পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- দেশে চালের কোনো সংকট নেই।

আভা ডেস্ক : দেশে ইরি-বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাল উৎপাদনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- দেশে চালের কোনো সংকট নেই। চাহিদার তুলনায় চালের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। চাল সংকট মোকাবেলায় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানিও করা হয়। অথচ পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে।

পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে চাল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির অজুহাতে মিল মালিকরা কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়েছেন। এ কারণে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মাসজুড়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।

চলতি বছর ইরি-বোরো ধানের উৎপাদনের ওপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে এ বছর বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৯০ লাখ টন ধরা হয়েছিল। এর বিপরীতে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার টন উৎপাদন হয়েছে।

গত বছর বোরোর উৎপাদন ১ কোটি ৮০ লাখ ১৩ হাজার টন হয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এ বছর উৎপাদন ১৭ লাখ ৫৭ হাজার টন বেশি হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত (জুন) সরকারিভাবে ১১ লাখ ২৪ হাজার টন ও বেসরকারি খাতে ২৯ লাখ ৯০ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়। এ ছাড়া ৪৬ লাখ ৭৬ হাজার টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়।

এ ছাড়া সর্বশেষ চলতি বছর ১১ জুলাইয়ের তথ্যানুযায়ী সরকারি গুদামে ১০ লাখ ৮১ হাজার টন চালের মজুদ রয়েছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গত বছর বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে এরপর থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক চাল আমদানি এবং চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।

তাই কৃষকদের সুবিধার্থে চলতি অর্থবছরের বাজেটে চাল আমদানির ওপর ২৮ শতাংশ শুল্ক বহালের ঘোষণা দেয়া হয়। এ শুল্ক বহালের পর থেকে দেশের মোকামগুলোয় বাড়তে থাকে চালের দাম। এর প্রভাবে বাজেটের আগের তুলনায় কেজিপ্রতি চার টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

তবে চালের দাম বৃদ্ধিতে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন মিল মালিকরা। অটোরাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, আমদানি শুল্ক আরোপের অজুহাতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তবে মিলগুলো থেকে কম দামে এখনও চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের ‘আল্লাহর দান’ রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে মিল মালিকরা দায়ী। তিনি বলেন, পাইকারি বিক্রেতারা নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শেরপুরের মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনে এনে বিক্রি করেন।

বাজেটের আগে মিল মালিকরা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৩৬ টাকায় বিক্রি করতেন। দুই টাকা বাড়িয়ে এ চাল ৩৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আগে মিনিকেট ৪৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হলেও এখন ৪৯ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। নাজিরশাইল তিন টাকা বাড়িয়ে ৫৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

আর পাইকারি চাল বিক্রেতারা স্বর্ণা চাল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আগে ৩৭-৩৮ টাকায় বিক্রি করা হতো। এ ছাড়া মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। এক মাস আগে এই চাল ৪৯-৫০ টাকায় বিক্রি হতো। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা কেজি দরে। আগে ৫০ টাকায় বিক্রি হতো।

চালের দাম বাড়ানোর পেছনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর দৈনিক বাজারমূল্য তালিকা অনুযায়ী, রোববার সরু চালের মধ্যে ভালোমানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম ৬৫-৬৮ টাকা দেয়া আছে। এক মাস আগে এর দাম ছিল ৬৪-৬৬ টাকা। এ ক্ষেত্রে মাসজুড়ে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ২ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

মাঝারি মানের চাল কেজিপ্রতি ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে এর দাম ছিল ৪৮-৫৪ টাকা। ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি দামে মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা ৪২-৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে ৩৮-৪২ টাকায় বিক্রি হতো। মাসজুড়ে ১০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ব্যবসায়ীরা সব সময় লাভ করতে চান। নানা অজুহাতে তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট থেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নেন। এখন আমদানি চালের ওপর শুল্ক আরোপ করার অজুহাতে আবার চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

দেশে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তাই ব্যবসায়ীরা শুল্ক আরোপের অজুহাতে চালে বেশি দিন বাড়তি দাম নিতে পারবেন না। কিছু দিনের মধ্যে বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে। তবে গত বছরের মতো এবারও যাতে ব্যবসায়ীরা চাল গুদামজাত করে রাখতে না পারেন এবং চালের দাম কমাতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, অধিদফতরের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। চালের দাম বাড়ার পেছনে কারা দায়ী তাদের বের করে ভোক্তা আইনে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

এ ছাড়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে চাল ব্যবসায়ীদের ডাকা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যে চালের দাম কমে আসবে।
যুগান্তর

Next Post

রাজশাহীতে আসন্ন এ নির্বাচনে বিশেষ করে মেয়র পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছে বিএনপি।

মঙ্গল জুলাই ১৭ , ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় কোন্দল আর বিভেদ ভুলে অবশেষে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে মাঠে নামতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। ১০ জুলাই (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকে রোববার পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে বুলবুল তেমন নেতাকর্মী নিয়ে নামতে না পারলেও এখন তা আর নেই, সতঃস্ফূতভাবেই […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links