নন্দীগ্রামে শিকলে বন্দি রব্বানীর মানবেতর জীবন যাপন

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ হাতে লোহার শিকল, জানালার সঙ্গে শিকলে তালা লাগানো। কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো শুয়ে বসে সময় কাটছে। কখনো হাসি-কান্নার মধ্য দিয়েই কাটছে তার জীবন। শিকল পরা অবস্থায় দিনের শুরু হয়, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারেও থাকে শিকল। গোসল, খাওয়া এবং রাতের ঘুমসহ ২৪ ঘন্টাই শিকলে বন্দি। নিত্যদিনের সঙ্গি যেনো লোহার শিকল। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ৪ং  থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের পারশুন গ্রামের (ক্ষুদিয়াপাড়ার) ২৫ বছর বয়সী রব্বানী’র জীবন তিন বছর ধরে শিকলে বন্দি। মানসিক ভারসাম্যহীন এই যুবকের চিকিৎসা অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। দরিদ্র পরিবারের শেষ সম্বল ১০কাঠা জমি বিক্রি করে ডজনখানেক ডাক্তার দেখিয়েছেন, অন্তত ২০জন কবিরাজের কাছেও ছুটে গেছেন। তবুও স্বাভাবিক জীবনে ফিরেনি রব্বানী। দারিদ্রতার কারণে অসহায় পিতা-মাতা সন্তানের চিকিৎসার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। তাকে শিকল মুক্ত করে ছেড়ে দিলে ছোটাছুটি করে, যাকেই সামনে পায় তাকেই মারধর করে। মুক্ত থাকলে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটায় এমন আশঙ্কায় শিকলে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রব্বানীর পরিবারের থাকার মতো দুইটা মাটির ঘর আছে। ঘরের সামনের দরজার দেয়ালের মাঝে ছোট একটি ফাঁকা জানালার ওপর বসে আছে রব্বানী। মাঝে মাঝে কথা বলে, তবে অস্পষ্ট। পরিচিত কাউকে দেখলে কখনো চিনতে পারে। আবার মুহুর্তের মধ্যেই নিজের কাছেও অচেনা হয়ে যায় রব্বানী। ভুলে যায় পরিবার ও পরিচিতদের। অস্বাভাবিক আচরনের সঙ্গে শুরু হয় চিৎকার। সন্তানের এ অবস্থা দেখে চিন্তায় কাঁদছেন পিতা-মাতা আর বৃদ্ধ দাদি।

পরিবার জানায়, পারশুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে রব্বানী। ২০১৮ সাল থেকে হঠাতই সে মানসিক ভারসাম্য হারায়। ২০১৯ সালে বাড়িতেই তাকে শিকল বন্দি করা হয়। এ অবস্থায় চলে চিকিৎসা। রব্বানীর পিতা গোলাম মোস্তফা অন্যের জমিতে কৃষাণের কাজ করেন। তার মা মর্জিনা বেগম নিজেও নানা রোগে অসুস্থ। এরপরেও অসুস্থ সন্তানের যত্ন নিচ্ছেন। পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রব্বানী সবার বড়। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারিভাবে চিকিৎসা সহযোগিতার জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসক ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছে রব্বানীর পরিবার।

থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের পারশুন গ্রামের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসিখুশি, শান্ত এবং ভদ্র স্বভাবের রব্বানী তার বাবার সাথে কৃষাণের কাজ করতো। ২০১৮ সালে হঠাৎই সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়। তার আচরণ অস্বাভাবিক হয় এবং বেশকয়েকবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের লোকজন বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। পরিবার যখন সচ্ছল ছিল, তখন রব্বানীর চিকিৎসা চালিয়ে গেছে। বর্তমানে তাদের সংসারেই টানাটানি।

গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে রব্বানীর মা মর্জিনা বেগম ও দাদি সুফিয়া বেওয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার মা বলেন, দিনে ও রাতে ছেলের পায়ে, কখনো হাতে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। এ দৃশ্য মা হয়ে সহ্য করতে পারছি না। নিজেও সারা রাত ঘুমাতে পারি না। গরীব মানুষ, ঠিকমতো সংসার চালানোই আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের উন্নত চিকিৎসা করব কীভাবে? রব্বানীকে শিকল মুক্ত রাখলে গ্রামের মানুষ এবং পশু যা সামনে পায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাড়ি ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। সন্তানকে হারাতে চান না, মানুষের ক্ষতি করবে ভেবে নিরুপায় হয়ে শিকল বন্দি করে রেখেছেন।

রব্বানীর ছোট ভাই ওবায়দুল জানায়, তাদের শেষ সম্বল মায়ের ১০কাঠা জমি বিক্রি করে বগুড়া এবং রাজশাহীতে চিকিৎসা করেছেন। ২০টির বেশি কবিরাজ, ডজনখানেক ডাক্তারও দেখিয়েছেন। বর্তমানে তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। এজন্য চিকিৎসা বন্ধ। সরকারি সহ বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়ে নিজের ০১৭৬৬-৩৪৮৭৯৭ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিফা নুসরাত জানান, গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে শিকলে বন্দি রব্বানীর বিষয়ে জেনেছি। সমাজ সেবা অফিসারকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানাবো।

Next Post

বর্তমান সরকার নারী উদ্যোক্তাদের কল্যানে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন- জিটু

মঙ্গল ফেব্রু. ৭ , ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধিঃএফবিসিসিআই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার এন্ড ফরেন ডেলিগেশন কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু বলেছেন বর্তমান সরকার নারী উদ্যোক্তাদের কল্যানে নিরলস  ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার  নারী উদ্যোক্তাদের পূনর্বাসন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বময় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে।  […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links