ধান- সংগ্রহ নিয়ে সরকার উভয় সংকটে, কৃষক না প্রকৃতপক্ষে লাভবান মিলাররা, খাদ্যমন্ত্রী।

আভা ডেস্কঃ বাজারমূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেশি ধরে সাড়ে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহে যে ৫৭৫ কোটি টাকা কৃষকের পাওয়ার কথা, তার পুরোটাই চলে যাচ্ছে মিলার, মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের পকেটে। নীতিমালা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত চালকল মালিক ছাড়া সরকার কৃষকের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করতে পারে না। ফলে কৃষককে বাঁচাতে সরকারের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযানের মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যেতে বসেছে। অথচ কৃষকের টাকায় আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন মিলাররা।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা/পুটি) পাইকারি ২৬-২৮ টাকা আর খুচরা ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের স্বার্থে গড়ে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেশি ধরে চালের দাম ৩৬ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। সে হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টন চালে সরকারের ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৫৭৫ কোটি টাকা। সরকারের দেয়া বাড়তি এ টাকার পুরোটাই মিলারদের পকেটে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ধান- সংগ্রহ নিয়ে সরকার উভয় সংকটে। চালের দাম বৃদ্ধি পেলে নেতিবাচক সংবাদে পত্র-পত্রিকা ভরে যায়। অন্যদিকে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে কৃষকের উৎপাদন খরচই ওঠে না। সরকার কৃষক বাঁচাতে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল কিনে থাকে। কিন্তু এই বেশি টাকা কৃষকের পকেটে যায় না। সরকারি শর্ত মেনে কৃষক চাল দিতে না পারায়, তা কেনা হয় মিলারদের কাছ থেকে। ফলে লাভবান হন মিলাররাই।

এ থেকে উত্তরণের উপায় কী- জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে পারলে সরকারের দেয়া মুনাফার টাকা কৃষকরা পেতেন। বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। ভবিষ্যতে বেশি করে ধান কিনতে সারা দেশে ‘মিনি পেডি সাইলো’ নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি সাইলোতে ড্রায়ার ও ফেনি মেশিন থাকবে, যাতে কৃষক ভেজা ধান দিলেও কোনো সমস্যা না হয়। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদনের জন্য শিগগির পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

চলতি বোরো মৌসুমে সরকার যে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মধ্যে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল, দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং বাকি দেড় লাখ টন ধান (এক লাখ টন চালের সমপরিমাণ) সংগ্রহ করা হবে। ২৫ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই সংগ্রহ অভিযান চলবে। খাদ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত ২৮ মার্চ খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী জানান, ৩৬ টাকা দরে সেদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা দরে আতপ চাল এবং ২৬ টাকা দরে ধান সংগ্রহ করা হবে। ইতিমধ্যে দেশব্যাপী বোরো চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালাই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার প্রধান বাধা। নীতিমালায় বলা হয়েছে- মৌসুমে উৎপাদিত ধান ও গম সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। তবে ওই কৃষককে অবশ্যই কৃষি মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কৃষক হতে হবে। একজন কৃষক সর্বনিু ১২০ কেজি ধান, ১৫০ কেজি গম এবং সর্বোচ্চ তিন টন ধান-গম দিতে পারবেন। কোনো অবস্থায়ই তালিকার বাইরের কোনো কৃষকের ধান গ্রহণ করা যাবে না। অন্যদিকে চাল অবশ্যই সরকারি তালিকাভুক্ত চালকল মালিকদের (মিলার) কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী নিতে হবে। কোনো কৃষকের কাছ থেকে বা তালিকার বাইরের কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাল গ্রহণ করা যাবে না। এ ছাড়া ধান গুদামে রাখার জন্য যে পরিমাণ শুষ্ক থাকা প্রয়োজন, কৃষক সেভাবে ধান সরবরাহ করতে পারেন না। এটি কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। অন্যদিকে, সরকারি শর্ত মেনে গুদামে রাখার উপযোগী চাল কৃষক দিতে পারেন না বিধায় চালকল মালিকদের কাছ থেকেই চাল সংগ্রহ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। ২০০৬ সালের জাতীয় খাদ্যনীতিতেও অতিরিক্ত উৎস হিসেবে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। ১৯৯৬ সালের কৃষিশুমারি অনুযায়ী ক্ষুদ্র-প্রান্তিক, মাঝারি ও বড় কৃষকের সংখ্যা যথাক্রমে ৭৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ১৭ দশমিক ৬১ ও ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ করে ফসল ফলায়। তারা ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তা বিক্রি করে দেয়। এ সময় যদি তাদের কষ্টার্জিত ফসল সরকার ন্যায্যদামে সংগ্রহ করে তাহলে তারা উপকৃত হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী যুগান্তরকে বলেন, কৃষকের পকেটে মুনাফা তুলে দিতে হলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। ১-২ লাখ টন ধান না কিনে ১৫-২০ লাখ টন কিনতে হবে। পাশাপাশি দেশের বাইরে ধান রফতানি করার সুযোগ উন্মুক্ত করতে হবে। নানাভাবে কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। বর্তমানে প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ২৮-২৯ টাকা। সেটা কমিয়ে ১৯-২০ টাকায় নামাতে হবে। এসব পদক্ষেপ নেয়া হলে কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাবে বলে আমার বিশ্বাস।

যুগান্তর

Next Post

হুনছেননি বালিশ গুলো কিন্তু জিনে তুলেছে, বিনিময়ে মিষ্টি খেতে চেয়েছিল জিনরা। বালিশ দুর্নীতি।

সোম মে ২৭ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ বিমানবন্দর রেলস্টেশনের প্লাটফরমে পা ছড়িয়ে বসে আছি। ময়মনসিংহগামী যমুনা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে কমলাপুর ছাড়লে ঘড়িতে পাঁচটা দশ বাজার আগেই এখানে পৌঁছে যাওয়ার কথা। মনে হচ্ছে, আজ ট্রেন লেট হবে। এদেশে ট্রেন লেট হওয়াকে কেউ অপরাধ হিসেবে গণ্য করে না। কাজেই এটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। এই মুহূর্তে আমার […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links