নন্দীগ্রামে মাচায় ঝুলছে রসালো তরমুজ, স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর জাব্বির

আব্দুর রউফ উজ্জল, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ দূর থেকে দেখলে মনে হবে মাচায় ঝুলছে লাউ-কুমড়া অথচ, নিকটে গিয়ে একটু ভালো করে দেখলে ভুল ভাঙবে যে এগুলো লাউ বা কুমড়া নয়, নেট দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে এক একটা রসালো তরমুজ। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫নং ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক জাব্বির হোসেনের বাগানে গিয়ে অসময়ের এমন রসালো তরমুজ দেখে যে কারোরই মন ভরে যাবে। হাইব্রিড জাতের এ তরমুজই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে উপজেলার চাকলমা গ্রামের জাব্বিরকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতের চারদিকে বেড়িবাঁধের মতো উঁচু মাটির ঢাল। সেই ঢালে মাচায় ঝুলে আছে রসালো তরমুজ। একটি-দুটি নয়, শতশত তরমুজ। মাচায় ঝুলে থাকা তরমুজগুলো বাহারি রঙের। কোনোটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ, কোনোটি কালচে সবুজ, আবার কোনোটি হলুদ। তরমুজগুলোর ভেতরের রঙেও পার্থক্য আছে। কোনোটি কাটলে ভেতরে টকটকে লাল, আবার কোনোটি পাকা মাল্টার মতো হলুদাভ কমলা। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে জাব্বির হোসেন ‘তৃপ্তি’ ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত, নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতসহ কয়েকটি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এজন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন তাকে উন্নতজাতের বীজ সংগ্রহ করে দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। মোট তিন জাতের তরমুজের বীজ লাগানো হয়েছে।

তার সাথে কথা বললে কৃষক জাব্বির হোসেন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ২০ শতক জমিতে তরমুজ বীজ রোপণ করেছি। রোপণের ৪৪ দিনের মধ্যে তরমুজের ফুল ও ফল আসে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ তরমুজ রয়েছে তার জমিতে। এদের মধ্যে কোনোটা ২ কেজি থেকে ৩ কেজি ওজন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর ১৫-২০ দিন পরেই তিনি তরমুজ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবো। এ তরমুজ উৎপাদনে জাব্বির হোসেন প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার করেছেন এবং এতে কোনো বিষ প্রয়োগ করেননি। পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। এসবই তিনি করেছেন কৃষি অফিসের পরামর্শে। এতে এ পর্যন্ত তার প্রায় ৩৭/৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬৫ টাকায়, আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সেই হিসেব করে লাভের আশায় কৃষক জাব্বির হোসেনের মুখে প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে।

অত্র এলাকার কৃষক মিলন সরকার বলেন, ‘অসময়ে তরমুজ চাষ করে জাব্বির হোসেন এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। আমি নিজে তার বাগান দেখে এসেছি। বাগানে প্রচুর ফল এসেছে। আরও অনেক ফুল আছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে আরও অনেক ফল আসবে বলে মনে হচ্ছে। এগুলো সে বিক্রি করে ভাল লাভ করতে পারবে বলে মনে করছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু বলেন, পরিশ্রম করলে তার ফল অবশ্যই আসবে। তার প্রমাণ পেয়েছেন কৃষক জাব্বির হোসেন। এ কৃষক রসালো ফল তরমুজ চাষ করে উপজেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার সামান্য জমিতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ করা এই ফসলই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে উপজেলার আরও অনেক কৃষককে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি আরও অনেকেই তরমুজ চাষে আগ্রহী হবে।

Next Post

রাজশাহীতে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মঙ্গল সেপ্টে. ১৩ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশ লাইন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে এই জাদুঘরের উদ্বোধন করেন তিনি। জাদুঘরে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহীতে শহীদ হওয়া পুলিশ সদস্যদের নানা জিনিস স্থান পেয়েছে। এটির উদ্বোধনের পর মাদক ও জঙ্গিবিরোধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links