থানায় ডেকে যুবককে ২৫ ঘন্টা নিযার্তন করেছে বগুড়া সদর থানা পুলিশ।

আভা ডেস্কঃ সোহান বাবু আদর (৩২) নামে এক যুবককে ফোনে থানায় ডেকে এনে ২৫ ঘণ্টা আটকে রেখে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে বগুড়া সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের শিকার যুবকের পরিবারের অভিযোগ, আদরকে তিন পুলিশ সদস্য মিলে হাতকড়া দিয়ে পিলারের সঙ্গে বেঁধে ঘণ্টাব্যাপী লাঠি দিয়ে তার কোমড় থেকে পা পর্যন্ত পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। এ সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও তাকে ইনহেলার দেয়া হয়নি। পরে আদর সুস্থ আছেন মর্মে তার বাবা, বোন ও স্ত্রীর কাছে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থানায় ডেকে আনার পর শুক্রবার রাত ১২টায় ছেড়ে দিলে আদরকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পুলিশের হাতে যুবক নির্যাতনের এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এসআই আবদুল জাব্বার ও এএসআই এরশাদ দৃঢ়তার সঙ্গে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে থানার কনস্টেবল মুন্সি এনামুল শুধু চড়-থাপ্পড় ও মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

সোহান বাবু আদর বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সার্জারি (পুরুষ) ওয়ার্ডের দ্বিতীয় ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তিনি বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া উটের মোড় এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে।

হাসপাতালে আদর জানান, তিনি আগে ইলেকট্রিক সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। শহরের কাটনারপাড়া আলোরমেলা স্কুল লেনের সাথী বানুর (৪৮) সঙ্গে পরিচয় হলে তিনি তাকে ধর্মের ছেলে করেন। একই এলাকার তার বন্ধু বাপ্পী (৩১) ভালোবেসে রোজার আগে বানুকে বিয়ে করেন। বন্ধু তার ধর্ম মাকে বিয়ে করায় তিনি মেনে নিতে পারেননি। আদর তার ব্যবসা ছেড়ে ধর্ম মা সাথী বানু ও বন্ধু বাপ্পী শহরের গোয়ালগাড়ি এলাকায় আলফালা বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি ঋণদান সমিতি শুরু করেন। এখানে আদর ৪০ শতাংশ, সাথী ৩০ শতাংশ ও বাপ্পী ৩০ শতাংশের অংশীদার। আদর ব্যবসার কারণে সাথীকে কয়েকটি চেক দেন।

আদর জানান, তিনি বন্ধুর সঙ্গে ধর্ম মায়ের বিয়ের ঘটনা মন থেকে মেনে নিতে না পেরে বিরোধিতা করেন। এতে তাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ কারণে বাপ্পী ও সাথী তার ওপর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করেন। সদর থানার কনস্টেবল মুন্সি এনামুলের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্নভাবে সাথীর সুসম্পর্ক রয়েছে। এ সুযোগে সাথী ও বাপ্পী তার (আদর) বিরুদ্ধে সদর থানায় ১১ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ ও সাথীর মেয়ে সুচনাকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ দেন।

তিনি জানান, এর পরিপ্রেক্ষিতে কনস্টেবল এনামুল ১৩ জুন বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফোন দিয়ে তাকে থানায় যেতে বলেন। থানায় গেলে তাকে অকথ্য গালাগাল ও চড়-থাপ্পড় দিয়ে হাজতে রাখা হয়। ১৪ জুন শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে তাকে অফিসারদের কক্ষে নেয়া হয়। সেখানে পিলারের সঙ্গে হ্যান্ডকাপ দিয়ে হাত বেঁধে ফেলা হয়। হাতে যাতে কোনো দাগ না পড়ে সে জন্য হ্যান্ডকাপের নিচে তুলা দেয়া হয়।

এরপর এসআই জাব্বার, এএসআই এরশাদ ও কনস্টেবল এনামুল লাঠি দিয়ে তার কোমর থেকে পা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ধরে মারপিট করেন। এ সময় তার শ্বাসকষ্ট হলেও ইনহেলার নিতে দেয়া হয়নি। মারপিটের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর তাকে মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়। পরে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে হাজতে রাখা হয়।

খবর পেয়ে বাবা সাইদুর রহমান, স্ত্রী পাপিয়া ও বোন শম্পা এলে মুক্তির বিনিময়ে এসআই জাব্বার ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে পুলিশকে নগদ ১০ হাজার টাকা ও একজনকে ১০ হাজার টাকার জামিনদার করেন।

এরপর আদর সুস্থ আছে মর্মে বাবা, স্ত্রী ও বোনের কাছে মুচলেকা নিয়ে ১৪ জুন শুক্রবার রাত ১২টার দিকে থানা থেকে আদরকে ছেড়ে দেয়া হয়। স্বজনরা রাত ১টা ৫৫ মিনিটে তাকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সার্জারি বিভাগে ভর্তি করান।আদরের নিতম্ব থেকে পা পর্যন্ত কালো জখম হয়ে গেছে। আদর ও তার পরিবারের সদস্যরা এ অমানুষিক নির্যাতনে জড়িত সদর থানার পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান জানান, তিনি ঘটনাটি মীমাংসা করে দিয়েছেন। তবে কাউকে মারপিটের ঘটনা তার জানা নেই।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, জরুরি কাজে এসপি স্যার রাজশাহী আছেন। তিনি এলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্যে, কিছুদিন আগে তুচ্ছ ঘটনায় সদর থানার এসআই জিলালুর রহমান ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার নির্দেশে বগুড়া অ্যাডভোকেটস বার সমিতির সদস্য সোহেল রানা সজিবকে শহরের জলেশ্বরীতলার বাড়ির সামনে থেকে ধরে থানায় আনেন। তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালের পর শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এ ব্যাপারে সজিব জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন।

অ্যাডভোকেট সোহেল রানা সজিব দাবি করেন, তিনি সিনিয়র আইনজীবী ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপের মুখে মীমাংসা করতে বাধ্য হয়েছেন।

যুগান্তর

Next Post

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার খেলাকে যুদ্ধ হিসেবে দেখেন যারা তারা প্রকৃত ক্রিকেটপ্রেমী নয় বলে মন্তব্য করেন ওয়াসিম আকরাম।

শনি জুন ১৫ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ মানেই উত্তেজনা, আলোচনা-সমালোচনা, দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে তর্ক, বাগবিতন্ডা। আর এই দুই দলের খেলা চলে এলেই বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় সামনে চলে আসে। কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য দলকে ছোট করে ট্রল করে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিপক্ষ দলকে ব্যাঙ্গ করে বিজ্ঞাপন বানায় আবার কেউ কেউ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links