নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরে সিগারেটের (ডার্বি, পাইলট, হলিউড, শেখ) দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে শলাকা প্রতি মাত্র ২০ পয়সা যা ৫.৭ শতাংশ। অথচ এসময়ে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ। নিরেট সত্য হলো আমাদের দেশের ধূমপায়ীদের প্রায় ৭২ শতাংশই হলো গরীব বা নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা।
যাদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সামর্থ নেই বললেই চলে। ফলে প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃতমূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের দেশের গরীব জনগোষ্ঠী। এতে নিম্নস্তরের সিগারেট দাম কমবে এবং বাড়বে ধূমপায়ীর সংখ্যাও। বাড়বে অকাল মৃত্যুর মিছিল, আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে দেশের জনস্বাস্থ্য।উ
আজ সোমবার সকাল ১০টায় রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে সকল তামাকজাত পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি, সুনির্দিষ্ট করারোপ, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এমন শঙ্কার কথা জানান।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স-সিটিএফকে’ এর সহযোগিতায় রাজশাহীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদ মো. জামাত খান।
এসিডি’র এডভোকেসি অফিসার মো. শরীফুল ইসলাম শামীমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আলী হোসেন, মো. শাহীনুর রহমান, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মনিরুল ইসলাম পায়েল, মো. মেরাজ উদ্দিন তালুকদারসহ এসিডির প্রায় ৩০ জন কর্মী, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে শুধু মূল্য পরিবর্তনের মাধ্যমে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৬৩ টাকা, ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা। সরকারের এই পদক্ষেপে বিগত বছরের তুলনায় মূল্যস্তরভেদে তামাক কোম্পানিগুলোর আয় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। ফলে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এবারের বাজেটে ব্যাপকভাবে লাভবান করে দেয়া হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির মূল্য দুই বছর পর মাত্র ১.৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি খুবই নগণ্য এবং এরফলে প্রতি শলাকা বিড়ির দাম বাড়বে মাত্র ৬ পয়সা। বিড়ির প্রধান ভোক্তা নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ। দরিদ্র মানুষের উপর এই সামান্য মূল্যবৃদ্ধিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।
প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু এবং তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ মানুষ হাসপাতালে গমন রোধ করা সম্ভব হবে না। কাজেই মানববন্ধন থেকে বক্তারা- মৃত্যুর এই দীর্ঘ মিছিল বন্ধে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা নির্ধারণ; নিম্নস্তরের সিগারেটের ওপর বিদ্যমান ৫৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৬০ শতাংশ এবং মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে বিদ্যমান ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানান।
তারা বলেন, এটি বাস্তবায়ন করা হলে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেট থেকে সরকার যথাক্রমে, ১.৮৫ টাকা, ২.৫২ টাকা, ৩.৭২ টাকা এবং ৪.৯২ টাকা বাড়তি রাজস্ব আয়সহ বছরে সরকারের ৪,০০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে। বক্তারা ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দ্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ; অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের বিদ্যমান ১০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক এবং প্রক্রিয়াজাত তামাকপণ্যের ওপর ইতোপূর্বে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহালেরও দাবি জানান।
এস/এল