দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, আত্মহত্যার হুমকি সাবেক এমপি আমজাদ হোসেনের ।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে রাজনীতিতে অবমূল্যায়নের শিকার হয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয়া সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন তালুকদারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন তালুকদার পরিচয় দিবেন আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে কিন্তু নেত্রীর সিদ্ধান্তকে অমান্য করবেন, জাতীয় প্রতীক নৌকা মার্কাকে পদদলিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করে দিবেন। এমন নেতাদের আওয়ামী লীগ করার নৈতিক অধিকার নেই।

মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, আমজাদ হোসেন ২৭ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে দলে পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। ওই সময় ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার অত্যাচার-অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে ১৯৮৬ সালের দলীয় এমপি প্রার্থী আখতারুল করিম হারুনসহ অনেকেই দল ছাড়তে বাধ্য হন। যার জন্য সেই সময়ে আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমজাদ হোসেন ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে দলীয় মতামত উপেক্ষা করে টিআর, কাবিখা প্রকল্প নামে-বেনামে বিক্রয় করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেন।

এ ছাড়া ২০০১ সালে উলিপুর পৌরসভা নির্বাচনে তার পুত্র সাজাদুর রহমান তালুকদারকে দলীয় সমর্থন দেয়া হলে ভোটের দিন দুপুর ১২টার পরই বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে গা-ঢাকা দেন। জনশ্রুতি রয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তালুকদার পরিবার এই কাজটি করেন।

পরবর্তী পৌরসভা নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী আবদুল হামিদ সরকারের বিরুদ্ধে তার পুত্র সাজাদুর রহমান তালুকদার নির্বাচন করে হেরে যান। ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে তৎকালীন মেয়রকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে সেখানেও তার পুত্র বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় বিএনপির প্রার্থীর বিজয়কে সহজ করে দেন। তিনি মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগ, না পেলে আমজাদ লীগ।

সংবাদ সম্মেলনে গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে অধ্যাপক এমএ মমিনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে আমজাদ হোসেন তালুকদার ও তার অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মতি শিউলীর দুর্নীতিবাজ স্বামী দুদকের মামলার আসামি প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হককে দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করান। ওই নির্বাচনে আমজাদ হোসেন তালুকদার ও মতি শিউলীগং বাইসাইকেল প্রতীকের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালান।

তিনি আরও বলেন, সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন তালুকদার সংবাদ সম্মেলন করে রাজনীতিতে অবমূল্যায়নের কথা বলে যে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া ও বিদ্বেষ প্রসূত বক্তব্য। তার এ ধরনের বক্তব্যের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসন ও দলের সব কর্মকাণ্ডে তাদের ডাকা হলেও নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতেই তারা উপস্থিত হন না। তিনিসহ তার অনুসারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই চলছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এরশাদ-ই হাবীব মোফা, সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন মজুমদার, দফতর সম্পাদক প্রভাষক নিমাই সিংহ, প্রচার সম্পাদক মোখলেছুর রহমান, সহ-প্রচার সম্পাদক প্রভাষক শাহিনুর আলমগীর, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক মঞ্জুরুল সরদার বাবুসহ উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

এ ব্যাপারে সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন তালুকদার বলেন, দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার প্রশ্নই উঠে না। গোলাম হোসেন মন্টুসহ তার পক্ষীয় লোকজন ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নেত্রীর সিদ্ধান্তকে অমান্য করে মহাজোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলু সরকারের পক্ষে কাজ করেন। এ ছাড়াও দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতি ও ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে মাত্র দুইটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

একইভাবে গত পৌরসভা নির্বাচনে জনপ্রিয় নেতা সাজাদুর রহমান তালুকদারকে মনোনয়ন না দিয়ে দুর্বল প্রার্থীকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী করে নৌকার পরাজয় নিশ্চিত করা হয় বলেও জানান তিনি।

Next Post

বগুড়ায় শিক্ষককে পেটালেন শিক্ষক, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ ।

মঙ্গল ফেব্রু. ২৫ , ২০২০
বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে এক শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছেন আরেক শিক্ষক। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের গোদারপাড়া এলাকায় জাহিদুর রহমান মহিলা কলেজে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষার্থীরা কিছু সময় বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করলেও স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও পুলিশের আশ্বাসে তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যায়। ঘটনার সময় শ্রেণিকক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links