পলাশবাড়ীতে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বৃদ্ধা মায়ের ভাসমান বসবাস

সোহেলরানা,পলাশবাড়ী(গাইবান্ধা)থেকেঃ- বৃদ্ধা কয়েদভানু বেওয়া। বয়স ৭২ বছর ছুঁইছুঁই। তার একমাত্র ছেলে আশকর আলী(৫২)। ছেলেটিও বাকপ্রতিবন্ধী। উত্তরাধীকার সুত্রে কোনো সহায় সম্বল না থাকায় মা-ছেলে রয়েছে ঠিকানাহীন।বিভিন্ন হাট-বাজারে খেয়ে না খেয়ে ভাসমান বসবাস করে আসছে তারা। ২৭ নভেম্বর বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কাশিয়াবাড়ী আমিন মার্কেটের পাশে খোলা আকাশের নিচে বিছানাপত্র নিয়ে দেখা যায় ওই মা-ছেলেকে।

জানা যায়, ১৯৭০ সালে পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের আলতাব হোসেনের সঙ্গে কয়েদভানুর বিয়ে হয়। সেখানে দাম্পত্য জীবনে আশকর আলীর জন্ম হয়। এরপর বছর খানেক যেতে না যেতেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয় কয়েদভানুর। পরে কয়েদভানু সন্তানকে হাতে নিয়ে কাশিয়াবাড়ী গ্রামের তজের প্রধানের সঙ্গে আবারও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন পর কল্পনা ও গোলাপী নামে ২ মেয়ের জন্মদেন। এর পর সেখানেও কয়েদভানুকে তার স্বামী ডিভোর্স দেন। কয়েদভানু সন্তানদের কথা ভেবেই রয়ে যান ওই গ্রামেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জীবিকার তাগিদে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কয়েদভানু অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে অনেক দুঃখে-কষ্টে অন্ন জুগিয়ে জীবিকা নির্ভর করতেন। সময়ের সাথে সাথে বড় হয় আশকর আলীও। ছেলে আশকর একজন বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় পারেনা সে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে, পারেনা স্বেচ্ছায় খেতে। মা-ছেলে অভাবে পারেনা ভালো কোন খাবার খেতে, পারেনা ভাল কোন বস্ত্র পড়তে। এমনকি অর্থাভাবে পারেনা ভাল কোন চিকিৎসা সেবা নিতে। বর্তমানে কয়েদভানু ও ছেলে আশকরের নানা রোগ বাসা বেঁধেছে তাদের শরীরে। যেন বয়সের ভাঁড়ে নুয়ে পরেছেন মা-ছেলে দুজনে। স্থানীয়রা বলেন, তাদের নিজস্ব কোন ঘরবাড়ী না থাকায় দীর্ঘদিন অন্যের আশ্রয়ে থাকতেন। কিন্তু ৮ মাস পুর্বে একমাত্র থাকার সেই আশ্রয়টুকু হারিয়ে এখন বিভিন্ন হাট-বাজারে ভাসমানভাবে বসবাস করছে তারা। আবার কখনও কাশিয়াবাড়ী আমিন মার্কেটের বারান্দায় আবার কখনও খোলা আকাশের নিচে এই কনকনে শীতে রাত্রি যাপন করছেন।এছাড়াও রাস্তায় চুলা বসিয়ে খাবার রান্না করে থাকেন।বৃদ্ধা কয়েদদ ভানু। শুধু তাই নয়, তাদের পড়নে নেই কোন ভালো কাপড়-চোপর। নেই কোন খাবারের কোন সু-ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে সরকারী ত্রাণসামগ্রী ও বর্তমানে বাজারের কতিপয় ব্যবসায়ীদের এক টাকা, দু টাকা করে চেয়ে নিয়ে প্রতিনিয়ত দিন চলে মা-ছেলের। তাদের দেখভালের কোন আত্মীয় স্বজন না থাকায় অসহায়ত্ব জীবনে বৃদ্ধা ৭২ বছর বয়সী মা কয়েদভানু ছেলে ৫২ বছর বয়সী শারীরিক ভারসাম্যহীন আশকর এভাবেই দেখভাল করে চলেছেন।

মা-ছেলে করুন অবস্থা দেখে পলাশবাড়ী উপজেলার কর্মরত সাংবাদিক সোহেলরানা ফেসবুক আইডিতে বৃদ্ধ ৭২ বছর বয়সী মা কয়েদভানু ও বাকপ্রতিবন্ধী ছেলে করুন অবস্থার একটি স্ট্যাটাস দিলে ওই রাতেই আমেরিকা প্রবাসী প্রকৌশলী আবু জাহিদ নিউ তাদেরকে একটি টিনসেড ঘর,টিউবওয়েল ও একটি টয়লেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ বিষয়ে বৃদ্ধা কয়েদভানু বেওয়া বলেন, বুড়া বয়সে আর চলতে পারছি না। সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ছেলে আশকর আলীরও একই অবস্থা। কেউ যদি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে হয়তো মৃত্যু আগে কিছুটা সুখ পাওয়া যেতো।

কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু বলেন, কয়েদভানু বেওয়ার ছেলের নামে ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদেরকে বিভিন্নভাবে ত্রাণসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Next Post

আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়ার আহ্বান ওলামালীগের।

বুধ ডিসে. ২ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আলেম-ওলামা, পীর- মাশায়েখদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি করেন সংগঠনটির নেতারা। বিবৃতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links