প্রেম করতে গভীর রাতে প্রেমীকার সাথে দেখা করতে গিয়ে জনতার হাতে অবরুদ্ধ হয় প্রেমীক ও প্রেমীকের দুই সহযোগী বন্ধু। অত:পর গ্রামবাসী ও পুলিশের সাথে বাধে বিরাট তুলকালাম কান্ড।

পুঠিয়া প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর পুঠিয়ায় গভীর রাতে প্রেমীকার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে আটক প্রেমিক হায়দার আলী সহ সহযোগী দুই জনের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষন মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে প্রেমিকা কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে পুঠিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এদিকে এলাকাবাসীর কাছে আটক প্রেমীক তার সহযোগীদের উদ্ধার করে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে এবং ওই কিশোরীর মেডিকেল পরীক্ষার জন্য রামেক হাসোতালে প্রেরন করেছে পুলিশ।

গ্রামবাসীর হাতে আটক প্রেমিক হায়দার আলী (২৪) জিউপাড়া ইউনিয়নের ধোপাপাড়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে ও রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং প্রেমিকা কিশোরী ভালুকগাছি গ্রামের হারোগাথি গ্রামের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে (১৩)। এছাড়াও হায়দার আলীর দুই সহযোগী বন্ধু নাদিম মোস্তফা এবং রবিন হোসেন তাদের প্রতিবেশি বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার অফিসার ইনচার্জ সাকিল উদ্দিন আহম্মেদ।

জানা গেছে, গত রোববার রাত সাড়ে ১১ টায় উপজেলার হারোগাতি গ্রামে কিশোরী প্রেমিকার সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে ধরা পড়েন প্রেমিকসহ তার দুই সহযোগী। পরে ভোর রাতে থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে গেলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশকে বাঁধা দেয় এলাকাবাসী। এসময় বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী প্রায় ৪ ঘন্টা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখা ছাড়াও পুলিশের ভ্যানের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়া ও এক নারী কন্সটেবলকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠে। পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে গ্রামবাসীকে ছত্রভঙ্গ করে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্য, আটক প্রেমিক ও তার সহযোগী এবং প্রেমিকা তরুনীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় একজন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এছাড়াও পুলিশের লাঠির আঘাতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন আহত হয়েছে। ঘটনার পর ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিলো সকাল থেকেই গ্রামের মানুষ সবাই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুঠিয়া সার্কেল) আবুল কালাম সাহেদ, থানার অফিসার ইনচার্জ সাকিল উদ্দিন আহম্মেদ, তদন্ত মুহিনুল ইসলাম ভালুকগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাকবীর হাসান উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরির পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ভালুকগাছি ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য আবদুস সাত্তার জানান, হায়দারের সঙ্গে ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এরই সুত্র ধরে রোববার রাত ১১ টার দিকে হায়দার আলী ও তার দুই সহযোগী হারোগাথি গ্রামে ঘুড়াঘুড়ি করছিলো। তাদের দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে কিশোরির মামাতো ভাই মিলন কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে তাদের ফলো করেন। এক সময় প্রেমিক হায়দার আলীর দুইজন বন্ধুকে দেখা গেলেও তাকে না পেয়ে মিলন ও প্রতিবেশি কয়েকজন তার বোনের ঘরের সামনে ওত পেতে থাকে। প্রায় আধাঘন্টা পর হায়দার আলী তার বোনের ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মাত্র তাদের আটক করে। এসময় তাদের তিন জনকে গণধোলাই দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পরিবারের কাছে খবর দেয়। পরিবারের লোকজন এসে ঘটনাটি সকালে মিমাংশা করার কথা বলে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যেতে চাইলে এলাকাবাসী এতে রাজি না হওয়ায় অভিযুক্তদের রেখেই তারা চলে যায়।

আবদুস সাত্তার আরো জানান, তারা চলে গেলেও ভোর রাতে থানা থেকে পুলিশ এসে কিশোরিকে বাদ দিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে গ্রামবাসি বাঁধা দেন। এসময় গ্রামের দুটি মসজিদের মাইকে, কে বা কাহারা ঘোষণা দেয় “ধোপাপাড়া বাজারের সন্ত্রাসী বাহীনিরা আটককৃত আসামীদের ছিনিয়ে নিতে এসেছেন আপনারা তাদের প্রতিহত করুন” ঘোষনার পরপরই গ্রামের মানুষ বেড়িয়ে এসে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে পুলিশ এসেছে ভেবে বিক্ষুদ্ধ জনতা পুলিশের গাড়ীর চাকার হাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দেয়। পরে সকালে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে সকলকে ছত্রভঙ্গ করে অভিযুক্তদের ও কিশোরিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের লাঠির আঘাতে গ্রামের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যাক্তি আহত হয়েছে। এসময় ওই গ্রামের আলেয়া বেগম নামের এক নারীকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।

তবে কে কে মাইকে ঘোষণা দিয়েছেন সে ব্যপারে তিনি কিছুই জানাতে পারেনি। ঘোষণা দেয়া মসজিদের ইমাম মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমি সেহেরি খেয়ে নামাজ শেষ করে আমার রুমে ঘুমাতে যাই। তবে সে সময় মসজিদের দরজা খোলা ছিলো এ সুযোগে কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে এসে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়েছে বলে শুনেছি তবে তাদের তিনি চিনতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম আলী জানান, পুলিশের লাঠির আঘাতে গ্রামের অনেক মানুষ আহত হয়েছে তারা বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। গ্রামের পুরুষ মানুষ সবাই আতঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। মহিলা মানুষ থাকলেও কেও বাইরে বের হচ্ছে না।

অবরুদ্ধ থাকার পর উদ্ধার পুঠিয়া থানার এএসআই নিলকান্ত জানান, আমি খবর পেয়ে ভোর রাতে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসতে চাইলে গ্রামবাসী বাঁধা দেয়। তারা বলেন এখানে এদের বিচার করে তার পর নিয়ে যেতে হবে। এসময় তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে কয়েকজন নারী উত্তেজিত হয়ে আমাদের এক নারী কন্সটেবলকে লাঞ্চিত করেছে। এছাড়াও আমাদের পুলিশ ভ্যানের চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।

থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি সাকিল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়েছে। দুপুরে এ ব্যপারে কিশোরির বাবা বাদী হয়ে ধর্ষনের মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে প্রধান আসামী হায়দার আলী ও তার দুই সহযোগীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কিশোরির মেডিকেল পরিক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ায় আরেকটি মামলা হতে পারে বলেও জানান তিনি।

এস /এল

Next Post

অজ্ঞান ও মলম পার্টির অপতৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে র‌্যাব-৫। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে র‍্যাবের তিনস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনিতে থাকবে র‍্যাব-৫।

মঙ্গল মে ২৮ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আসন্ন ঈদুল ফিতর উদযাপনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ ও ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন এবং নিরাপদ করতে রাজশাহীতে র‌্যাবের তিনস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার (২৭ মে) দুপুরে রাজশাহী বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনে ঈদকালীন মহড়া পরিচালনা করে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা। পরে রেলওয়ে […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links