আভা ডেস্ক : পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরমাণু চুল্লির দ্বিতীয় ইউনিট গতকাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়ার কারিগরি সহায়তায় নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রুশ প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ শিল্পবিষয়ক উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ রবিসভ।
জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। তীব্র বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে দেশের শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার এ সময়ে এটি স্বস্তির খবর, সন্দেহ নেই।
নিয়মানুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে গত বছরের ৩০ নভেম্বর উদ্বোধন হওয়া প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের মে-জুন এবং গতকাল উদ্বোধন হওয়া দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সাল থেকে উৎপাদনে যাওয়ার কথা।
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিট যথাসময়ে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে বলে আমরা আশাবাদী।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প যেমন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, তেমনি এটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নির্মীয়মাণ প্রকল্পও। সেই পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া এবং এ লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ করা হয় পাবনার রূপপুরে।
তারপর নানা কারণে থমকে থাকা প্রকল্পটিতে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময়ের চাহিদা মোতাবেক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেটিও থমকে যায়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবারও বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চূড়ান্ত উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকার প্রকল্পটি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি সেখানে সংশ্লিষ্টদের বসবাসের জন্য একটি অত্যাধুনিক গ্রিন সিটিও গড়ে তোলা হচ্ছে। দ্বিতীয় পরমাণু চুল্লি উদ্বোধনের পাশাপাশি শনিবার পাবনায় আরও প্রায় অর্ধশতাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ ঘাটতি ও কাক্সিক্ষত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সংকট কেবল আমাদের নয়, অনেক দেশের জন্যই এটি একটি বড় সমস্যা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে যেতে হলে এ সমস্যা যে কোনো মূল্যে সমাধান করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বেশি বেশি শিল্পকারখানা স্থাপন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে সবার আগে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সেদিকেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে বসানোর পাশাপাশি শিল্পকারখানাসহ সব ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে- এমনটিই প্রত্যাশা।
যুগান্তর