পশ্চিম রেলে ভানুমতির খেলা। টেন্ডারের আগেই পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে রাজশাহী স্টেশনের মালামাল কেনার অভিযোগ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সরকারি দপ্তরে সাধারণত টেন্ডার বা কোটেশনের পরেই উন্নয়কাজ বা কেনাকাটা করা হয়। কিন্তু কখনো কি শোনা গেছে, সরকারি কেনাকাটা ও উন্নয়নের জন্য টেন্ডার বা কোটেশনের আগেই মালামাল কেনা বা উন্নয়নকাজ ঠিকাদার সম্পন্ন করেছেন। হে এমনটিই ঘটেছে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ক্ষেত্রে। এই স্টেশনের জন্য বেশকিছু ফার্নিচার, ট্রেনের বগি চিহ্নিত এলইডি লাইট ও অভ্যার্থনার জন্য এলইডি লাইটও সরবরাহ করেছেন আলমগীর হোসেন নামের একজন ঠিকাদার। মাস দুয়েক আগে এসব মালামাল সরবরাহ করা হয় এবং স্টেশনে সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজের আস্থাভাজন এই ঠিকাদারকে দিয়ে আগেই কাজগুলো করে নেওয়া হয়েছে যেন বালিশ কেনার মতো করে ইচ্ছামতো বিল উত্তোলন করা যায়। এটি করতে গিয়ে স্টেশনে কিছু ভিআইপি চেয়ার (গদিওয়ালা) চেয়ারও অপ্রয়োজনে সরবরাহ করা হয়েছে। চেয়ারগুলোর জায়গা না হওয়াই স্টেশনের যাত্রীদের অপেক্ষারত কক্ষের বাইরেও রাখা হয়েছে বেশকিছু চেয়ার। আর সেগুলোতে সাধারণ যাত্রীরা এমনকি ভিক্ষুকরাও ইচ্ছামতো বসে থাকছেন। এমনকি অসেচতর যাত্রীরা পা তুলেও বসছেন গদিওয়ালা এই চেয়ারগুলোতে। ফলে এরই মধ্যে গদিগুলো নষ্ট হতেও বসেছে। অথচ বছর খানেক এই স্টেশনেই চেয়ার সরবরাহের নামে বিপুল অংকের টাকা লুটপাটে মেতে উঠেছিলেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা। কিন্তু বছর না যেতেই আবার চেয়ার সরবরাহের নামে বিপুল অংকের টাকা লুটে নেওয়ার মচ্ছব চলছে।

প্রসঙ্গত, বছর খানেক আগে এই স্টেশনে ১৭-১৮ হাজার টাকার স্টিলের চেয়ার সরবরাহের নামে ৪০-৪৫ হাজার টাকা করে বিল উত্তোলন করা হয়। আর ২৫-৩০ হাজার টাকার সোফা সেট সরবরাহ করে বিল উত্তোলন করা হয় ৮০-৮৫ হাজার টাকা করে। রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ বাবু এই ফার্নিচারগুলো সরবরাহ করেছিলেন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরাঞ্জম কর্মকর্তার দপ্তরের মাধ্যমে এলটিএম (লিমিটেড টেন্ডার মেথড) টেন্ডারের মাধ্যমে ওই ফার্নিচারগুলো সরবরাহ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোপাট করা হয়।

রেলওয়ে সূত্র মতে, এবার এলটিএম বা টেন্ডার না করেই রাজশাহী স্টেশনে বগিচিহ্নিত লাইট, ফার্নিচার ও অভ্যার্থনার জন্য এলইডি লাইট সরবরাহ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি বগিচিহ্নিত লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু যেসব ফার্নিচার এরই মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে, তার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। ফলে সেগুলোও অপ্রয়োজনে ব্যবহার হচ্ছে। এখন এসব দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা লোপাটের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেলওয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য টেন্ডার হয় তিনটি দপ্তর থেকে। এর মধ্যে একটি দপ্তর হলো পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান সরাঞ্জম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, প্রকৌশল দপ্তর এবং প্রধান টেলিকমিউনিউকেশনের দপ্তরের মাধ্যমে। রেল লাইনের বাইরে যেসব কেনাকাটা হয় সেগুলো সাধারণত প্রধান সরাঞ্জম কর্মকর্তার দপ্তরের মাধ্যমে। বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় মালামালের চাহিদা পাওয়ার পরেই সরাঞ্জম শাখা টেন্ডার, কোটেশন অথবা এলটিএমের মাধ্যমে টেন্ডার করে সেই মালামালগুলো ঠিকাদারকে সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দিয়ে থাকেন। এরপর ঠিকাদার সেই মালামালগুলো সরবরাহ করে সরাঞ্জম শাখা থেকে বিল উত্তোলন করেন। কিন্তু এবার টেন্ডারের কোনো প্রক্রিয়া না করেই আগেই পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে মালামাল সরবরাহ করে নিয়েছেন প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ। এর মধ্যে অধিকাংশ মালামালই নিম্নমাণের বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকই। এ কারণে মাত্র দুই মাসের মধ্যেই স্টেশনের বগিচিহ্নিত এলইডি লাইটগুলো এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি নষ্ট হয়ে গেছে।

এদিকে রাজশাহী স্টেশনের যাত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়দিন আগেই চেয়ারগুলো সরবরাহ করা হলেও এরই মধ্যে ময়লায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আবার লাইটগুলোও জ্বলে না। এগুলো কোন ধরনের উন্নয়ন। কয়দিন আগেও দেখলাম স্টেশনের কক্ষের বাইরে বেশকিছু চেয়ার দেওয়া হয়েছিলো। সেগুলো আর এখন দেখা যাচ্ছে না।’আবার চেয়ার সরবরাহ করা হলো কোন কাজে? এগুলোর তো ব্যবহারও জানে না সাধারণ মানুষ।’
জানতে চাইলে স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, ‘ঠিকাদার কাজগুলো এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। তবে বগি চিহ্নিত যেসব ডিজিটাল লাইটগুলো সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলোর কিছু জ্বলছে আবার কিছু কিছু এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। একাজটি ঠিকাদর আলমগীর ওএকজন ওয়াড কমিশনার করছেন।, তবে,তারা আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেননি। সময় চেয়ে নিয়েছেন।’

এদিকে সম্প্রতি টেন্ডার ছাড়ায় এই মালামালগুলো সরবরাহ কে বা কারা করেছেন সেটি জানেন না বলে দাবি করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান সরাঞ্জম কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, টেন্ডার ছাড়ায় কিভাবে মালামাল সরবরাহ হলো বা স্টেশনে লাগলো সেটি জানি না। এটি তো হয় না।’

তবে মালমালগুলো সরবরাহের নির্দেশদাতা প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘আলমগীর হোসেন নামের একজ ঠিকাদার মালামালগুলো সরবরাহ করেছেন। তবে টেন্ডার করা হয়নি। প্রয়োজন তাই টেন্ডারের আগেই এই মালামালগুলো স্টেশনে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এগুলো স্টেশনে লাগানো বা ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঠিকাদার যেসব মালামাল সরবরাহ করেছেন, সেই অনুযায়ী তিনি বিল দাখিল করবেন। এরপর সেভাবে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্যেও অনুরোধ জানান।

এস/ডি১৯

Next Post

ধর্ষণের শিকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, গাইনি ওয়ার্ডে প্রসব বেদনায় ছটফট করছে।

শনি ডিসে. ১৪ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ ধর্ষণের শিকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী (১২) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে প্রসব বেদনায় ছটফট করছে। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ভোজমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) বাবুল চাপরাশী এবং একই বাড়ির চাচা সম্পর্কের জুয়েল ও রনির ধারাবাহিক ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে সে। গত […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links