আভা ডেস্ক: নিরাপদ সড়কের দাবিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে উসকানি দিয়েছেন পাকিস্তানি এক ইউটিউবার। তার নাম শাম ইদ্রিস (Sham Idrees)। গত ৭ আগস্ট তার ভেরিফায়েড ইউটিউবে চ্যানেল ‘শ্যাম ইদ্রিস ব্লগস’-এ এক মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। এসময় তার সঙ্গে আরেক তরুণী ছিল।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় এই ইউটিউবার শাম ইদ্রিস সালাম দিয়ে বলেন, ‘এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও। কারণ, আমি আমার বাংলাদেশের ভক্তদের কাছ থেকে সহস্রাধিক বার্তা পেয়েছি। আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। এটা নিয়ে কেউ কথা বলছে না।’
এ সময় তার সঙ্গে থাকা তরুণী ঘটনার বর্ণনায় মিথ্যা তথ্য দিতে থাকেন। ওই তরুণী বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করছে। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে প্রতিবাদ করছিল। কিন্তু সরকার তাদের প্রতিবাদ করতে দেয়নি। প্রতিবাদী শান্ত শিক্ষার্থীদের সড়কে হত্যা করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। ছাত্রীদের সড়কে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমি এ ধরনের ছবি দেখেছি। আমি মনে করছি, তারা কোনও ভুল করেনি। তারা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদ করতে চেয়েছিল।’
তার কথা শেষ হওয়ার পর শ্যাম ইদ্রিস আবার মিথ্যা তথ্য দিতে থাকেন। এই ইউটিউবার বলেন, ‘তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার একটি ইস্যু তৈরি করে টেলিফোন লাইন বন্ধ করে দেয়। গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করতেও বাধা দেয়। বিশ্ব জানে না একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নির্দোষ মানুষ মারা যাচ্ছে। অথচ কেউ কিছু বলছে না।’
এসময় তরুণীটি আবার বলেন, ‘সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিন। বন্ধু, পরিবার ও স্বজনের সঙ্গে এই ভিডিও শেয়ার করুন। নির্দোষ মানুষের সঙ্গে বেআইনি আচরণ করা হচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই।’
শ্যাম ইদ্রিস ভিডিও শেষ করার আগে বলেন, ‘আজ যা অন্যের সঙ্গে ঘটছে, তা আগামীতে আপনার সঙ্গেও ঘটতে পারে। তাই সচেতনতা সৃষ্টি করুন। নির্দোষ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান।’
তার এই ভিডিও প্রায় আড়াই লাখ মানুষ দেখছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাঁচ হাজার ১৬৭ জন এই ভিডিওর লিংকে মন্তব্য করেছেন।
এছাড়াও ‘শ্যাম ইদ্রিস ব্লগস’ নামে একটি ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। সেখানেও পাঁচ লাখ ৮২ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়াও কয়েক হাজার মানুষ কমেন্টস করেছে।
শ্যাম ইদ্রিস পাকিস্তানের মডেল। তার নিজস্ব ওয়েব সাইটে তার পরিচয়ে লেখা হয়েছে, তিনি ইউটিউবার, পরিচালক, মিউজিশিয়ান ও ব্লগার। তার ফেসবুক পেজে ছয় মিলিয়ন (৬০ লাখ) ভক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশের আন্দোলনের বিষয়ে তার ওয়েব সাইটে থাকা মেইল আইডিতে একটি বার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি বুধবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
জানতে চাইলে প্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা বলেন, ‘এ বিষয়ে অবশ্যই রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে পারে। সেজন্য প্রথমে আমাদের সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একটি মামলা রুজু করতে হবে। এরপর গুজব রটনাকারীর আইপি অ্যাড্রেস নিতে হবে। তা মামলায় উল্লেখ করতে হবে। গুজবকারী যে রাষ্ট্রেরই হোক, এটা কোনও বিষয় না। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এই বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতে পারে পুলিশ। এছাড়াও ইউটিউবকে মামলার বিষয়টি অবহিত করলে তারাও ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যেখান থেকেই গুজব বা ভুল তথ্য বা উসকানি দেওয়া হোক, তাকে আমাদের আইনে ধরা সম্ভব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনেক বলেন, ‘যেখানে বসে যে-ই গুজব ছড়াক, তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব। এজন্য মামলার পর ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া যায়। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবসময় মনিটরিং করছি।’
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বাসচাপায় নিহত হয়। এরপর ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ডিএমপিতে সাইবার অ্যাক্টে অন্তত পাঁচটি মামলা হয়েছে। গুজব ছড়ানো কিছু ফেসবুক আইডি ও পেজ শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে একাধিক ব্যক্তিকে।
বাংলা ট্রিউব্রুন