পশ্চিম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চীফের বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ “বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী” রেল মন্ত্রলয়ের অধিনাস্থ নিজস্ব একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল নামে দুই ভাগে বিভক্ত। পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে দুই চীফ কমান্ডেন্ট পরিচালনা করে সমগ্র বাহিনীকে। বাহিনীটির কাজ রেলওয়ে সম্পদ রক্ষনাবেক্ষন ও যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া। গোপন সংবাদের উপর নিশ্চিত হতে, বাহিনীটির পশ্চিমাঞ্চলের প্রধানের নানা দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমে দেখে যায় নানা অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র। তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে থাকছে পদোন্নতি ও ডিপার্টমেন্টাল প্রধানের নানা অনিয়মের চিত্র। ২য় পর্বে থাকবে সিপাই, নায়েক, হাবিলদারদের নানা অপকর্মে চিত্র। ৩য় পর্বে থাকছে সরকারী ও রেলখানে লোটপাতের নানা পদ্ধতিতে দুর্নীতির চিত্র।
১ম পর্বঃ পশ্চিম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান চীফ কমান্ডেন্ট ফাত্তাহ ভূইয়া বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার পাহাড় সমান দুর্নীতির অভিযোগ। গত কিছুদিন পুর্বে ডিপার্টমেন্টাল পদোন্নতি দেয় চীফ কমান্ডেন্ট ফাত্তাহ ভুইয়া। পদোন্নতিতে অর্থ বানিজ্য, স্বজনপ্রীতি, প্রকৃত যোগ্যদের পদোন্নতি না দেওয়া সহ বদলী বানিজ্য। এ নিয়ে ডিপার্টমেন্টে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করেছে বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে। নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পর থেকে কিছুটা ভয়েও আছেন চীফ। এর জন্য নিজের পুর্বাঞ্চলে বদলী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। ভয়ে অতিরিক্ত সিপাই তার নিজস্ব নিরাপত্তায় রেখেছেন, তারা হলেন সিপাই মাহাবুব, সিপাই কালাম, সিপাই হাবিব, হাবিলদার আশরাফুল, হাবিলদার নুরে আলম সহ ডজন খানেক লোক। যাদের কোন কাজ না করেই বসে থেকেই প্রতিমাসে বেতন দেন তিনি। চীফের নিরাপত্তায় প্রতিনিয়তই সেখানে পোশাক পড়ে অস্ত্র হাতে তিন জন করে ডিউটি করেন, তবুও অতিরিক্ত সিভিল পোশাকে উক্ত ব্যাক্তিরা সব সময় সেখানে থাকেন, যতক্ষণ চীফ অফিসে থাকেন। ইতিমধ্যেই চীফের ঢাকার দুটি বিশাল বাড়ির তদন্ত মাঠে নেমেছেন দুদক। দুদকের তদন্তের বিষয় জানতে পেয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় রেখেছেন নিজেকে। যাতে কেউ তার সাথে স্বাক্ষাৎ করতে না পারে। বিশেষ তৎপরতায় থাকায় অপরিচিত নম্বরের ফোন কল রিসিভ করেন না তিনি। অফিসে গেলেও দেখা করতে দেননা তার নিরাপত্তায় থাকা বাড়তি সিভিল টিম। এরই মধ্যে পদোন্নতি দিয়ে সাড়ে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রতিবেদকে জানিছেন একটি গোপন সুত্র। সিপাই থেকে নায়েক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন ৪৫ জন। নায়েক থেকে হাবিলদার পদে ১০ জন, হাবিলদার থেকে এ এস আই পদে ৫ জন, এএসআই থেকে এস আই পদে ৫ জন। প্রতিটি পদের পদোন্নতির জন্য সর্বনিম্ন ৫ লাখ থেকে সর্বউদ্ধে ১০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন তিনি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রতিবেদকে জানায়, গত ৩১ শে অক্টোবর ২০১৭ সালে চীফ হিসাবে পশ্চিমাঞ্চলে যোগদান করেন ফাত্তাহ ভুইয়া। এরপর থেকে নানা অনিয়ম করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। প্রতিমাসে ফুটপাত থেকে হাবিলদার আশরাফুল ও নুরে আলম তিন লাখ টাকা মাসিক মাসোহারা তোলেন। পশ্চিম রেল সংলগ্ন ফুতপাত থেকে এই দুই হাবিলদার টাকা উত্তোলন করেন বলে একাধিক দোকানী তা নিশ্চিত করেন। এরপর মাদক কারবারিকে সহযোগিতা করে প্রতিটি ট্রেনে যত মাদক পাচার হয় তার কমিশনও নেয় এই দুই হাবিলদার। এমনকি এই দুই হাবিলদার মাদক কারবারিদের সাথে উঠবস সহ তাদের বাসায় যাতায়াত লেগেই থাকে। মতিহার থানা এলাকার মিজানের মোড়ের মঞ্জনু সহ একাধিক মাদক ব্যবসায়ী বাসায় যাতায়াত সহ মাদক সেবন ও ট্রেনে মাদক পাচারে আলোচনা হয়, বলে জানান উক্ত এলাকার লোকজন। চীফের নির্দেশে এই হাবিলদার ইচ্ছামত সিপাই ডিউটি বন্টন ও কমিশন নিয়ে থাকে। গাড়িতে ডিউটি করলে একরকম কমিশন, স্টেশনে টিকিট চেকারের সাথে ডিউটি করলে আরেক রকম কমিশন। প্রতিটি কাজের কমিশনের সম্পুর্ণভাগ চলে যায় চীফের কাছে। কারনে অকারনে ঘুষ বানিজ্যের কারণেই গত এক বছরে এস আই আসাদকে চার জায়গায় বদলী করেন। এই এক বছরে আসাদের নিকট থেকে নেওয়া হয়, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতিনিয়তই বদলী আতংকে থাকে সিপাই থেকে ইন্সেপেক্টর পযর্ন্ত। প্রতিমাসে টাকা দিলে থাকতে পারবে যর্থাস্থানে অন্যথায় বদলী হতে হয় জনমানবশূন্য স্টেশনগুলোতে। বদলী জনিত বানিজ্য হলো, কোন স্টেশনে কি পরিমান আয় সেই হিসাবে অনুযায়ী বদলীর রেট। অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই, হতে হয় হয়রানিমুলক বদলী, যার মুল কারন চীফকে টাকা না দেওয়া বা তার অপকর্মে সঙ্গ না দেওয়া। অপরদিকে একটি সুত্র জানায়, সরকারী বরাদ্দকৃত টিএ বা ভ্রমণ ভাতার টাকাও সম্পুর্নভাবে আত্নসাত করেন চীফ। টিএ বিলে স্বাক্ষর করেও বিল না পেয়ে খুশি অনেকে জানায়, বিল গুলো না নিলে স্যারেরা খুশি থাকেন। বছরে কি পরিমান টিএ বিল হয় তার আনুমানিক ধারনায় জানা যায় এবারের অর্থ বাজেটে সমগ্র পশ্চিম ডিবিশনে নাকি ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। যার মধ্যে সিংহভাগ বরাদ্দ নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য। এদিকে ঠিকাদারি কাজের কেনাকাটার নামেও কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন চীফ কমান্ডেন্ট বলেও সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিকট নিম্নমানের সামগ্রী নিয়ে মোটা অংকে অর্থ আত্নসাত করেছেন তিনি। সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া যায় এমন চিত্র,মাসিক অর্থ কোটি টাকা আয় চীফ কমান্ডেন্ট ফাত্তাহ ভুইয়ার। আয়ের উৎস পদোন্নতি, বদলী, রেল সংলগ্ন ফুটপাত, মাদক চোরাকারবারি, তেলচুরি, ঠিকাদারির কেনাকাটা, টিএ বা ভ্রমন বিল। এ বিষয়ে জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেনি । আরেকটি সুত্রে জানা যায়, জিএমকে অবগত করে তার দপ্তরে তথ্য বিষয়ে কথা বলতে বা নিশ্চিত হতে গেলে তিনি কোন তথ্য না দিয়ে, সাংবাদিককেই লাঞ্চিত করে তার অফিসের সিভিল টিম পেটোয়া বাহিনী দ্বারা। এবিষয়ে ঐ সাংবাদিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে রেখেছেন বলে সুত্রটি নিশ্চিত করেছে। উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পশ্চিমাঞ্চল রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহ বলেন, বিষয় গুলো আমার জানা নেই, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি। তিনি বলেন, কেউ যদি অনিয়ম বা দুর্নীতির করে তবে তা ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী নিজে দুর্নীতি বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আমরা তার সাথে একমত হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। তাই কেউ দুর্নীতি করে পার পাবে না, অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে উল্লেখ করেন তিনি।

Next Post

তাপসের শূন্য আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন সাঈদ খোকন ।

শুক্র ফেব্রু. ১৪ , ২০২০
ঢাকা দক্ষিণের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ঢাকা ১০ আসনে উপনির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাঈদ খোকনের পক্ষে দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র জমা দেন ঢাকা মহানগর […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links