আভা ডেস্কঃ সিলেটের এমসি কলেজে ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ষণ, নারীনির্যাতন ও সহিংসতার বেশ কিছু ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এবার এসব অপরাধের মূলোৎপাটনে সরকার হাঁটছে হার্ডলাইনে। এ সংক্রান্ত আইন আরও কঠোর করার কথাও ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এসব ঘটনার পর দ্রুত পদক্ষেপ প্রমাণ করে, সরকার যেকোনো অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ধর্ষণের মতো ঘটনার সাজার ক্ষেত্রে আইনের পরিবর্তন এনে মৃত্যুদণ্ড করা হচ্ছে। দেশব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে ধর্ষণের মতো অপরাধের লাগাম টানতেই ‘ঐতিহাসিক’ এই কঠোরতম অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের।
এ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বর্তমান আইনে ধর্ষণের সাজায় পরিবর্তন এনে তা মৃত্যুদণ্ড করা হচ্ছে। এ সম্পর্কিত একটি সংশোধিত আইনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, যেকোনো অপরাধের মূলোৎপাটনে শেখ হাসিনার কোনো পিছুটান নেই। প্রতিটি ঘটনার বিচার হবে। কোনো অপরাধীই রক্ষা পাবে না। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, সহিংসতাসহ যেকোনো অপরাধে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। এর মধ্যে ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলা, সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণ, নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন উল্লেখযোগ্য। কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নাম উঠে এসেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা শিক্ষক, চার্চের ফাদারসহ বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা আলোচনায় এসেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, অপরাধীদের ‘অপরাধী’ হিসেবেই দেখছে সরকার। শেখ হাসিনার সরকার কোনো ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে আড়াল করতে চায় না। দলের কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধীদের কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। দলীয় পরিচয় তাদের রক্ষার ঢাল হতে পারে না। তাই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। কোনো প্রতিবাদ-আন্দোলনের আগেই সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব অপরাধ ও ঘৃণ্য অপকর্মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান সবসময় স্পষ্ট ও কঠোর।
ইতোমধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার অপরাধীদের বিচার চলছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোনো কোনো ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ও হয়েছে। কোনো ঘটনাই সরকার ছেড়ে দেয়নি।
গত কয়েকদিনে নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে ও এসব বন্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। এরসঙ্গে রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। বাংলাদেশ মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ পৃথকভাবে কর্মসূচি দিয়ে এই ধরনের সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়, আওয়ামী লীগের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বশীলরা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা বলেন, ‘নারী নির্যাতনকারীদের ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সময় দেখতে হবে, তারা যেন আইনের ফাঁকফোকর গলে বের না হয়ে যায়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘ধর্ষকের অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার ফাঁসি হওয়া উচিত। ধর্ষক, ধর্ষকই; তার কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক পরিচয় নেই। যখনই কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, আমরা সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসি, এসপি ও ওসিকে ফোন করে আসামিদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভিকটিমের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আইনগত সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
ধর্ষণের মামলা দ্রুত তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তসহ ভিকটিমের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ ধর্ষকদের ধরতে প্রয়োজনে ‘ব্লক রেইড’ পদ্ধতিতে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশনাও দেন তিনি। সুত্রঃ রাইজিংবিডি