দুর্গাপুর প্রতিনিধিঃ দুর্গাপুরে মসজিদের ধান তুলতে গিয়ে দুই পক্ষের সংর্ঘষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ছামের আলী শাহ নামের এক ব্যক্তির বাড়ির জানালা, বিদ্যুতিক বাল্ব ভাঙচুর ও বাড়িতে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠছে শহিদুল নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
সংর্ঘষ এড়াতে ৯৯৯-এ কল দিলে দফায় দফায় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের নামোদুরখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলাল উদ্দিন বলেন, নামোদুরখালী গ্রামে ৮-৯টা পাড়া নিয়ে একটি বড় জামে মসজিদ রয়েছে। প্রায় একমাস আগে মসজিদের পুরাতন কমিটি বদল করে নতুন কমিটি গঠন করে একপক্ষ। নতুন কমিটির সভাপতি শাহার আলী ও শহিদুল ইসলামকে সম্পাদক করা হয়। অনেকটা গোপনে নতুন কমিটি ঘোষণা করায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মসজিদের সভাপতি শাহার আলী, সম্পাদক শহিদুল, স্থানীয় তালেব, সুরুজ, ওবায়দুলসহ কয়েকজন মসজিদের নামে ধান তুলতে বের হন। তিনি বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় নামোদুর খালী সোনারপাড়া ছামের আলীর বাড়িতে আসেন। তারপর তারা মসজিদের জন্য দুইমণ ধান চেয়ে বসেন। ছামের বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী চায়না এখন ধান দিবে না বলে জানায়।
এতে মসজিদ কমিটির সম্পাদক শহিদুল বারান্দায় রাখা ধানের বস্তা তুলে নিয়ে যেতে চাইলে ছামের আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফা বাধা প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের সংঘর্ষের রূপ নেয়। পরে শহিদুলের লোকজন লাঠিসোডা নিয়ে ছামের আলীর বাড়ির জানালা, বিদ্যুতিক বাল্ব ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে থানার পুলিশ তিন দফা ঘটনাস্থলে আসেন।
ছামের আলী শাহ বলেন, ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। এ জন্য আমার স্ত্রী তাদের এখন ধান দিবে না বলে জানায়। তারপরও আমার বাড়ির বারান্দা থেকে ধানের বস্তা তুলে নিয়ে যেতে চায় শহিদুল। প্রতিবাদ করলে তারা লাঠিসোটা নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির জানালা, বিদ্যুতিক বাল্ব ভাঙচুর করে বাড়িতে তালা মেরে দেয়।
তাদের হামলায় আমার ছেলে ও তার স্ত্রী আহত হয়। পরে থানার পুলিশ এসে আমাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, এখন আমরা থানায় অভিযোগ দিতে যেতে পারছি না। তারা বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। বাড়ির বাহিরে গেলেই নাকি আমাদের শেষ করে দেওয়া হবে। এ ভয়ে বাড়ির বাহিরে যেতে পারছি না।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে মসজিদের ধান চাইতে গেলে উল্টো ছামের আলীর ছেলে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমার চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক আহত হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও আরও দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রেজুলেশনের মাধ্যমে সবার সম্মতিক্রমে মসজিদের নতুন কমিটি গঠণ করা হয়েছে, এখানে কারো দ্বিমত নেই।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, মসজিদের নতুন কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। দীর্ঘদিন ধরে ওই মসজিদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন প্রবীণ ব্যক্তি সাবেক মেম্বার মজিবুর রহমান। ওই প্রবীণ ব্যক্তিকে চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করে শাহার ও শহিদুল। নতুন কমিটির লোকজন এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা না করে বিভিন্ন রকমের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাশমত আলী বলেন, দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে দফায় দফায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় ওসি।