নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রহস্যজনকভাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএমের পিএস পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপদে বহাল। অভিযোগ উঠেছে জিএম এর আস্থাভাজন এই পিএস জিএমের নানা অনিয়মের স্বাক্ষী। আরও অভিযোগ উঠেছে ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের মাস্টাররুলের একজন মহিলা খালাসিকে নিজ অফিসে বসিয়ে রেখে বেতন দিচ্ছেন জিএম। যদিও ক্ষমতা বলে জিএম তার অফিসিয়াল কাজে একজন ব্যক্তি রাখতে পারেন। তবে সেটি তার দপ্তরের অর্থায়নে বেতনভুক্ত হতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের বেতন ভুক্ত কর্মচারীকে সে তার দপ্তরিক কাজে ব্যবহার করতে পারেন না।
নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র নিশ্চিত করেন, জিএমের নানা অনিয়ম দুর্নীতি লেনদেন করে থাকেন এই দুইজন। খালাসি পদে মাস্টার রুলে নিয়োগ প্রাপ্ত ঐ নারী হলেন, মনিরা রানী রায়।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের কর্মকর্তা বলেন, এই মনিরা রানী রায়ের দাপটে আমরা অতিষ্ঠ। তার বেতনটাও তাকে জিএম অফিসে গিয়ে দেওয়া লাগে। কাজ তো করেই না উল্টো জিএমের ভয় দেখায়। কাজ করেন ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের খালাসি পদে, অথচ বসে থাকেন জিএম দপ্তরে। যার অবাদ বিচরন থাকে জিএম কক্ষে।
জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ’র পিএস হিসাবে বর্তমানে আছেন কাউসার আলী। তিনি পুর্ন অবসরে গিয়েও ক্ষমতাবলে জিএম তাকে এখনো স্বপদে বহাল রেখেছেন। অত্যন্ত ‘গোপনীয়’ এই শাখায় অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে বিধিবহির্ভূতভাবে জিএম-এর পিএস হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে রেল ভবনে কর্মকর্ত-কর্মচারীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিকে তারা ‘রহস্যজনক’ বলেই মনে করছেন। রাজশাহীতে জিএম এর পিএস হিসাবে ৮ বছর যাবত কর্মরত ছিলেন কাউসার। এরপর তিনি গত বছর অবসরে যান তিনি। এখনো বহালতবিয়তে জিএম কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন কাওসার আলী।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে রেলওয়ের জিএম-এর পিএস হিসেবে নতুন একজনকে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের নথিতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পদায়ন করে পিএস হিসেবে এখনো কাউকেই নিয়োগ দেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে সূত্রটি বলছে, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাউসার আলী রেলওয়ের বর্তমান জিএম মিহির কান্তি গুহ’র অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। জিএম হওয়ার সুবাদে ক্ষমতাধর এই কর্মকর্তা চাকরিবিধির কোনো তোয়াক্কা না করে অত্যন্ত গোপনীয় শাখায় এবং পিএস হিসেবে তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে পিএস কাউসারকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সুকৌশলে নিজেই নিজের ছোট ভাই পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আমি কাউসারের ছোট ভাই বলছি, কিছু জানার থাকলে পরে ফোন দেন, এখন ভাই বাহিরে আছে। পরে তাকে বহুবার ফোন দিলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম মিহির কান্তি গুহ প্রথমেই পিএস কাওসার আলীর প্রসংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেন, তিনি সৎ ও অবিবাহিত । তিনি বলেন, ঐ পদে যোগ্য ব্যক্তি না পাওয়ায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তাকে রাখা হয়েছে। কিছু দুষ্ট প্রকৃতি লোক তার কাছে সুবিধা না নিতে পেরে তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। মনিরা রানী রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে তাকে চিনতে না পারলেও, পরে তাকে চিনতে পারেন এবং বলেন এরকম একজন আছেন তাকে মন্ত্রী মহোদয়ের সুপারিশে অফিসে রাখা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পিএস হিসেবে দায়িত্ব দেয়া বিধিসম্মত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব সু কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি। খালাসি পদের নারীর অফিসে কি কাজ জানতে চাইলে তিনি কথা বলেন, মন্ত্রী মহোদয় সুপারিশ করেছে তাই।
উল্লেখ্য যে, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে পশ্চিমাঞ্চল রেলের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক কন্ট্রোলার অব স্টোরস (সিওএস) প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার, সাবেক চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) এএমএম শাহনেওয়াজ, সাবেক সহকারী কন্ট্রোলার অব স্টোরস (এসিওএস) মো. জাহিদ কাওছার। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আরও ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
অভিযুক্ত ১০ জন হলেন-পশ্চিমাঞ্চল রেলের এসিসিএমসিআর শেখ আবদুল জব্বার, ডেপুটি সিওপিএস মোছা. হাসিনা খাতুন, ডিএমএ হেডকোয়ার্টার শ্যামলী রানী রায়, এফএএন্ডসিএও মো. শরিফুল ইসলাম, ডেপুটি সিসিএম ফুয়াদ হোসেন আনন্দ, ডিএফএ অর্থ মো. আলমগীর, এফএএন্ডসিএও মো. মসিহ-উল-হাসান, অতিরিক্ত এফএএন্ডসিএও মো. গোলাম রহমান, অতিরিক্ত এফএএন্ডসিও গোলাম রাব্বানী ও সাবেক সিসিএম ও বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম মিহির কান্তি গুহ। ২৯ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের জন্য ২০টি আইটেম কেনায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ট্রেন পরিচালনায়ও ঝুঁকি বাড়ে। কেনাকাটার ঘটনা তদন্তে ২০ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত বছরের ৯ ডিসেম্বর রেলপথমন্ত্রীর কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।