পুলিশের সামনেই তাদের দেদারসে মার দিচ্ছে- দেখা গেল টিভি ক্যামেরায়।

ava desk : গণভবনে অনুষ্ঠিত চারবারের আওয়ামী লীগ বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে, ‘দেশের কল্যাণে যা-কিছু প্রয়োজন তাই করবো।’

এ ঘটনার পরই দেখা গেল তার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের শ্বেতসন্ত্রাস চালানোর নমুনা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সরকারপক্ষীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা কয়েকদিন ধরে মারপিট করে চলেছে, এমনকি পুলিশের সামনেই তাদের দেদারসে মার দিচ্ছে- দেখা গেল টিভি ক্যামেরায়।

ইতিমধ্যে মাসাধিককাল ধরে মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রায় পৌনে দু’শ (বা তারও বেশি) কথিত ‘মাদক-চোরাকারবারি’ নিহত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমপি আবদুর রহমান বদি এবং এক কুখ্যাত চোরাকারবারি ও তাদের সহযোগী মাদক গডফাদারদের ধরার চেষ্টাই করছে না সরকার।

হাজার পঁচিশেক খুচরা চোরাকারবারিকে ধরা হয়েছে, আবার তারা সবাই জামিন পেয়ে বেরিয়েও যাচ্ছে। বিচারের আওতায় এনে সঠিক পন্থায় বিচার কাজ সম্পাদনও সম্ভব হচ্ছে না- দুর্বল পুলিশি ব্যবস্থাপনা এবং দুর্বল বিচার ব্যবস্থার কারণে।

জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দুনিয়াব্যাপী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও দেশীয় রাজনৈতিক দলসহ নানা সংগঠন-প্রতিষ্ঠান এবং বিশিষ্ট নাগরিকরাও এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে তা বন্ধ করা এবং ‘বন্দুকযুদ্ধের নিহতদের’ ঘটনাগুলোর তদন্ত অনুষ্ঠান করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মাদক নির্মূলের নামে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের বিরোধিতা করে তার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এই বলে- ‘মাদক নির্মূল করতে গেলে এ ধরনের ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।’

এদিকে বিএনপিকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা বা ‘ভয় দেখিয়ে হতাশাগ্রস্ত করার মতলবে’ তার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। তার জামিন নিয়ে যেসব কাণ্ডকারখানা সরকারপক্ষ করে চলেছে তাতে এটা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান যে, মামলাটিকে রাজনীতিকীকরণ করা হচ্ছে।

যে ধরনের মামলায় হরদম জামিনপ্রাপ্তির পুরনো নজির রয়েছে, সেই ধরনের মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না কেন? তাছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও সরকারপক্ষ টালাবাহানা করে চলেছে, বিশেষায়িত হাসপাতালে তার ইচ্ছেমতো চিকিৎসা নিতে না পারাটা কতটা অমানবিকতা সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা সেটা পাওয়ার দাবিদার নিঃসন্দেহে।

এখন অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে- সরকার বিএনপিপ্রধানকে সহজে জেলের বাইরে আসতে দেবে না, ‘গায়ের জোরে’ তাকে কারাবন্দি রাখার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত রাখবে, বিএনপিকে ব্ল্যাকমেইল করে কিছু বাড়তি রাজনৈতিক সুবিধা আদায়, কিছু মতলব হাসিল করার জন্য।

সরকারসমর্থক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেমেছে পাকিস্তান আমলের মোনেম খাঁর গুণ্ডাবাহিনী এনএসএফ (তথাকথিত ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন) কায়দায়। বরং বলা চলে, তার চেয়েও নৃশংসতার সঙ্গে।

আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ- এসব সরকারি সংগঠনের প্রবল শক্তিধর নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশই চাঁদাবাজি, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হওয়া এবং মারামারি, হানাহানি, প্রতিপক্ষের ওপরে হামলা, মামলা ইত্যাদি দিয়ে নিজেদের ক্ষমতাবান করে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে একটা ‘শ্বেতসন্ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম রাখতে আগ্রহী।

এ সরকারের ১০ বছরের রাজত্বে এসব সন্ত্রাসী তৎপরতায় সরকারপক্ষীয় কর্মী মারা পড়েছে কমপক্ষে তিনশ’। আর আহত হয়েছে অগণিত। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন- ১০ হাজার বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছে সরকারপক্ষীয় কর্মী ও গুণ্ডাবাহিনীর হাতে। আহত হয়েছে অসংখ্য। কিন্তু সরকার তার অনুগত এসব বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। নাকি ব্যর্থতার ভান করছে তারা?

গত ১০ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম-খুনের শিকার হয়েছে প্রায় শত শত মানুষ। অনেকের লাশ পর্যন্ত মেলেনি। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে শত শত লোক। আওয়ামী লীগ পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পেটোয়া বাহিনীর (অনেকটা রক্ষীবাহিনীর কায়দায় আর ’৭২-৭৫ সালের এসপি মাহবুবের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর মতো) কায়দায় বেআইনি কাজে ব্যবহার করতে চাইছে কেন? রাষ্ট্রকে একটা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বদলে, সুশাসন কায়েম করার বদলে ‘নৈরাজ্যময় ও শ্বেতসন্ত্রাসের’ রাষ্ট্রে পরিণত করার অপপ্রয়াস কী ফল দেবে আওয়ামী লীগ সরকারকে!

১৯৭২-৭৫ সময়কালের শেষ পর্যায়ের শিক্ষামন্ত্রী (স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যান) প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ১৯৭৬ সালের প্রথমদিকে এক সন্ধ্যাবেলা মন্ত্রীপাড়ায় তার বাসভবনে (তখনও তিনি মন্ত্রীর প্রাপ্য সেই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, নতুন বাসায় ওঠার অপেক্ষায়) প্রায় দুই-ঘণ্টাব্যাপী তখনকার প্রধান বাংলা দৈনিক পত্রিকাটির এক সাংবাদিকের (স্টাফ রিপোর্টার) কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের কারণসমূহ (আমি সেই সিনিয়র সাংবাদিক ভাইয়ের কাছে থেকে সম্প্রতি ঘটনাটি জেনেছি)।

প্রফেসর মোজাফফর আহমদ চৌধুরী (বিখ্যাত ‘ম্যাক’ স্যার) বলেছিলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রাষ্ট্রপ্রশাসন চালানোর কাজে নিজে যদি স্বজনতোষণ থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকার রাষ্ট্রনায়ক হতে পারতেন, কঠোরভাবে নিজের আশপাশের স্বজনদের, দল-স্বজনদের অনাচার থেকে দূরে রাখতে পারতেন, তাহলেই তার পক্ষে দেশে সুশাসন কায়েম সম্ভব ছিল, কোনো বাকশাল ব্যবস্থা দিয়ে যা সম্ভব ছিল না, আসলে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থার কোনো প্রয়োজনই হতো না। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত ব্যর্থতা ছিল- ‘তিনি নিজের আপনজনদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি, নিজের ব্যর্থতা সেটা, রাষ্ট্রপ্রশাসন চালাতে যা বাধাগ্রস্ত করেছে তার প্রতিটি পদক্ষেপ।’’

প্রফেসর মোজাফফর আহমদ চৌধুরী একটা শব্দ উচ্চারণ করতে চাননি, তবে তা তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন- বঙ্গবন্ধুকে তার আশপাশের মোসাহেব ও চাটুকাররা সুশাসন দিতে বাধা দিয়েছিলেন, যে কারণে দেশের মানুষ তাকে ভুল বুঝেছে। তিনি দেশবাসীকে ভালোবাসতেন, কিন্তু নিজের রাষ্ট্র পরিচালনায় দুর্বলতা থেকে উঠে আসতে পারেননি।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কি বাকশাল ব্যবস্থার পথে হাঁটছেন? জননেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা কি সঠিক পথে হাঁটছেন এখন? নিশ্চয়ই নয়। তিনিও মোসাহেবদের পাল্লায় পড়েছেন, উন্নয়ন অনেক করেও তিনি সুশাসন দিতে পারছেন না, গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে এ দেশে, ধনী আরও ধনী হচ্ছে, কিন্তু শিল্প-বিনিয়োগ একেবারেই ধীর গতির, বেকারত্ব বাড়ছে সীমাহীনভাবে। শেখ হাসিনা আরও এক/দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশী, সেটা শক্তি প্রয়োগ করে হলেও : তিনি প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক, শতভাগ স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছেন সেই কারণে।

খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনের চেহারা দেখেই তো স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে এ সরকার জাতীয় নির্বাচনে কী ব্যবস্থা নেবে। তারা কোনো ব্যস্থায়ই বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আসার ‘বিন্দুমাত্র’ সুযোগও অবশিষ্ট রাখবে না। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেও অনেক আসনে কারচুপি হয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল। অথচ সেই সময়কার সচেতন সব মানুষেরই জানা- সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ এত আসন নাও পেতে পারত।

এখনও কি অবস্থা সেই একইরকম নয়? সব অনাচারই এখন চরমে। তাই তারা জনপ্রিয়তার জোরে জনভোটে জেতার সম্ভাবনা কম দেখায় ‘গায়ের জোরের নির্বাচন’ ব্যবস্থা কায়েম রাখতে চাচ্ছে। এটা কিন্তু আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোসহ দেশবাসী, সচেতন গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ দেখতে রাজি নয়। বিশ্ববাসীকে বেকুব বানিয়ে এবার আওয়ামী লীগের নৈরাজ্যের নির্বাচন অনুষ্ঠান অতটা সহজ হবে না।

আমাদের বিনীত নিবেদন- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলেরই এ রাষ্ট্রে অপরিহার্য অস্তিত্ব দরকার- ভূ-রাজনৈতিক কারণেই উভয় দলকে দরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার, যেখানে সুশাসন নিশ্চিত থাকবে প্রত্যেক মানুষের জন্য। সেটা কায়েম করাই অপরিহার্য। সেই লক্ষ্যেই একটি প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারি দল আওয়ামী লীগের ওপরেই দায় ও দায়িত্ব সর্বাধিক।

খায়রুল কবীর খোকন : বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব এবং সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক ডাকসু সাধারণ সম্পাদক

jugantor

Next Post

জাতীয় নির্বাচনের বছরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ সংবর্ধনায় বড় শোডাউনের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত

শনি জুলাই ২১ , ২০১৮
ava desk :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ গণসংবর্ধনা দেবে আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের বছরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ সংবর্ধনায় বড় শোডাউনের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাগম ঘটাতে দলের কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে দফায় দফায় সভা হয়েছে। ঢাকা ও এর আশপাশের নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে বলা হয়েছে। আমন্ত্রণ […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links