ফেলানীর পথে ১১ বছরে আরও দুই ডজন

আভা ডেস্কঃ সীমান্তে বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যার ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ ৭ জানুয়ারি। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। হত্যার পর তারকাঁটায় ঝুলে ছিল ফেলানীর দেহ।

এই হত্যাকাণ্ডের পর ভারত আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়লেও সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হওয়া বন্ধ হয়নি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে গত ১১ বছরে শুধু কুড়িগ্রাম সীমান্তেই দুই ডজন বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিক নিহত হন।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নূর ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের আসাম রাজ্যের বোয়াইলপাড়া জেলার বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। কিশোরী ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। বিয়ের উদ্দেশ্যে বাবার সঙ্গে ভারত থেকে দেশে আসছিল সে। ওই দিন শুক্রবার সকাল ৬টায় ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর সীমান্তের কাঁটাতার মই দিয়ে পার হচ্ছিল তারা। বিএসএফ সদস্যরা টের পেয়ে গুলি চালান।

ফেলানীর বাবা বাংলাদেশ অভ্যন্তরে নেমে পড়ায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান, কিন্তু মইয়ের ওপরই গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে উল্টোভাবে ঝুলে পড়ে থাকে ফেলানী। প্রায় আধা ঘণ্টা ছটফট করে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সকাল পৌনে ৭টা থেকে তার নিথর দেহ কাঁটাতারের ওপর ওভাবেই ঝুলে থাকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা।

করুণ এই দৃশ্য সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এরপর বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফের বিশেষ কোর্টে দুই দফায় রায়ে খালাস পান অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ।

এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সহযোগিতায় দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, কিন্তু এখনও সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে হতাশ ফেলানীর পরিবার।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা ও মামা।

পরের মাসে ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন এই বিশেষ কোর্ট। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা।

পরের বছর ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এই আদালতে আবার আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষ বেকসুর খালাস পান।

এ রায়েও সন্তুষ্ট হতে না পেরে ওই বছরের ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছরের ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ঠিক হলেও তা হয়নি এখনও।

নূর ইসলাম বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই মেয়েকে হত্যা করেছে বিএসএফের অমিয় ঘোষ, কিন্তু আমি আজও ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার পাইনি।’

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘ফেলানীকে ওর খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ভারত থেকে আনা হচ্ছিল, কিন্তু বিএসএফের গুলিতে আমার মেয়ে কনের সাজে না সেজে সাদা কাপড়ে সেজে দুনিয়া থেকে চলে গেল। আমার মেয়ের মুখটিও শেষ দেখা দেখতে পারিনি। মা হিসেবে যে কী কষ্ট বোঝাতে পারব না। গুলি লেগে কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। পানি পানি করে চিৎকার করলেও আমার ফেলানীর মুখে পানি পড়েনি। আমি খুনি অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই। তাইলে আমার আর ফেলানীর আত্মা শান্তি পাবে।’

জেলার সীমান্তে এখনও বিএসএফের হামলার শিকার হয়ে অনেকেই নিহত হচ্ছেন। কেউবা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জনের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পর ১১ বছরে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্তে ২৫ বাংলাদেশি-ভারতীয় নিহত হন। আহত হন অনেকেই।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘ফেলানীর রক্ত বৃথা যায়নি। এ হত্যার আগে সীমান্তে ট্রিগার ফ্রি ছিল। এখন বিএসএফ গুলি করলে জবাবদিহির মুখে পড়ে। আগে যেমন নিত্য খুন-খারাবি ছিল, সেটা কমে এসেছে। এটা একটা আমাদের প্রাপ্তির জায়গা বলে মনে করি। কিন্তু ফেলানী হত্যায় ন্যায়বিচার পাইনি। আমরা সেটার অপেক্ষায় আছি।’

Next Post

মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও শ্রমবাজার খোঁজার তাগিদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

শুক্র জানু. ৭ , ২০২২
আভা ডেস্কঃ পরিচিত শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে বিদেশে যেতে আগ্রহীদের জন্য নতুন নতুন গন্তব্য খুঁজতে বাংলাদেশি মিশনগুলোকে তাগিদ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের মিশনগুলোর দায়িত্ব হবে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং সেখানে আমাদের শ্রমশক্তি […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links