নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সেবার মান কাঙ্খিতভাবে বাড়ছে না। কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। কোন কোন কর্মকর্তা রেলকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে অবলীলায় যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছেন।
গতকাল ৬ অক্টোবর রাজশাহী রেল স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। টিকিট নিয়ে চলে বানিজ্য। টিকিট ক্রয় করেও যেতে পারেনি অনেক শিক্ষার্থী। চরম অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতায় ট্রেনের ধারণক্ষমতার বাহিরে টিকিট বিক্রি করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু, পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক গত এক সপ্তাহ ভীষণ উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটিয়েছেন। পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য নগরভবনে একাধিক সমন্বয় সভা করেন মেয়র। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও যথাযথ পদক্ষেপ নেন।অনেক সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য নানামুখী সেবামূলক উদ্যোগ নেয়া হয়। যার ফলশ্রুতিতে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু রেলওয়ের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে শেষ পর্যন্ত বহুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পরীক্ষার সমাপনী দিনে শিক্ষার্থীরা ট্রেনে ওঠার আগেই স্টেশনে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করা হয়েছে। শত শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করার পর তাদের ট্রেনে ওঠার সুযোগ করে দিতে পারেননি রেল কর্মীরা । কারণ কোন বগিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ৮৪০ টি আসনের ট্রেনে প্রতিটি কামড়ায় ঠাসাঠাসি করে যাত্রীরা উঠে পড়েছিলেন।
এ বিষয়ে রাজশাহীর সিনিয়র সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটন বলেন, ট্রেনের ধারণক্ষমতার উপর ভিত্তি করে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। এছাড়াও স্টেশনে বসে যাত্রীদের নিকট এক্সেস টিকিট ফেয়ার ( ইএফটি) এর মাধ্যমে ভাড়া আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি। আর এই বেআইনি কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন রেলের বাণিজ্যিক শাখার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। যিনি তার নির্মাণাধীন বাড়ি তৈরির জন্য বনলতা ট্রেনে নির্মাণ সামগ্রী বিনা ভাড়ায় ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি। অথচ আম ও গবাদিপশু পরিবহনের জন্য লাখ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল। এটা হচ্ছে রেলের বিশেষ সেবা। যা মানুষের জন্য সম্ভব না হলেও গবাদি পশুর জন্য সম্ভব হয়। পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইএফটি টিকিট ধারী যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে না পেরে টাকা ফেরত চেয়েও পাননি। কারণ ইএফটি টাকা ফেরত দেয়ার কোনো বিধান নেই। সেবার বদলে চরম ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য রাতে ধুমকেতু ট্রেন চালানো যেত। কিন্তু সেটাও করা হয়নি। ঈদের সময় সপ্তাহব্যাপী ট্রেনের ছুটি বন্ধ করা হয়। অথচ ট্রেনের সাপ্তাহিক বিরতি না দিয়ে চালানো গেলে শিক্ষার্থীদের এত বিপদে পড়তে হতো না। পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকিট কেটে শিক্ষার্থীরা উঠতে না পেরে যখন বিক্ষোভ শুরু করে তখন তা সামাল দিতে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেখা যায়নি। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেল পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসেননি।তবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ।
রেল শ্রমিক লীগ নেতা এম এ আক্তারসহ কয়েকজনকে তৎপর দেখা গেছে। জানা গেছে, রেলওয়ের একজন এডিজি শিক্ষার্থীদের চাহিদা থাকার পরও ধুমকেতু ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বহাল রাখেন। একই সাথে বাণিজ্যিক শাখার একজন শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশে ঈশ্বরদী থেকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন টিটিই কে রাজশাহীতে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর লেলিয়ে দেয়া হয়। যা দুঃখজনক এবং অমানবিক।এ ধরনের অবাঞ্চিত ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধান বানিজ্যিক কর্মকর্তার সরকারি নম্বরে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।