিন্তু পারিবারিক কার্যাদি সম্পাদিত না হওয়ায় যথাসময়ে কার্যালয়ে যোগদান করতে পারিনি। তাই ১৮ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে যোগদান করলাম

এর পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর ২৪ দিনের অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করতে আবেদন করেন। আবেদনটির সঙ্গে ঔষধ প্রশাসনের আরেক পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নায়ার সুলতানা একটি সুপারিশ প্রদান করেন। এরপর অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে তার ছুটি মঞ্জুর করা হয়

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানান, সরকারি চাকরি শুরুর আগে থেকেই নূরুল ইসলাম রাষ্ট্রের সঙ্গে, সরকারের সঙ্গে দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেছেন, যা আড়াই দশক ধরে চলমান। তিনি ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন

মানহীন ওষুধ উৎপাদন বাজারজাত করার দায়ে যার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে মামলা হয়েছে, তার অপরাধ গোপন করে নিরাপদে রাখতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা সহায়তা করে আসছেন

এমনকি মানহীন ওষুধ উৎপাদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই অধিদফতরের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি’ (মান নিয়ন্ত্রণ) (ডিটিএল) ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির’ (এনসিএল) ডেপুটি চিফ এবং ডিটিএলের আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব প্রদান করা হয়

প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগ সৃজন পুনর্গঠন, একীকরণ, সংযুক্ত এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীগণের নিয়োগ তাহাদের কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ নিয়ন্ত্রণ এবং এতৎসংক্রান্ত বিদ্যমান সংহতকরণকল্পে প্রণীত আইন ২০১৮’-এর একাদশ অধ্যায়ে সরকারি কর্মচারীর ফৌজদারি অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা এক বছর মেয়াদের অধিক মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, উক্ত দণ্ড আরোপের রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত হইবেন।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. নূরুল ইসলাম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, মামলাটি অনেক আগে হয়েছে। যখন মামলা হয়েছে, তখন আমি অবগত ছিলাম না। বিষয়ে আর কিছু বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি তিনি

যুগান্তর

Next Post

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেওয়া ১০৪ প্রার্থী চাকুরীতে যোগ দিতে পারছেন না ।

মঙ্গল ডিসে. ২৪ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ পেয়েও ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) মুক্তিযোদ্ধা কোটার ১০৪ প্রার্থী চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। তাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে এ সংক্রান্ত উপকমিটি প্রতিবেদন দিলেও তা আমলে নেয়নি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের তথ্য-উপাত্ত ৬ ও ৮ জানুয়ারি আবারও […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links