পাহাড়িদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই কেন?

আভা ডেস্ক : শনিবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ারে ৬ জন ও পরে বিক্ষোভে গুলিতে আরেকজন, মোট ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫ জন। উদ্বেগের বিষয়, হতাহতদের বেশিরভাগই পাহাড়ের বহুধাবিভক্ত আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর কোনো কর্মী-সমর্থক নন, সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে সর্বশেষ দশ মাসে পাহাড়ে অন্তত ৩৫ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করতে হচ্ছে অনেককে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিন ভাগে বিভক্ত ইউপিডিএফ (প্রসীত), জেএসএস (এমএন লারমা), ও নব্যসৃষ্ট ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যে কোনো প্রাণহানিই কষ্টের এবং অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে কেবল স্বজনহারা পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজ, এমনকি রাষ্ট্রের জন্যও। এ কারণে পাহাড়ে বসবাসকারী সবার তো বটেই, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিতে হবে।

জানা যায়, ইউপিডিএফের (প্রসীত) নেতাকর্মীরা শনিবার সকালে একটি সমাবেশে অংশ নিতে স্বনির্ভর বাজারে নিজেদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হলে তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে সন্ত্রাসীরা। এতে ইউপিডিএফের ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি শাখার সভাপতি তপন চাকমা, সহসভাপতি এলটন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা পলাশ চাকমা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এর কিছুক্ষণ আগে বাজারের প্রবেশমুখে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান তিনজন সাধারণ মানুষ। শুধু তা-ই নয়, পানছড়ি সড়কে চাঁদাবাজি, বাজার বন্ধ ও ব্রাশফায়ারে হতাহতের প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ মিছিল খাগড়াছড়ি শহরে প্রবেশের আগে পেরাছড়ায় হামলার শিকার হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান। সন্ত্রাসীরা কত ভয়াবহ এবং উদ্ধত হলে হতাহতের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফের হামলার সাহস পায়, ভাবা যায়!

প্রসীত খীসার ইউপিডিএফ হামলার জন্য গণতান্ত্রিক পিডিএফ ও জেএসএস-কে (এমএন লারমা) দায়ী করেছে। অবশ্য এরা সবাই একে-অপরের বিরুদ্ধে লেগে আছে। হামলার ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার পথ প্রশস্ত করবে। কেবল এ হামলারই নয়, পাহাড়ে সংঘটিত সব হামলা ও হতাহতের ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গেলেই পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে, অন্যথায় নয়। শান্তিচুক্তির ২০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পাহাড়ে শান্তি ফিরে না আসা দুঃখজনক। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত পাহাড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িতদের যে কোনো মূল্যে আইনের আওতায় আনা নিশ্চিত করা।

বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল পাহাড়কে উত্তপ্ত করে রাখায় কেবল যে প্রাণহানি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে তা-ই নয়, এতে দেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার অঞ্চলটি পর্যটক টানতেও ব্যর্থ হচ্ছে; আমরা বঞ্চিত হচ্ছি রাজস্ব থেকে। একসময় বিদেশি পর্যটক অপহরণের মতো দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ঘটনাও ঘটেছে সেখানে। এজন্য কেবল খাগড়াছড়ি নয়, পার্বত্য তিন জেলার নিরাপত্তাতেই বিশেষ জোর দিতে হবে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মানুষের মধ্যে ভীতিসঞ্চারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। সর্বশেষ ব্রাশফায়ারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে শুরু হোক পাহাড়ে শান্তি-সমৃদ্ধির নতুন যাত্রা।

Next Post

কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় দশ বেসরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সোম আগস্ট ২০ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় দশ বেসরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে সাতটি নতুন এবং বাকি তিনটি পুরনো ব্যাংক। শাস্তি হিসেবে এই ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাব থেকে কৃষিঋণের অব্যহৃত তহবিলের ৩ শতাংশ জব্দ করা হবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links