পাবনায় তার আগমন কেন্দ্র করে পদ্মার তীরঘেঁষা পাকশীকে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে

ava desk : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লির দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ উদ্বোধন করবেন। এছাড়া তিনি পাবনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাবনা-ঈশ্বরদী (মাঝগ্রাম) রেলপথের উদ্বোধনসহ আরও ৪৯ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করবেন। দুপুর ১২টায় প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধনের পর বিকাল ৩টায় তিনি পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন।

রাশিয়ান ফেডারেশনের সহযোগিতায় রূপপুরে পদ্মা নদীর তীরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের অর্থাৎ ফার্স্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি কাজের উদ্বোধন করেন।

ওই অনুষ্ঠানে রোসাটমের মহাপরিচালক মি. আলেক্সি লিখাচেভ, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিচালক তৌহি হানসহ দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রথম ইউনিটের কংক্রিটের কাজ চলমান রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু করার জন্যও সব প্রাক-প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ফার্স্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি উদ্বোধনের দিন থেকে ৬৩ মাসের মধ্যে এ প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হবে। বর্তমানে পৃথিবীর ৩১টি দেশে ৪৩৭টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।

৩০ নভেম্বর এফসিডি কাজের উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ বিশ্বের ৩২তম পারমাণবিক দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় রাশিয়ান ফেডারেশনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সের্গেই কিরিয়েঙ্কো এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর থেকেই দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ড. ইয়াফেস ওসমান প্রতি মাসেই দু-একবার সশরীরে ঈশ্বরদীর রূপপুরে এসে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়মিত দেখছেন। রাশিয়া ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ ও কর্মী মিলে সহস াধিক মানুষ দিনরাত কাজ করে চলেছেন।

২০২০ সালের মধ্যেই মূল রিঅ্যাক্টর ভেসেলসহ সব যন্ত্রপাতিই রাশিয়া থেকে চলে আসবে বলে প্রকল্প সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে ১২০০ করে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিটে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালিত হবে। এদিকে মূল প্রকল্প এলাকার বাইরে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক আবাসন পল্লী ‘গ্রিন সিটি’।

প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ তলাবিশিষ্ট ১১টি বিল্ডিং এবং ১৬ তলার ৮টি বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। ২২টি সুউচ্চ বিল্ডিং তৈরি হবে এই চত্বরে। গ্রিন সিটিতে থাকবে মাল্টিপারপাস হল, চিকিৎসা কেন্দ্র, মসজিদ ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

আরও প্রকল্পের উদ্বোধন : এছাড়া এদিন প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বরদী থেকে মাঝগ্রাম হয়ে পাবনা পর্যন্ত রেলওয়ে সেকশনে ট্রেন চলাচল, পাবনা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস, ঈশ্বরদী থানা ভবন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, আটঘরিয়া উপজেলার মাঝপাড়া, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, সলিমপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, সাড়া, পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর এবং চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ফরিদপুর উপজেলায় বড়াল নদীর ওপর ‘নারায়ণপুর সেতু’; ভাঙ্গুড়া উপজেলায় গোমানী নদীর ওপর ‘নৌবাড়িয়া সেতু, ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, চাটমোহর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সিটি কলেজ-পাবনার একাডেমিক ভবন, দেবত্তোর ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন, খিদিরপুর ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন, চাটমোহর মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, সুজানগরের বোনকোলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবন, সুজানগর মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, শহীদ নুরুল হোসেন ডিগ্রি কলেজ, সাঁথিয়ার একাডেমিক ভবন; ঈশ্বরদী মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের প্রশাসনিক ভবন; আটঘরিয়া উপজেলার ডেঙ্গারগ্রাম ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন, আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাটমোহর উপজেলায় গোমানী নদীর ওপর ‘নিমাইচড়া সেতু’, চাটমোহর উপজেলায় কাটাখাল সেতু, চাটমোহর উপজেলায় আত্রাই নদীর ওপর আত্রাই সেতু, সুজানগর উপজেলায় ধোলাইখাল সেতু এবং শতভাগ বিদু্যুতায়িত উপজেলা : ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করবেন।

পাশাপাশি এদিন তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সিগন্যালিংসহ রেললাইন নির্মাণ, জেলা সদরে এক হাজার আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, সুজানগর উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আটঘরিয়া উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, চাটমোহর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিস ভবন, বেড়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিস ভবন, সুজানগর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিস ভবন, জেলা রেজিস্ট্রার অফিস ভবন, পুলিশ লাইন্স মহিলা পুলিশ ব্যারাক ভবন, সুজানগর উপজেলায় সাগরকান্দি ইউনিয়ন ও আটঘরিয়া উপজেলায় হাদল ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পাবনা মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সাঁথিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাবনা আদর্শ মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, সাঁথিয়া উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বেড়া পৌরসভায় উচ্চ জলাধার ও পানি শোধনাগার নির্মাণ, সাঁথিয়া পৌরসভায় উচ্চ জলাধার নির্মাণ এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

পাবনায় উৎসবের আমেজ : প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে পাবনা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সব জায়গায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে পুরো শহরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। নতুন রূপে সাজানো হয়েছে সার্কিট হাউস, সংস্কার হয়েছে রাস্তাঘাটও। প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল করতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পুলিশ লাইন মাঠের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য গেট। সার্কিট হাউসের সামনে বেশ কয়েকটি তোরণসহ এর বাইরে পাবনা-ঢাকা ও পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পাবনা জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সর্বত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাবনা জেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থার বলয় মজবুত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভূমিমন্ত্রী এবং পাবনা-৪ আসনের (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) এমপি শামসুর রহমান শরীফ, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসভা সফল করতে কাজ করছেন।

jugantor

Next Post

বৃষ্টির কারণে তারা প্রতিটি সবজির বাড়তি দাম নিচ্ছে

শনি জুলাই ১৪ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : নানা অজুহাতে বাড়ে সবজির দাম। এবার বাড়ছে বর্ষার অজুহাতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে। নতুন করে দাম বাড়েনি পেঁয়াজ ও চালের মূল্য। তবে ডাল, ভোজ্যতেল, রসুন, মাছ-মাংসসহ বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম ছিল স্থিতিশীল। শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজারসহ […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links