পরপর তিনবার কোনো ব্যক্তির কাছে জাল নোট পাওয়া গেলে তাকে সর্বোচ্চ ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড

Ava Desk : পরপর তিনবার কোনো ব্যক্তির কাছে পাঁচশ’ পিসের বেশি যে কোনো মূল্যমানের জাল নোট পাওয়া গেলে তাকে সর্বোচ্চ ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
তবে প্রথমবার একই সংখ্যক জাল মুদ্রা পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। দ্বিতীয়বার একই ব্যক্তির কাছ থেকে তা পাওয়া গেলে তাকে সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ড বা আর্থিক জরিমানা প্রথমবারের তুলনায় দ্বিগুণ অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। এই বিধান রেখেই ‘জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ’ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘জাল নোট কারবারিদের কঠোরভাবে দমন করতে নতুন আইন করা হচ্ছে। এটি হলে সহজেই জামিন পাওয়া বন্ধ এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। অন্য আইনে জাল নোটের মামলার বিচারে অনেক সময় লাগছে। যে কারণে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া যাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) অতিরিক্ত সচিব (ব্যাংক) ফজলুর রহমান বলেন, ‘খসড়া আইন রূপান্তরের জন্য নিয়ম অনুযায়ী এফআইডি কাজ করবে। তবে আইনের খসড়া এখন পর্যন্ত আমার কাছে পৌঁছেনি।’
জানা গেছে, আইনটি পাস হলে এটি হবে দেশে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে প্রথম আইন। আইনটি বাস্তবায়নে ‘জাতীয় এবং জেলা’ পর্যায়ে কমিটি থাকবে। কমিটির সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে আইনের আওতায় গঠন করা হবে ‘জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেল’। জাল নোট সংক্রান্ত খবর দেয়া হলে পুরস্কার দেয়া হবে সংবাদদাতাকে- এ বিধানও থাকছে আইনে।
জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইনের খসড়ায় অপরাধীদের জন্য পর পর তিন দফা শাস্তি আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। প্রথমবার অপরাধ করে শাস্তি ভোগ করে দ্বিতীয়বার একই অপরাধে শাস্তি হবে প্রথমবারের তুলনায় দ্বিগুণ। ফের একই ব্যক্তি এ অপরাধ তৃতীয়বার করলে দণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ ও সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন হবে।
খসড়ায় দণ্ডবিধিতে আরও বলা হয়, জাল নোটের সংখ্যা পাঁচশ’ পিসের (যে কোনো মূল্যমানের) কম হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হবে। একই ব্যক্তির কাছ থেকে একই পরিমাণ নোট (পাঁচশ’ পিসের কম) দ্বিতীয়বার পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ড হবে। একই ব্যক্তির কাছে তৃতীয়বার (পাচশ’ পিসের কম) পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা আর্থিক দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
তবে যে কোনো মূল্যমানের জাল নোট একশ পিসের কম পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। যদি একই ব্যক্তির কাছে দ্বিতীয়বার একই পরিমাণ নোট (একশ’ পিসের কম) পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হবে। তৃতীয়বার একই ব্যক্তি একই পরিমাণ (একশ’ পিসের কম) জাল নোট নিয়ে ধরা পড়লে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, জাল নোটের কার্যক্রম প্রতিরোধ এবং সংঘটিত এ সংক্রান্ত বিচারের জন্য পৃথক কোনো আইন দেশে কার্যকর নেই। ফলে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪৮৯(ক)-(ঘ) ধারা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-এর ২৫(ক) ধারা অনুযায়ী জাল নোট সংক্রান্ত অপরাধের বিচার চলছে।
কিন্তু এসব আইনে বিচার করতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিচারকালে শুনানির নির্ধারিত দিনে প্রায়সময় সাক্ষী উপস্থিত না থাকায় মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরপরাধ হওয়া এবং মাত্র কয়েক পিস জাল মুদ্রা পাওয়া কঠোর শাস্তির ভোগ করছে। এসব দিক ভেবে সরকার দেশে পৃথক আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
পৃথক এ আইন প্রণয়নের জন্য ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সভায় ৬ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আইনের খসড়া প্রণয়ন ও চূড়ান্ত করে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. সুলতান মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘আইনের খসড়াটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লিগ্যাল রিটেইনার এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজ্ঞ দিয়ে ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ২৬ অক্টোবর এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপন করা হয়। খসড়াটি আইনে রূপান্তর করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ রইল।’
নতুন আইনে জাল মুদ্রা প্রস্তুত, ক্রয়-বিক্রয়, খাঁটি বলে ব্যবহার ও লেনদেন, প্রতারণার উদ্দেশ্যে নিজের দখলে রাখা, দেশ থেকে বিদেশ বা বিদেশ থেকে সরবরাহ, পরিবহন ও পাচার, অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিতরণ অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এছাড়া জাল মুদ্রা তৈরির জন্য যন্ত্রপাতি বা উৎপাদন বা দ্রব্যাদি প্রস্তুত, সরবরাহ, আমদানি, মেরামত, বাহন ও ক্রয়-বিক্রয়ও অপরাধ। মুদ্রা তৈরি সংক্রান্ত পদ্ধতি, তথ্য আদান-প্রদান, ফাইল ক্লিপ, হার্ডডিস্ক, এ সংক্রান্ত কোনো গুজব ছড়ানো এ আইনের আওতায় অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
জানা গেছে, আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ সচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটিতে এফআইডি’র অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব), উপপুলিশ পরিদর্শক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিচালক এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) প্রতিনিধি থাকবেন। এছাড়া জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে পৃথক আরও একটি জেলা কমিটিও গঠন করা হবে।
উভয় কমিটির সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ‘জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেল’ গঠন করা হবে। এর প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের সংশ্লিষ্ট ডেপুটি গভর্নর। সেল থেকে অন্যান্য দেশে এ ধরনের আইনের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনের অভাবের দুর্বলতা নিয়ে দেশে জাল নোটের বিস্তার ঘটছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৯০০টি জাল নোট ধরা পড়ে। তিন বছরে প্রায় তিন কোটি টাকার জাল নোট শনাক্ত করা হয়েছে। জাল নোটের বিস্তার ঠেকাতে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জাল নোট সংক্রান্ত মামলা হয় ৮৫টি। এর আগে ২০১৭ সালে ২৮৭টি, ২০১৬ সালে ৩৪৪টি, ২০১৫ সালে ৪১০টি এবং ২০১৪ সালে ৩৬৮টি মামলা হয়। Jugantor

Next Post

সিঁড়ির চৌকিতে পড়ে আছে, গলায় গুলির রক্তাক্ত দাগ। এখনও গুলির দাগটি ভেসে ওঠে।

বুধ আগস্ট ১৫ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : শোকাবহ ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ফজলুল হক মনির ছেলে তাপস বলেন, অন্যদের বাবা-মায়ের কত স্মৃতি। আমারও তো ইচ্ছে করে অন্যদের মতো বাবা-মায়ের স্মৃতিচারণ করতে। আবেগতাড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, অনেক ভেবেছি, অনেক চিন্তা করেছি, অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোনো […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links